somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা একাডেমির একটি প্রকল্প ও কিছু অপ্রকাশিত কথা-১

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা একাডেমির একটি প্রকল্পে কাজ করি তখন। বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান প্রকল্পে। এসি লাগানো ঠান্ডা ঘরে বসে কাজ করছি আমরা ক'জন মিলে। সময়টা ছিল মধ্য দুপুর। কাঠফাটা রোদ ছিল সেদিন। বাইরে বেরুনোর কোনো উপায় ছিল না কারো। এমন সময় এক কিশোর এসে ঢুকলো আমাদের কক্ষে। ঘেমে একসার অবস্থা। দেখে ভাদ্র মাসের তাল-পাকা রদ্দুরের তৃষার্ত কাক মনে হলো তাকে। ঘরে ঢুকেই কিশোরটি পাশে থাকা জলের গ্লাসটি হাতে নিলো জল খাওয়ার জন্য। আকুতির স্বরে বলল- একটু পানি, একটু পানি খেতে চাই।
ছেলেটিকে দেখে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠেন আমাদের প্রকল্পের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক স্বরোচিষ সরকার। চিৎকার করে ওঠেন তিনি- "এই ছেলে, তুমি এই ঘরে ঢুকলে কী করে? বের হও, বের হও এখনি।"
ছেলেটির কণ্ঠে তখনও ছিল জল খাওয়ার তীব্র আকুতি। গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছিল না তার তৃষ্ণায়। সেই সাথে জড় হয় ভয়। যেন সে ঘোরতর কোনো অন্যায় করে ফেলেছে। যেন সে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে অমার্জনীয় অপরাধ করতে গিয়ে। একসময় ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে থাকে আমাদের সকলের দিকে। একসময় স্বরোচিষ মহাশয়কে মনে হয় কিশোরটিকে মারতে এগিয়ে আসছেন যেন। কিশোরটি পালিয়ে বাঁচে।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমরাও বিস্মিত ও ভীত হলাম। তত্ত্ববধায়কের এমন আচরণে আর কারো কথা জানি না, আমার অন্তত একটি জানালা খুলে গেছে সেদিন। মনে মনে স্থির হয়ে গেল, এই স্মৃতি আমি কোনো দিনই ভুলতে পারবো না। আর যাই হোক- ওই স্বরোচিষ সরকারকে আমি সারাজীবনেও ক্ষমা করতে পারবো না। তা তিনি যত ভালো কাজই করুন না কেন।

ওই প্রকল্পের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন লন্ডনবাসী ড. গোলাম মুরশিদ। উনি সেখান থেকেই আমাদের তদারকি করতেন। তাই উনার শারীরিক অনুপস্থিতিতে ওই দায়িত্ব পালন করতেন ওই স্বরোচিষ সরকার, যিনি একেধারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকও। নামের আগে ডক্টরেট ডিগ্রিও আছে। শুনেছি, তার অধীনে নাকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে পিএইচডি-ও করেন। আমি জানি না, এই অধ্যাপকের তত্ত্বাবধায়নে কাজ করে ছেলেমেয়েরা কী হয়ে বের হয় বা এখনও হচ্ছে। যে লোকটি এত এত ডিগ্রি (?) নিয়ে ন্যূনতম ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারলো না, তার কাছে থেকে মানুষ হতে পারবে কি আমাদের ভবিষ্যৎ ডক্টরেট ডিগ্রিধারীরা? সকলের কাছে এমন প্রশ্নই রইল...

হে কিশোর, নাম না জানা তৃষার্ত কিশোর, আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। সেদিন তোমাকে মন থেকে চেয়েও এক ফোটা জলও খাওয়াতে পারিনি আমি। চাকরি হারানোর ভয়ে আমি সেদিন ওই অধ্যাপকের মুখের ওপর বলতে পারিনি- এই নাও, জল খাও।

হে কিশোর, নাম না জানা তৃষার্ত কিশোর, তোমাকে দেখলে হয়ত আজ আমি চিনতেও পারবো না। তবে যদি কোনোদিন তুমি আমার কাছে আসো, আবার যদি কোনোদিন জলের জন্য প্রার্থনা করো- তাই তোমার জন্য রেখে দিয়েছি এক আকাশ মেঘ। সেদিন তোমাকে তুমুল বৃষ্টিতে ভেজাবো আমি।

বি.দ্র. মন থেকে ওই স্বরোচিষ সরকারকে মেনে নিতে পারিনি বলে একসময় নিশ্চিত বেকারত্বকে মেনে নিয়েই আমি ওই চাকরি থেকে রিজাইন দেই। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, পরিচালক শাহেদা খাতুন, উপ-পরিচালক মুর্শিদ আনোয়ারসহ আরো অনেকের বিশেষ অনুরোধেও আমি সেই রিজাইন লেটার ফিরিয়ে নেইনি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×