পুরোনো দিনের কথা, যা কেবলই পেছন থেকে টেনে ধরে। আবার তারাই যেন চালিকা শক্তি সম্মুখে এগোবার......হয়তো সেকারনেই আনন্দ থেমে আছে এক জায়গায়।
লেখাপড়া কিংবা চাকুরী চলাকালীন সময়ে অনেক বাধা পার হতে গিয়ে আনন্দ শিখেছে অনেক কিছু। হারিয়েছি কি তা সে জানে না, জানতে চায়ওনা। কিন্তু পেয়েছে অনেক কিছু। এটাই ওর ভালো কিংবা মন্দ দিক। হিসাবের খাতাটাতে কেবল পাওয়ার হিসাব, না পাওয়ার হিসাবটা করেনা বলেই, উচ্চাকাক্ষা আনন্দের মাঝে কাজ করেনা কোনদিন।যা পেয়েছে তাতেই খুশি, সন্তুষ্ট। অনেক বেশি পাবার আশা করতে সে চায়না।
মাঝে মাঝে আনন্দের মনে হয়, কোনদিন হয়তো জানতও না এতো কিছু ছিল আনন্দের চারপাশটায়, যদিনা নিজের শহর-বাড়ি-পরিবার থেকে দুরে আসার সুযোগ হতো। আনন্দ বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বহুদিন আগে। আন্ডারগ্রেড করতে হয়েছিল, নিজের শহর থেকে ভিন্ন একটা শহরে। সেই থেকে হোষ্টেল জীবনের শুরু আর আনন্দের অচেনা, একলা পথ চলার শুরু।
যেদিন প্রথম হোষ্টেলে যাবার কথা ছিল, তার আগের রাতে আনন্দের মা আনন্দকে অনেক কথা বলেছিলেন।এমন কথা কোনদিন তিনি বলেননি এর আগে।তাই হয়তো আজো কানে বাজে কথাগুলো।
**************************************************
আজ থেকে প্রায় পনের বছরেরও বেশি সময় আগের কথা।তখন বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছিল, কেবল বড় ভাই কম্পিউটারে কাজ করছিল।কোন একটা কারনে মায়ের ঘরে গিয়েছিলাম। দেখি মা, বিছানার পাশের চেয়ারটায় চুপচাপ বসা। হঠাৎ করেই বললেন অনেক কথা, যেন জমেছিল কথাগুলো ।
এখনো মনে পরে। মায়ের বক্তব্যের মূল কথা ছিল- "আমার আগামীর দিন গুলো নিয়ে, একবারের জন্যও তিনি অতীতকে টানেননি, আমার সেদিনকার পরিনতির জন্য"।
আমার পরিবারে আমিই ছিলাম একমাত্র, যার লেখাপড়ার ফলাফল ভালো না হওয়ার কারনে সবাইকে অনেক বেশি সমস্যায় পরতে হয়েছে। তবু আমার মা সেটা বলেননি একটি বারের জন্যও। বললেন অনেক কথা খুব গোছানো ভাবে। যার মূল ছিল- হোষ্টেলের জন্য, আমার এই বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়াই শেষ, আমার কোনদিনই ফেরা হবেনা এই পরিবারে । আর এখন থেকে আমার নিজের একটা নিজস্ব জগৎ হবে, যেখানে যেকোন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমার নিজেকেই, পরিবারের অনুমতি নেবারও হয়তো সুযোগ থাকবেনা,। আর পরিবার থেকে দুরে থাকার কারনে হয়তো অনেক জবাবদিহিতা থাকবেনা, অনেক স্বাধীনতা থাকবে তবে যেকোন ঘটনার ফলাফলেরন দায়িত্বভারও আমারই, আমার নিজের ভাগ্য সেদিন থেকে আমার নিজে হাতে গড়া, তাই এর সব দায় হবে আমার।
সেকারনেই সেদিন থেকে আমি স্বাধীন, কিন্তু দায়িত্বের সাথে সেই স্বাধীনতা উপভোগ করার যে আদেশ আমার মা দিয়ে ছিলেন তা আমার পিছু ছাড়ে না। দেশ-বিদেশ হাজার শহর, বন্দর ঘুরে বেড়িয়ে আজো তাই আমি কেবলই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালনের চেষ্টায় তৎপর। ভয় হয় কেবল নিজের মনটাকে নিয়ে, সব চিন্তার শেষেও যে সে কেবলই বাঁধ ভাঙ্গতে চায়, কিন্তু পারেনা দায়িত্ব এড়াতে ।
**************************************************
এ্যলেন চলে গেল। বহু দুর। হয়তো আর কোনদিন দেখা হবেনা। একটা ছোট্ট চিঠি আর অল্প সময়ের কিছু কথা, কিছু সময়ের জন্য পথচলা। ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুকাপ চা সাথে কিছু স্নেকস্ শেষ হতে যে সময়টুকু লাগে তাই হয়তো শেষবারের মতো দেখা হবার স্মৃতি হয়ে থাকবে।
ওল্ডসিটিতে জেটির কাছে, ওর সাথে দেখা হয়েছিল। দিনের শেষে শহরের মানুষগুলোর মাঝে ছিল ঘরে ফেরার ব্যস্ততা। আর আমার? দায়িত্বের সাথে স্বাধীনতাকে অপঃব্যবহার না করে, মাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সদা ব্যস্ত এক সন্তানের তৎপরতা ছিল কেবল ঘরে ফিরবার । যেখানে নিজের ইচ্ছা, আবেগ, ভালোলাগার চাইতেও অন্য অনেক কিছুর গুরুত্ব বেশি।
ভালো থেকো বন্ধু। ভালো থেকো