somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর এক ব্যতিক্রম বাংলাদেশের প্রদর্শনী চলছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২-তে

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সরকারের ভিশন ২০২১ এর কথা আমরা সবাই জানি। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের অঙ্গীকারাবদ্ধ বর্তমান সরকার। সে লক্ষ্যে সরকার কাজও করছে। কাজের গতি প্রত্যাশার চেয়ে ধীর ও এর ফল খুব একটা দৃশ্যমান নয় বলে সাধারণত আমরা এই ভিশনকে ভিশনই থেকে যাবে বলে মনে করে থাকি। কিন্তু আড়ালে একটু একটু করে হলেও পরিবর্তন আসছে দেশের আইটি খাতে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে কম-বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে না হলেও পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সেবা চালু হয়েছে যা অচিরেই বদলে দেবে এ দেশের জীবনযাত্রার ধরণ। ভবিষ্যতের ডিজিটাল বাংলাদেশের এক ছোট্ট রূপেরই প্রদর্শনী চলছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২-তে।

মেলা গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্য মেলা সাধারণত কেন্দ্রের মূল ভবনে অনুষ্ঠিত হলেও এবারের মেলা সাজানো হয়েছে তিনটি ভিন্ন প্রাঙ্গণে। মেলার মূল প্রাঙ্গণে রয়েছে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টল। এখানে রয়েছে স্যামসাং, কম্পিউটার সোর্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এক্সপেরিয়েন্স বুথ। আর মেলার একটি বিশাল স্থান জুড়ে রয়েছে টেলিটক ৩জির স্টল।

টেলিটক ৩জি নিয়ে দেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহের কোনো সীমা নেই। প্রথমবারের মতো এ দেশে ৩জি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেলেও পরবর্তীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ২জি ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার ফলে ব্যবহারকারীরা ভরসা করতে পারছেন না টেলিটক ৩জি এর উপর। আমি নিজেও অনেক আগ্রহী থাকলেও এখন কেন যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। ব্যবহারকারীদের ৩জি ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে প্রচারণারও কমতি নেই টেলিটকের। আর তাই এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলার উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে টেলিটক ৩জি’র স্টল।

টেলিটক ৩জি’র স্টলে আপনি টেলিটক ৩জি ব্যবহার করে দেখতে পারবেন। স্টল থেকে সিম কেনার সুবিধা না থাকলেও আপনি সেখানে পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন গতানুগতিক ২জি প্রযুক্তির ইন্টারনেটের সঙ্গে এর পার্থক্য কী রকম। আমি অবশ্য সময়ের কমতির জন্য ৩জি সিম চেখে দেখা হয়নি।



মেলার মূল প্রাঙ্গণে কিছু রোবটেরও দেখা পাওয়া গেল। না, আইরোবোট কিংবা ট্রান্সফরমার মুভির মতো পলিশড কোনো রোবট নয়; বরং কেবল কাজের জন্য প্রস্তুত কিছু রোবট। এদের মধ্যে একটি রয়েছে উড়ন্ত রোবট যা রিমোট কন্ট্রোলারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও রুয়েটের একদল শিক্ষার্থীর তৈরি করা আরেকটি রোবট রয়েছে যা সাদা ও কালো রেখার মধ্যে সাদা রেখা চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা বাক্স তুলে নিয়ে আসতে সক্ষম।


অ্যাডভান্সড এসব প্রযুক্তি দেখার পর গেলাম মেলার অস্থায়ী দু’টি তাবুতে। এর এক পাশের তাবুতে রয়েছে কেবলই সরকারি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্টল ও অন্যপাশে রয়েছে বেসরকারি বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের স্টল। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্টলগুলোয় আছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কীভাবে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে তার প্রদর্শনী। ঢোকার মুখেই দেখা গেল নির্বাচন কমিশনের আধুনিক পদ্ধতির ভোটিং মেশিন। এই মেশিনের মাধ্যমে এখনই পরীক্ষা করে দেখলাম বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চলমান ভোটিং পদ্ধতির পরিবর্তে কী ধরণের ভোটিং পদ্ধতি চালু করতে চাচ্ছে।



রাজস্ব বোর্ডের স্টলে দেখলাম কীভাবে অনলাইনে্ই আয়কর বা ট্যাক্স দেয়া যায়। সেতু বিভাগ, সড়ক বিভাগ, শিপিং বোর্ড, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ওয়াটার রিসোর্স ইত্যাদি বিভিন্ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের স্টলে দেখতে পাবেন তথ্যচিত্র ও বিভিন্ন তথ্যমূলক লিফলেট ও ব্রশিউর।




তবে প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এই স্টলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের স্টল। কেননা, এখানে আপনি নেড়েচেড়ে দেখতে পারবেন বিভিন্ন আকারের, দামের ও কনফিগারেশনের দোয়েল ল্যাপটপ। সবচেয়ে কমদামী ও ছোট আকৃতির ল্যাপটপটি চলছে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে। আর সবচেয়ে দামী দোয়েল চলছে উইন্ডোজ ৭-এ। এর প্রসেসর কোর আই ৩ এবং দাম ৪৮ হাজার টাকা। মজার বিষয় হচ্ছে, দূর থেকে দেখলে বড় আকারের এই ল্যাপটপগুলোকে দোয়েল বলে মনেই হয় না। বেশ ভালো বিল্ড কোয়ালিটি ও আকর্ষণীয় ডিজাইন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অনেকেরই মন কেড়েছে। আমারও বেশ ভালো লেগেছে। কিন্তু দেশীয় ব্র্যান্ড ও কমদামে সবার কাছে ল্যাপটপ পৌঁছানোর কথার সঙ্গে এর দামের খুব একটা মিল পাইনি। দাম অত্যধিক বেশি হলেও সরকারি মন্ত্রণালয়ের স্টলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে দোয়েলের সামনেই।

সরকার কীভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজ ত্বরান্বিত করছে আর জনগণকে ট্যাক্স প্রদান বা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া ইন্টারনেট-নির্ভর করে তুলছে তা দেখা শেষে গেলাম দ্বিতীয় অস্থায়ী তাবুতে। এখানে দেখা গেল দেশের তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীলতায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ওয়েবসাইটের দেখা যারা হয়তো আমাদের আগামীদিনের জীবনযাত্রায় আনতে পারে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন।

বেসরকারি উদ্যোগে এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলো থেকে তাদের সেবা সম্পর্ক বিস্তারিত তথ্য জানা যাচ্ছিল। আজকের ডিল, বিকাশ, সিমেনটেকসহ বিভিন্ন নতুন প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে মেলায়। এসব স্টল থেকে আপনি সরাসরি তারা কীভাবে কাজ করে তা জানতে পারবেন ও যে কোনো প্রকার সাহায্যও নিতে পারবেন। অর্থাৎ, এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বা ওয়েবসাইটের খোঁজ পাবেন যাদের ব্যাপারে আপনি হয়তো আগে জানতেন না। এছাড়াও বিকাশের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে ও আপনি কীভাবে তাদের সেবা গ্রহণ করতে পারেন তা জানার জন্যও এসব স্টলে ঢুঁ মারতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবারের এই মেলা। কেননা, এবারের মেলার দ্বিতীয় দিন আয়োজিত হতে যাচ্ছে ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স যেখানে উপস্থিত থাকছেন বিশ্বসেরা সব ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসের প্রতিনিধিরা। তারা ফ্রিল্যান্সিং-এ সফলতা নিয়েও বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করবেন। তাই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আবশ্যক একটি কনফারেন্স এটি। তাই সম্ভব হলে দ্বিতীয় দিন দুপুর ১২টার মধ্যে অবশ্যই চলে আসবেন মেলা প্রাঙ্গণে।

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ একটি ব্যতিক্রমী মেলা। এখানে আপনি আপনার আগামী দিনের জীবনযাত্রার এক ঝলক আগেভাগেই দেখতে পারবেন। সরাসরি দেখতে পারবেন সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোয় কীভাবে আইটির ব্যবহার চলছে। প্রথম দিন ঘুরে অন্তত আমি পুরো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কার্যক্রমগুলোর এক ঝলক দেখতে পারলাম ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২-এ।

মেলার ওয়েবসাইটঃ http://www.digitalworld.org.bd/
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×