প্রথমেই টাইটেল নিয়ে ক্লিয়ার করে নিই। আমার হাত ভেঙে যায়নি বা তেমন বড় ধরনের কিছু হয়নি। হাত থাকতে বলতে হাত ভালো থাকার কথা বুঝিয়েছি মাত্র।
কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না। সেইম কথাটা আসলে সব কিছুর ক্ষেত্রেই খাটে। দুইটা হাতের একটা কোনোভাবে অচল হলে যে জীবন কি পরিমান দুর্বিসহ হয়ে ওঠে, তা টের পাওয়ার জন্য ১০ দিন সময় যথেষ্টই।
গত ২৬ তারিখ কলেজে যাওয়ার সময় ভাবলাম শেষ পরীক্ষা, বাইরেও আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা। সাইকেলটা নিয়েই যাই। আর সেই ভাবনাটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো। কলেজে যাবার পথে ১৩ নম্বরের দিকে প্রথম দুই লেনের গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে একটা মাইক্রো পাশ থেকে ধাক্কা দিলো আমাকে। আর আমি চলন্ত সাইকেল থেকে সোজা মাটিতে আছড়ে পড়লাম। তাৎক্ষণিকভাবে কেবল হাঁটুর কাছে প্যান্ট ছিঁড়ে যাওয়া, হাতের তালুর উল্টোপিঠ আর কনুই-এর কাছে থেকে রক্ত ঝড়া ছাড়া আর তেমন একটা ব্যথা অনুভূত হয়নি। সময় ছিল সকাল সোয়া সাতটা। কোনো ফার্মেসিও খোলেনি রোজার দিন। আবার যেখানে অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে সেখান থেকে কলেজ আর বাসার দূরত্ব প্রায় সমানই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কলেজেই যাবো।
কিন্তু ১৩ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর পর্যন্ত সাইকেল ঠেলে ঠেলে আসতে একেবারে হয়রান হয়ে গেলাম। শেষে যা আছে কপালে ঠিক করে আবার সাইকেলে চড়লাম। রক্তমাখা হাত-পা নিয়েই কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আশেপাশে মানুষ যারা খেয়াল করেছে তাদের অদ্ভূত দৃষ্টি গায়ে না লাগিয়ে তাড়াতাড়ি কলেজ পৌঁছানোর চেষ্টা করলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে শাহীন কলেজের এতোদিনের চেনা রাস্তাটা খুঁজে পেতে দু-বার ভুল করলাম।
সবশেষে কলেজে পৌঁছানো গেলো। ঢুকে সেখানে স্যারদের দেখাতেই তড়িঘড়ি করে মেডিকেল রুমে নিয়ে গেলো। ফার্স্ট এইড আর ইঞ্জেকশন দেয়ার পর বাসায় ফোন করা হলো। আম্মু আর ভাইয়া গিয়ে নিয়ে আসলো। সেইসঙ্গে চললো বাসার কারোর নিষেধ না শুনে সাইকেল কেনার জন্য দ্বিতীয় ধাপ বকা।
তখনও ভালোই ছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে ড্রেসিং চেঞ্জ করার সময় এলে যেন জানটা উড়ে যেত। আর টানা এক সপ্তাহ ঘরে বসে থাকার পর যখন কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারতাম না, তখন খেয়াল হলো, দু'টো ভালো হাত থাকাও যে কত সৌভাগ্যের ব্যাপার।
অ্যাক্সিডেন্টের ১০ দিন পর তোলা ছবি।
এখনও হাতের অবস্থা পুরোপুরি ভালো না হলেও নাড়াচড়া আর টাইপ করতে পারছি। কিন্তু ভারি কিছু ওঠানো বা হাতে ভর দিয়ে কিছু করার সামর্থ্য ফিরে পাইনি। ক্ষতগুলো শুকায়নি বলে সারাক্ষণ অ্যালার্ট থাকতে হচ্ছে।
রেকর্ড-ব্রেকিং টানা ১০ দিনেরও বেশি ঘরে বসে থেকে এখন মনে হচ্ছে দাঁতের মর্যাদা বোঝার জন্য দাঁত হারাতে যে হয়নি এ-ই বেশি। এইবার হাত পুরোপুরি ঠিক হলে যদি আলসেমির মাত্রা একটু কমানো যায় আর কি!
প্রথম প্রকাশঃ Hands Are Amazing
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:০২