ছোট্ট একটা জীবন। এই জীবনে আমরা অনেক কিছু হতে চাই। ছোট্ট বেলায় আমি নায়ক জসিম হতে চেয়েছিলাম। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষক। কয়েক ক্লাস পার হওয়ার পর যখন এলাকায় নির্বাচন হলো তখন চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলাম। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে নতুন জামাইর কদর দেখে নতুন জামাই হতে চেয়েছিলাম। হলিউড মুভি দেখে হতে চেয়েছিলাম সুপার ম্যান, স্পাইডার ম্যান।
এই যে কিছু একটা হতে চাই! কিছু একটা হওয়া দর্কার এটা আমাদের জীবন ভর চলতে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে মৃত্যুর আগেও আমাদের একটা আপসোস থেকে যায় ' ইশ! ঐরকম যদি হতে পারতাম '।
অধিকাংশ ছেলেদের ক্ষেত্রেই বিষয়টা মিলে যায়। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কম মিলবে। মেয়েরা একটা সময় শুধু সংসারী হতে চায়। চাকরি বাকরি করা বা প্রধানমন্ত্রী হতে খুব কম মেয়েই চায়। তবে আমি দেখেছি বর্তমানে অনেক মেয়ে 'তসলিমা' হতে চায়। কেন চায় কে জানে!
যাইহোক, আমাদের জীবন জুড়ে আমারা আর কিছু হতে না পারি, আমাদের ভদ্র মানুষ হওয়া জরুরি। ভদ্রতা হচ্ছে মানুষের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কিংবা একটা ট্যাগ। ভালো মানুষী ট্যাগ। যার গায়ে এই ট্যাগ পড়ে সে সব খানেই সমাদৃত হয়ে থাকেন।
তো, আমরা কিভাবে ভদ্র লোক হতে পারবো সেটা জানা জরুরি। কারণ যার ভদ্রতাবোধ আছে তাকে সবাই পছন্দ করে। হোক সেটা স্কুল টিচার কিংবা টিচারের সুন্দরী মেয়েটা। যার ভিতর ভদ্রতা থাকবে সে সব মহলে প্রসংশনীয় হয়ে উঠবে।
ভদ্র মানুষের কিছু কোয়ালিটি থাকা আবশ্যক। জেনে নিন এবং নিজেকে কোয়ালিটি সম্পূর্ণ করে তুলুন।
প্রথমতঃ -
দুর্গন্ধ ছড়ানো থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা এমন অনেক মানুষকে চিনি যে দেখতে শুনতে খুব ভালো। চেহারা কাপড় চোপড়েও খুব স্মার্ট। কিন্তু সমস্যা একটাই জামা কাপড় ধোঁয় না, কিংবা গোসল করে না। তারপাশে দাঁড়ালে একটা অস্বস্তি কাজ করে। কেমন যেন একটা দুর্গন্ধ ছড়ায়। ভদ্রলোক হওয়ার প্রথম শর্ত নিজেকে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন এবং ঘামের এবং মুখের দুর্গন্ধ ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনাকে যেন মনে মনে কেউ খাটাশ না বলে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
২য় -
মানুষ এমন এক প্রাণী যার কখন কি হয় বলা মুশকিল। কোথাও গেলাম আর হুট করে হাঁচি এলো, কাশি এলো। এমন সময় আমাদের মুখে হাত দিতে হয়। আর এর ফলে হাতে জীবাণু ছড়ায়। সেই হাত মুছার কোন জায়গা না থাকলে জামাতে মুছতে হয়। এজন্য যেটা করবে হবে সব সময় নিজের সাথে রুমাল কিংবা টিস্যু রাখতে হবে।
৩য় -
বেশভূষা। আমরা মানুষকে বিচার করি তার বেশভূষা দ্বারা। যদিও এটা ঠিক না, তবুও এটাই হিউম্যান সাইকোলজি।এ নিয়ে তো শেখ শাদির একটা গল্পও আছে। যাইহোক, আমরা কি ধরনের পোষাক পড়ছি তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কোন পোষাকে আমাদের ভালো দেখায়, আর কোনটাতে খারাপ এই সেন্স থাকা জরুরি। কারণ প্রথম দেখাতেই মানুষ আপনার সম্পর্কে একটা আইডিয়া করে নেয় আর সেই অনুযায়ী আপনার সাথে ব্যবহার করবে।
৪র্থ -
ভদ্র মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় যে জিনিস যেটা তা হলো নিজের 'লিমিটেশন জানা'। আমরা সবাই সামাজিক জীব। আমাদের কিছু পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত বিষয় থাকে। আর আমরা চাই সেগুলোকে কেউ না জানুক, না ধরুক, সে বিষয়ে নাক না গলাক। ভদ্র মানুষ হিসেবে আপনাকে এটা মাথায় রাখতে। অন্যের পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো ব্যক্তিগত জিনিস বিনা অনুমতিতে হাত লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫ম -
কারো থেকে কোনকিছু ধার নিলে তা সঠিক সময়ে ফেরৎ দিতে হবে। ভদ্রতা গুণ সম্পূর্ণ মানুষ কখনো অন্যের জিনিস নষ্ট করে না। ধরুন, কাউকে একটা বই পড়তে দিলেন বা কারো থেকে বই পড়তে নিলেন ; তা যথাসময়ে ফেরৎ দেয়া এবং বইয়ের পৃষ্ঠায় কোন দাগ না ফেলা বা কাটাছেঁড়া না করা। একই ভাবে টাকাপয়সা, গাড়ি, মোবাইল অন্য যেকোন জিনিস।
- একই সাথে এইটা মাথায় রাখা যা চাওয়া হচ্ছে তা চাওয়া ঠিক কিনা? কিংবা একবার নিষেধ করে দিলে দ্বিতীয় বার না চাওয়া।
৬ষ্ঠ -
সবার সাথে হাসিখুশি থাকা। এক্ষেত্রে কারো সাথে কথা বলার সময় সুন্দরভাবে বলা, মুখে হাসি রাখা। উপকার পেয়ে থ্যাংক্স বলা। অন্যায় করলে সরি বলা। এসব জিনিস মাথায় রাখতে হবে। ভদ্রলোক হওয়ার জন্য বিনয়ী হওয়া জরুরি।
৭ম -
দাওয়াত টাওয়াত পাইলে কবুল করা। কিংবা সমস্যা থাকলে তা শুরুতেই বুঝিয়ে বলা। এমন যেন না হয় দুপুর ২ টার সময় কারো থেকে দাওয়াত নিয়ে ১ টার সময় নিষেধ করে দেয়া, বাহনা করা যে সমস্যা হয়ে গেছে। এসব ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না। এসব পরিহার করতে হবে। কথা দিয়ে কথা রাখতে হবে। নাহলে আপনার থেকে ববিশ্বাস উঠে যাবে।
সর্বশেষ বলতে চাই, জীবনে আমরা যা চাই তা হয়তো সবসময় পাওয়া হয়ে উঠে না। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস আছে যাতে আমাদের অভ্যস্ত হওয়া উচিৎ। ভদ্রতাবোধে অভ্যস্ত হতে হবে। নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কোন স্থান ত্যাগ করার পরে যেন কেউ আপনার সম্পর্কে নেগেটিভ মন্তব্য না করে তা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৪১