এক তুষার মানব
তুষারের দেশে, আমার এক একটা দিন - দুই
: আমার সাথে তোমার প্রথম পরিচয়ের দিনটা, আজো মনে পরে।
: না মনে রাখার কি সম্ভব? আমাকে যদি কেও মরার পরেও জানতে চায়- তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনাটা "দু্ঃস্বপ্ন" বলে মনে হয়? উত্তর একটাই..........। আমি কিন্তু বলিনি তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দু্ঃস্বপ্ন । তা আমি বলার সাহসও রাখিনা। তবে তোমার সাথে দেখা হওয়ার সেই সময়টা দু্ঃস্বপ্নের মতো। খুব কষ্ট হয়েছিল। মনে হয়েছিল আজ রাতে, এই ঠান্ডায় কোথায় যাবো? আর কোথাও জায়গা পেলামনা, তাই তোমার ঘাড়ে চাপলাম। হ্যা, তোমার সেই বিখ্যাত উক্তিটার ব্যবহারই করলাম।
মনে পরে গেল সেই দিনটা।
: আমি তো কোন ছেলের সাথে আমার আমার ফ্লাট শেয়ার করবোনা। তুমি দেখনি আমার এ্যাডে তো লেখাই ছিল, তবে কেন তুমি আমার সময় নষ্ট করলে।
: আসলে আমি বিষয়টা লক্ষ্য করিনি। তবে সত্যই আমার থাকার একটা জায়গা খুব দরকার। দেখতেই পাচ্ছো, আমার সব মালপত্র আমার সাথে। আমি যার কাছে উঠেছিলাম, সে আগামীকাল খুব সকালে এখান থেকে চলে যাবে। তাই আমি তার জায়গা খালি করে দিয়েছি।
: হোটেলে থাকো,আমি তোমার কাছে ঘর ভাড়া দেবনা। দেখতেই পাচ্ছো, আমি মুসলিম, আর বিশেষ করে আমার ব্যক্তিগত আদর্শের কারনে - আমার পক্ষে কোন ছেলের সাথে ফ্লাট শেয়ার করা সম্ভবনা।
: আমাকে ঘর ভাড়া না দাও, অন্তত আজ রাতটা থাকতে দাও। এই রাতটার জন্য অন্তত আমাকে থাকতে দাও। আমার যদি টাকা থাকতো আমি, তোমাকে জ্বালাতন করতামনা। তোমাকে আমি আগেই জানিয়েছি, আমার চাকরি নাই, ফাইমাল পরীক্ষা আগামী সপ্তাহে। তাই আমি অগ্রীম দিতে পারবোনা । আমার সত্যিই অনেক উপকার হতো, যদি তুমি আমায় বিশ্বাস করতে।
: আমার বিষয়টা বিশ্বাসের না। আমি সারাক্ষন তোমার সামনে এই রকম মাথায় কাপড় দিয়ে থাকতে পারবোনা। তারপর আবার , আমি যে দেশ থেকে এসেছি, আমার সমাজ একলা একটা মেয়েকেই থাকতে দেয়না, আর সেখানে ছেলের সাথে এই ছোট্ট ফ্লাটে একসাথে থাকা? আমার সমাজ সম্পর্কে তুমি জাননা। আমি আসলেই নিরুপায়।
: একটু অনুগ্রহ করো। কাল সকালে আমার একটা মিডটার্ম।
: আমি তোমার সব কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি কিভাবে তোমাকে থাকতে দেই?
: আমাকে আজ রাতটার জন্য ....।
হঠাৎ মনে পরলো ,আমার সেই দিনটার কথা, যেদিন আমি সারারাত এয়ারপোর্টের চেয়ারে বসে কাটিয়ে দেবার কথা ভাবছিলাম। সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য জানিনা, তা করতে হয়নি। তবে সেদিন অন্তত সেপ্টেম্বর মাস ছিল বলে আমি সাহস করেছিলাম। কিন্তু আজ? বাহিরে প্রচন্ড তুষার পরছে বলেই এই ছেলেকে ঘরে ঢুকিয়ে কথা বলতে হলো। না হলে.....
: তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা।
আমার ধ্যান ভাংলো ছেলেটার কথায়।
: আমি আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স, আইডি সব তোমার কাছে জমা রেখে দেব। আর কাল সকালেই আমি তোমার জায়গা থেকে চলে যাবো। তোমার সমাজের কেও জানবেনা।
মনের অজান্তেই ওর সরল কথাগুলো মনে দাগ কেটে গেল। আমি । এই আমি রাজি হলাম আমার ছোট্ট এই দুই রুমের বাসার একরুমে , একটা ছেলেকে থাকতে দিতে। কিছু না বলে, কেবল বললাম- উপরে এসো।
আমার বাসাটা, আসলে খুব ছোট। দুটো রুম, মাঝে রান্নার জায়গা। পাশেই টয়লেট। সুবিধা কেবল, আমার ঢোকার দরজা দিয়ে উপরে উঠে আসা, আমার দোচালা টিনের খুপরি ঘরের মতো ঘর সবকিছুই একান্ত আমার। কারোর সাথে আমার কোন কিছু শেয়ার করতে হয়না। আগের একরুমের ভাড়া দিয়ে আমি দুইরুম পেয়েছি। আসলে, রুম দুটো আলাদা হলেও মাঝে কমনস্পেসটা এত ছোট যে কেবল দাড়িয়ে রান্না করা যায়। আর তারপর আবার চুলার সাথেই বাথরুমের দরজা। যেকোন মানুষ দেখলে, নাক শিটকোবে। আমার একার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কি করা। রেজাল্ট খারাপ করার কারনে স্কলারশীপটা বন্ধ হয়ে যাবে, আগামী মাস থেকে। আমার একার পক্ষে এতো ভাড়া দেয়া সম্ভবনা। তাই বড় রুমটা সাবলেট দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে, নিয়ে ছোট ঘরটায় সোফায় ঘুমবার আর ছোট টেবিলে পড়বার অভ্যাস করছি। আর তাই তো এই নরাধমের সাথে দেখা। আমার এ্যাডের নামই ছিল- মেয়েরুমমেট চাই। বেকুবটা রেসপন্স করে। আমিও কেন জানি , ওর দুঃসহ সময়ের কথা ভেবে, অগ্রীম দিতে হবেনা, কেবল পুলিশ কিয়ারেন্সের স্ক্যান কপি চেয়েছিলাম। আর আজ তাই এই বিভ্রান্তি।
ছেলেটা রুমে ঢুকেই ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো। আমি আর কি করা, মাথায় ওড়না পেচিয়ে, রাতের খাবার তৈরী করলাম আর মনে মনে নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য নিজেকে গালাগাল দিলাম। খাওয়া শেষে, তারাতারি নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বসলাম ল্যাপটপে। অনেক পরে, হঠাৎ মনে হলো, ছেলেটা তো কিছু খায়নি? কেন জানি নিজে থেকেই ওকে জিগ্ঘাসা করলাম রাতের খাবার খাবে কিনা? মিথ্যা বললো ঠিকই , তবে আমার রান্না খেতে চাইলে , খেতে পারে বলার পর না করলো না। আমি কেবল আমার ভাত, সবজির সাথে ডিম ভেজে দিলাম আর বললাম- আজ রাতের জন্য সে আমার গেস্ট। সুতরাং বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিতে। অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে, খাবার প্লেটটা হাতে নিল। আমি আমার অপেক্ষা করলামনা, চলে এলাম নিজের ঘরে।
বহুদিন পর জেনেছিলাম, সেই খাবার নাকি ছিল ওর সারাদিন না খাওয়ার পর, এক ফোটা অমৃত।
আমি সারা রাত ঘুমাতে পারলামনা। আমার দরজা ভেতর থেকে লাগানো যায়না, তাই কেন যেন অস্বস্থি হচ্ছিল। আশ্চর্য হলেও সত্য , সেদিন কেন যেন ছেলেটা থাকার কারনে ভয় হয়নি একবারও। কেবল অজানা অস্বস্থি আমাকে চোখের পাতা এক হতে দেয়নি।ভোর রাতে কখন চোখ লেগে এসেছে, নিজেও টের পাইনি। হঠাৎ একটা শব্দে , ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম। রুম থেকে বের হয়ে দেখি, ছেলেটা ওর বড় বড় সুটকেসগুলো সিড়ি দিয়ে নামাবার চেষ্টা করছে। তাই এই শব্দ। তাকিয়ে দেখলাম ঘড়িতে ৬:৪৫। মনে পরলো, ছেলেটার আজ পরীক্ষা।
: তোমার না আজ পরীক্ষা?
: হ্যা। ৮টায় মিডটার্ম। আমি দুঃখিত, আমার শব্দে তোমার ঘুম ভেংগে দেবার জন্য।
: তুমি চাইলে, তোমার মালামাল আমার এখানে রেখে যেতে পারো। এখন এই সকালে তুমি এগুলো কোথায় রাখবে? আর আমি আজ সারা দিন, বাসাতেই থাকবো, তুমি চাইলে যেকোন সময় এসে নিয়ে যেয়ো।
: এতে আমার অনেক উপকার হবে কিন্তু তোমাকে আবার সমস্যায় ফেলা হবে। আবার তোমার বন্ধুরা কেও দেখে ফেললে, তুমি সমস্যায় পরে যাবে।
: আমার কোন সমস্যা হবেনা। তুমি আগে তোমার পরীক্ষা দাও, জায়গা ঠিক করো তারপর মালামাল নিয়ে যেয়ো।
আমার কথায় ছেলেটা মাঝসিড়ি থেকে উঠে এলো, নিয়ে আসলো ওর বাকি জিনিসগুলোও। এমন সময় আমার মনে পরলো , ছেলেটা হয়তো না খেয়েই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তাই বললাম কর্নফ্লেক্স অথবা পরিচ কোনটা দেবো? উত্তরে বললো, তার আইডি কার্ডটা ছাড়া পরীক্ষার হলে যাওয়াটা নিরাপদ না। বুঝলাম, আমি যে খাবার দেব তা তাতেই তার চলবে। পরিচের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে, ওর কাগজ-আইডি আনে দিলাম। দেখলাম আমার সামান্য খাওয়া, একটু সহযোগিতা আর পরীক্ষার জন্য শুভ কামনার জন্য তার মায়াভরা চোখ দুটো যেন কৃতজ্ঞতায় টলটল করে উঠলো। সাদা চামড়ার, ছফুট দৈর্ঘ্যের কোন যুবকের চোখের কোনে জমে থাকা কষ্ট , কেন যেন মনে হলো বেমানান। আর তার অদ্ভূদ সারল্য যেন দেবদূতেদেরও আকৃষ্ট করবে।
সারাটাদিন যেন কি করে কেটে গেল, টের পেলামনা। আজ আমার সাপ্তাহিক ছুটি। এই দিন আমার রান্নাদিবস বললেও ভুল হবেনা। সচরাচর আমি বিভিন্ন বাটিতে সপ্তাহের পাঁচদিনের দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তা, এগারটার সময় খাবার জন্য নাস্তা , এমনকি সকালে খাবার জন্য রুটিও তৈরী করে রাখি। তাই সকালে বাজারে যাওয়া আর সারাদিন রান্না করেই কেটে যায় আমার সময়গুলো। কিন্তু আজ কেন জানি, হাত চলছিলনা। আগেই ঠিক করে রাখা ছিল, আজ আমি বাজারে যাবোনা। নতুন রুমমেটের জন্য ফ্রীজ খালি করতে হবে, তাই আপাদত ফ্রীজে থাকা মুরগী-সবজী রান্না করতে হবে। দুপুরের পর , রান্না শুরু করায় দেরী হয়ে গেল অনেক। সন্ধ্যার আগেই আমার দরজায় শব্দ হলো।
ক্লান্তি মাখা চেহারায়, আমাকে বিব্রত করার লজ্জাই যেন কেবল প্রকাশ পেল ছেলেটার দৃষ্টিতে। আমি কোন কথা না বলে, সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলাম। চুলা বন্ধ করতে করতে হঠাৎ মনে পরলো , সারা বাড়ী মুরগী রান্নার গন্ধে ভরে গেছে। তারাতারি গন্ধ দুর করবার জন্য জানালা খুলতে খুলতে মনে পরলো , এটা ওর ঘর।
: আমি দুঃখিত, তোমার ঘরে ঢুকে পরেছি। আসলে আমি ভুলেই গিয়ে ছিলাম জানালা খুলে দিতে, আমার রান্নার গন্ধে ঘর ভরে গেছে। তোমার কি খারাপ লাগছে? আমি সত্যিই দুঃখিত।
: এটা আমার ঘর না। আমার জন্য তোমাকে দুঃখিত হতে হবেনা।আমি অনেক দুঃখিত, কাল তোমাকে বিরক্ত করবার জন্য। তোমাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা আমার জানা নেই, তুমি আমার অনেক উপকার করেছো। আমি কোন কাজ জোগার করতে পারলে তোমাকে এমাসের ভাড়া পরিশোধ করে দেব। আমার জন্য তুমি, রুমমেট পাওনি , আর পাবে কিনা জানিনা। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।
চোখ নামিয়ে, মৃদ্যু স্বরে, একটানা কথাগুলো বলে গেল। বলা শেষ হতেই, ব্যাগ ওঠাবার জন্য হাত বাড়ালো।
: তুমি কি জায়গা পেয়েছো কোথাও?
: না, আমার এক বন্ধুকে অনুরোধ করেছি, কেবল আমার জিনিসগুলো ওর ঘরে রাখতে দেবার জন্য। আসলে এই মালপত্রগুলো না থাকলে আমি যেকোন জায়গায় রাত কাটাতে পারবো।
: কিন্তু তোমার পড়ালেখা?
: এখন আসলে আমি আর লেখাপড়া নিয়ে বেশি ভাবছিনা।
: কিছু খেয়েছো?
আমার প্রশ্নে, বুঝি ছেলেটা আশ্চর্য হওয়াও ভুলে গেল। কোন উত্তর না দিয়ে কেবল তাকিয়ে থাকলো। বুঝলাম, ওর মাথায় এখন কেবল সস্তা ভাড়ার, বিনা অগ্রীমের একটা ঘর ছাড়া আর কিছু নাই। হয়তো পকেটের অল্প কিছু টাকা খরচের চিন্তাছাড়াও , আমার জায়গাটা খালি করে দেয়ার দায়িত্ববোধ তার মাঝে বেশি কাজ করছে।
: আমি সারাদিন কিছু খাইনি। হাত-মুখ ধুয়ে এসো, একসাথে খাবো। তোমার যদি তাতে কোন আপত্তি না থাকে। আর হ্যা, আমি তো দক্ষিন এশিয়ার দেশ থেকে এসেছি, মসলাদার খাবার খাই। তুমি চাইলে তোমাকে পরিচ অথবা পাস্তা করে দিতে পারি। তুমি, কি পচ্ছন্দ করবে?
ছেলেটার অবাক হবার ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছিল, কোন কথা না বলে কেবল দাড়িয়ে রইলো। হাতের ব্যাগটাও নামালোনা। কেবল অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে আমার রান্না করা তরকারিগুলো বেড়ে রাখা দেখতে লাগলো। খানিক ক্ষনবাদে, নিজের অজান্তেই যেন চলে যাবার কথা মনে পরে যাওয়ায়, নড়ে দাড়ালো।
: কি হলো, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে। আমি অপেক্ষা করতে পারছিনা। আর দেখছোই তো আমার ডাইনিং টেবিল নেই, সুতরাং তোমার ঘরের টেবিলে খেতে হবে। আমার ঘরে কেউকে ঢোকাবার মতো অবস্থা নাই, পুরোটাই এলোমালো, গুদাম ঘরের মতো। সিগগিরি যাও।
: আমি তোমার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। তোমার উপকার আমি কোনদিন ভুলবোনা।
ছেলেটা কথা শেষ করতে পারলো না, চুপ করে গেল।
: আমি সত্যিই খুব ক্ষুধার্ত। তোমার কি আমার মসলাদার খাবারে সমস্যা আছে? কিছু বললেনা তো?
: আমি আসছি।
মাথা নিচু করে , চলে গেল। আমি দুটো প্লেটে ভাত, বেগুন-আলুর সবজি বেড়ে নিলাম। ডাল আর মাংস আলাদা প্লাস্টিকের বক্সে। আসলে আমার কেবল দুটো প্লেট, দুটো গ্লাস, কিছু হাড়ি-পাতিল আর অনেকগুলো প্লাস্টিকের বক্স (ক্যাম্পাসে খাবার নিয়ে যাই বলে, এদের "প্রয়োজনীয়তার উপরভিত্তি করে" বেহিসাবে কেনা) আছে ।
: তুমি আগে কখোনো ভাত খেয়েছো?
: হ্যা, তবে সেগুলো দেখতে অন্যরকম, লালচে রংয়ের।
একটু যেন থামলো, বসলোনা । দাড়িয়ে রইলো। আমিই একটা প্লেট এগিয়ে দিলাম, নিজে বসলাম চেয়ারে। ঘরে আর কোন চেয়ার না থাকায়, ছেলেটাকে বিছানায় বসার জন্য অনুরোধ করলাম।
: নাও , শুরু করো। আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমার নামটা ভুলে গেছি।
: এ্যালেন।
: এ্যালেন, তুমি খেয়ে নাও। আগে খাও, পরে তোমার সাথে কথা বলবো। তুমি কি জান, খাবার-দাবার হচ্ছে ঈশ্বরের দেয়া, একটি আশির্বাদ। আমি-তুমি চাইলেই খেতে পারিনা, কেউকে খাওয়াতেও পারিনা। তুমি ভেবোনা, আমি তোমার উপর অনেক দয়া করছি। আমি যখন রান্না করছিলাম, একবারও তোমার সাথে আমার খাবার ভাগ করে খাব চিন্তাও করিনি। এখন মনে হলো, তোমাকে আমার দেশের রান্নার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
: তুমি কি জান, তুমি অনেক মহৎ একটা কথা বলে ফেলেছো।
: তাতো জানিনা। তবে এটা আমার বিশ্বাস। আর আমার জীবনের প্রতিটা মুহুর্তকে আমি, আমার বিশ্বাসের চোখ দিয়ে দেখি।
: তুমি অন্যরকম। তোমার দেশ কোথায়? যদি কিছু মনে না করো, আসলে তোমার রান্নাটা কোনদেশের রান্না, তা জানার জন্য বললাম।
: আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। দক্ষিন এশিয়ার একটা দেশ ।
: আমি নাম শুনেছি। তোমার দেশটা সমুদ্র সমতলের খুব কাছাকাছি, তাই সমুদ্রের উচ্চতা বাড়লে তোমার দেশ ডুবে যাবে, গবেষকরা সেটা নিয়ে আলোচনা করে। তাইনা?
: হ্যা..
কথার ফাকে কখন খাওয়া শেষ হয়েছে, টেরও পাইনি। বহুদিন পর কারো সাথে একসাথে বসে খেলাম। নিজের প্লেট ধুয়ে রেখে, যেন ধন্যবাদের ভাষা খুজছিল।
: তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবেনা। আচ্ছা, তোমাকে কিছু কথা জিগ্ঙাসা করি?
: হ্যা।
: তোমার পরীক্ষা তো আগামী সপ্তাহে। তুমি তোমার বন্ধুর কাছে মালপত্র রেখে, নিজে কোথায় থাকবে ভেবেছো?
: আমি জানিনা।
: তোমার যদি অসুবিধা না থাকে, তুমি আমার মোবাইল ফোন থেকে তোমার বন্ধুকে ফোন করে জানিয়ে দাও- তুমি একটা অস্থায়ী জায়গা পেয়েছো, আগামী কয়েকদিন থাকার জন্য।
ছেলেটা যেন এবার সত্যিই, ভাষা হারিয়ে ফেললো।
তুষারের দেশে এক একটা দিন......চতুর্থ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




