ছোটবেলায় আমাদের পাড়ায় একটিই মসজিদ ছিলো , সে মসজিদের ইমাম সাহেবকে আম্মা অনুরোধ করেন আমি ও আমার বোনকে আরবী শেখাতে । উনার কাছেই আমাদের আরবী পড়া শেখা শুরু করা থেকে কোরআন শরীফ পড়া পর্যন্ত । পরবর্তিতে আরও তিনটে মসজিদ গড়ে উঠে আমাদের পাড়ায় । একসময় সেই ইমাম সাহেবকে মসজিদ কমিটি বিদায় দিয়ে (অথবা উনি নিজেই চলে গিয়ে থাকতে পারেন ) নতুন আরেকজন ইমাম সাহেবকে মসজিদে নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব দেন । পুরনো ইমাম সাহেব চলে যান উনার গ্রামের বাড়িতে , (আমাদের শহরের পাশেই সে গ্রাম ) সেখানেই এক মসজিদে ইমামতি করছেন আজো । আমাকে খুব স্নেহ করতেন উনি , আমাদের শহর থেকে চলে যাবার পরও মাঝেমাঝেই আসতেন আমাদের বাসায় , আমি কেমন আছি , কোথায় আছি খোঁজখবর নিতেন আম্মার কাছে । আব্বা মারা যাবার পর আম্মা উনাকে খবর দিয়ে ডেকে এনে শেষ গোসল ও জানাযার নামাজের ইমামতির দায়িত্ব ও দেন । এরই মাঝে একদিন আম্মার বাসায় দেখা ওনার সাথে , বিদায় নেয়ার সময় আমাকে অনুরোধ করলেন , "বাবা যদি পারো ঈদের সময় আমাকে কিছু সাহায্য করো , ঘরে ঈদের সময় একটা কাপড় ও কিনে দিতে পারিনা , আমি তো কোথাও যেয়ে চাইতেও পারি না , মসজিদ থেকে তো ঈদ বাবদ বাড়তি কিছুই পাইনা , দুজন মানুষের কাপড়টাও তো কেনা লাগে , জীবন বড় কঠিন বাবা , ঈদ আমার ঘরে আসে না ।" আমি কিছুই বলতে পারিনি , হতবাক হয়ে গিয়েছিলুম । আর্থিক সহায়তা সাধ্যমত কোথাও কোথাও করি কিন্তু উনার কথা কখনো মনে পড়েনি , রোজার শুরুর দিকে আম্মার ব্যাংক একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়ে আম্মাকে বললুম টাকাটা সেই ইমাম সাহেবকে পাঠিয়ে দিতে । আম্মা বললেন ঠিক আছে আমিও আরো কিছু সাথে যোগ করে দিচ্ছি ।
পরে আম্মা জানিয়েছিলেন , সেই ইমাম সাহেব টাকাটা পেয়ে খুবই খুশি হয়ে, ভেজাচোখ মুছতে মুছতে বলেছিলেন ,"এবার আমার ঘরে ঈদ হবে"।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২