ড. লারিসিয়া হকিন্স রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হুইটন কলেজে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। সম্প্রতি (ফেব্রুয়ারি ২০১৬) তিনি সে কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও যৌথ বিবৃতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি কলেজ ছেড়েছেন বলে বলা হয়েছে এবং উক্ত কলেজের প্রেসিডেন্ট ফিলিপ গ্রাহাম রাইকিন ড. হকিন্সের অবদানের কথা স্বীকারও করেছেন তথাপি এর মূল কারণ হচ্ছে তাঁর মত প্রকাশের খেসারত। মানুষ দাসত্বের যুগ পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে প্রচার করা হয়। বলা হয় এখন উত্তর আধুনিকতার যুগ। মানুষ নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করার অধিকার রাখে। কাগজে কলমে এ কথা স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তবে মানুষ কর্তৃপক্ষের চোখ রাঙানির বাইরে বিচরণ করতে পারছে না। ড. হকিন্সের চাকরি থেকে বিদায়ের ঘটনা তারই প্রমাণ। তিনি তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন: মুসলমান খ্রিস্টান একই ঈশ্বরের উপাসনা করে। এতেই ঘটে সকল বিপত্তির উৎপত্তি। ‘গোদের উপর বিষফোঁড়ার’ মত তিনি আবার মুসলিম নারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে হিজাব পড়তেও শুরু করেন। সে ঘটনাটি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের। এরপর তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত চাকরি থেকেই বিদায় নিতে হল তাঁকে। চাকরির শর্তানুসারে কোন গুরুতর অসদাচরণের দায়ে যে কোন চাকরিজীবী চাকরি হারাতে পারেন। কিন্তু ড. হকিন্স কোন গুরুতর কিংবা লঘুতর অসদাচরণ করেননি। একটি নিরেট সত্য কথা বলার জন্য চাকরি থেকে বিদায় করে দেয়া মানুষের মৌলিক মানবিক মর্যাদার সাথে মানানসই নয়। পৃথিবীব্যাপী সর্বগ্রাসী নির্মমতার প্রেক্ষাপটে এটা হয়তো একটি অতি ক্ষুদ্র ও অনুল্লেখ্য উদাহরণ। কিন্তু পাতিলের ভাত একটা টিপেই সার্বিক অবস্থা উপলব্ধি করা যায়। যারা মানবাধিকারের কথায় সোচ্চার থাকেন তাঁদের আমরা শ্রদ্ধার চোখে দেখি। কাকতালীয়ভাবে মানবাধিকারের প্রবক্তাদের মধ্যে হুইটন কলেজ কর্তৃপক্ষও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব যখন নিজের ঘাড়ে বর্তায় তখন অনেক জাঁদরেল মানবাধিকার কর্মীও পিছু হটে যায়। অনেক মানবাধিকার কর্মী কিংবা নারী স্বাধীনতার প্রবক্তা কর্তৃক নিজ গৃহ পরিচারিকার উপর শারীরিক নির্যাতনের খবর আমরা কোন কোন সময় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখি। স্বভাবতই আদর্শের উচ্চারণ ও আদর্শ পালন এক জিনিস নয়। মানুষের কথায় ও কাজে এ গরমিলের উপস্থিতিতে পবিত্র কুরআনের বিস্মিত প্রশ্ন: কেন তোমরা তা বল যা তোমরা নিজেরা করোনা? (সূরা সাফ্ফ ৬১:২) সত্যের দাবি হচ্ছে: মানুষ তার কথা অনুযায়ী কাজ করবে। সত্যিকারের মানুষ হতে হলে আমাদের উচিত আমরা যা বিশ্বাস করি তা বলা এবং যা বলি তা বিশ্বাস করা। আর বিশ্বাসের দাবিই হচ্ছে ঘোষণাকে কাজে পরিণত করা। শুধু বিশ্বাসই নয় জ্ঞানকে কাজে প্রয়োগ করতে না পারলে সে জ্ঞানও মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ প্রচেষ্টায় বিপদ আছে।
বিপদ আছে জেনেও, আপন বিশ্বাসকে মূল্যহীন করতে চাননি ম্যানবুকার পুরস্কার জয়ী মানবতাবাদী ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায়। তিনি ভারতের কারাগারে বন্দী মাওবাদী এক প্রফেসরের পক্ষে কলম ধরেছিলেন। তার নাম জি এন সাইবাবা। কারাবন্দী প্রফেসরটি আবার প্রতিবন্ধীও। ২০১৫ সালের মে মাসে অরুন্ধতী রায় এ প্রতিবন্ধী প্রফেসরের জামিনের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি তাতে লিখেছিলেন:‘ সরকার যে প্রতিবন্ধী প্রফেসর জি এন সাইবাবাকে জীবিত অবস্থায় জেলের বাইরে আসতে দিতে চায় না তার অনেক লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে।’ এর জের ধরে তাঁকে ‘ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও নোংরা অভিযোগ আনার জন্য’ অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে সে লেখার খেসারত হিসেবে তাঁকে জেলে যেতে হতে পারে।
উচ্চারণের সাথে আচরণগত অনৈক্য চারিদিকে একটি প্রতারণামূলক আবহ সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রতারণা মানবিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। আমরা সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য হাহাকার করি। কিন্তু মূল্যবোধ সৃষ্টি ও রক্ষায় ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত কোন অবদান রাখতে সচেষ্ট হই না। সমাজে কর্তৃপক্ষীয় খবরদারি যতটুকু থাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ততটুকু থাকে না। তাই মানুষের সাথে অমানবিক আচরণই বর্তমানে কর্তৃপক্ষীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ইরাকে মানববিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে’ এ রকম একটি নির্জলা মিথ্যা অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য শক্তি ইরাক দখল করে নিয়েছিল। এরপর থেকে সে দেশে অনেক নির্মম ঘটনার জন্ম দিয়েছে দখলদার বাহিনী। একটি ছোট ঘটনার কথা বলি। একদিন দখলদার বাহিনীর একজন মার্কিন সৈন্য রাস্তার পাশে একজন সাধারণ ইরাকীকে অকারণে লাথি ও চড় মেরেছিল আর মুখে বলছিল: ইরাকীদের লাথি ও চড় মারা যায়। এ ঘটনাকে একটি প্রতীকী উদাহরণ হিসেবে নিয়ে মানুষের প্রতি কর্তৃপক্ষীয় দাম্ভিকতা ও জুলুমের স্বরূপ উন্মোচন করা যায়। ড. মাহাথির মোহাম্মদ তাঁর আত্ম জীবনীতে কলোনি যুগে এক ব্রিটিশ অফিসার কর্তৃক প্রকাশ্য রাজপথে এক মালয়েশীয়কে নির্মমভাবে প্রহার করার কথা উল্লেখ করেছেন উদাহরণ হিসেবে। আমাদের দেশেও সাধারণ পুলিশ কর্তৃক অনেক নিরীহ নাগরিককে অকারণে নির্যাতনের ঘটনা দুর্লভ নয়। এসবই কর্তৃপক্ষীয় নির্যাতনের নমুনা। ক্ষমতার এ রকম অমানবীয় আত্মপ্রকাশ মানুষের স্বস্তি ও শান্তিকে প্রকৃতপক্ষেই বিচলিত করে তুলেছে। কিন্তু অহমিকার এ আত্মপ্রকাশের একটি বিপরীত দিকও আছে। বিজ্ঞানী নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র আমাদের জানাচ্ছে: ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া পরস্পর একজাতীয় ও সমান। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও বলেছেন: ‘যুগের ধর্ম এই/ পীড়ন করলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।’ এ বিষয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও আমরা উদ্ধৃত করতে পারি। তিনি তাঁর ‘অপমান’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ বর্তমানে আমরা দেখছি, পৃথিবীতে একদিক থেকে ‘ঢিল’ পড়ছে অন্যদিক থেকে পড়ছে ‘পাটকেল’। আর প্রাণ যাচ্ছে ‘নল খাগড়ার’।
আমরা যা আগে দেখিনি, বর্তমানে পৃথিবীতে চলছে অসহিষ্ণুতার প্রবল তরঙ্গ। ক্ষমতা যার বেশি তার অসহিষ্ণুতাও ততবেশি। মনে হচ্ছে ক্ষমতাধর মানুষরা ক্ষমতার আবরণের নীচে গোপন অথচ ভয়ঙ্কর কোন অপরাধবোধে ভুগছেন। সে অপরাধবোধকে আড়াল করার জন্য তাঁরা এতবেশি উচ্চকণ্ঠ হয়ে পড়ছেন যে, সহিষ্ণুতার মাত্রা আর কাক্সিক্ষত সীমার ভেতর থাকতে পারছে না। পানি যেমন উপর থেকে নীচের দিকে গড়ায় তেমনি এ অসহিষ্ণুতার ধারা সমাজের উঁচুস্তর থেকে ক্রমশ নীচের দিকে প্রবাহিত হচেছ। বাঘের পেছনে যেমন ফেউ থাকে ক্ষমতার বৃহৎ বলয়ের পাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরো অনেক বলয় সৃষ্টি হয়ে থাকে। তখন, ‘রাজা যত বলে পরিষদ দলে বলে তার শতগুণ।’ তাই বোদ্ধাজনেরা বলে থাকেন মানবতার স্বার্থেই সবসময় ক্ষমতার ভারসাম্য থাকা চাই নতুবা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সমাজ যাতে একপেশে হয়ে না পড়ে তজ্জন্য মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত যদি না তা মানুষের সাধারণ মূল্যবোধকে আঘাত করে। অবশ্য মতপ্রকাশের সময় দায়িত্বশীলতার কথা ভুলে থাকা চলে না। স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতার মাঝে একটা সমন্বয় বজায় রেখে চলতে হয়। কারণ একপেশে সমাজ অনিবার্যভাবে ‘বর্ণবাদ’ কে উসকে দেয়। সে বর্ণবাদ ধর্মীয় কিংবা অধর্মীয় হতে পারে, হতে পারে ‘রাজনৈতিক’ও। বর্ণবাদের পরিবর্তে সাম্যবাদই মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামাজিক সাম্য কায়েম করা। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা না পেলে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
বর্তমান পৃথিবীতে সমালোচনা সহ্য করা একটা বিরল গুণে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনক্রমেই সমালোচনা সহ্য করা হয় না। বিশেষ করে যাঁরা ক্ষমতা-চর্চা করে থাকেন তাঁরা এ বিষয়ে সবসময় এগিয়ে থাকেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে যাঁরা সমালোচনা সহ্য করেন না তারাই আবার প্রতিপক্ষের প্রতি প্রবলভাবে সমালোচনা মুখর। তাঁরা মনে করেন অবস্থানগত সুবিধার কারণে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করার সব ও একমাত্র ‘অধিকার’ তাঁদের। তাই তারা মানুষের সমালোচনার সুযোগ ও ক্ষেত্রগুলো সঙ্কুচিত করতে তৎপর থাকেন এবং এভাবেই নিজেদের অধিকারের ক্ষেত্রকে ক্রমশ সম্প্রসারিত করে চলেন। যেমন এখন দেখা যায়, সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠাটিও ‘লাভজনক’ বিজ্ঞাপনের দখলদারিত্বের কবলে পড়ে প্রকৃত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রকে সঙ্কুচিত করে চলেছে। তবে সে যা হোক, একটা কথা আমাদের মনে রাখা উচিত ভীতি বা চাপে পড়ে কারো সমালোচনা না করা গেলে তাতে তিনি বা তারা ‘নির্দোষ’ হয়ে যান না। নিজেদের ‘অধিকার’ বজায় রাখার জন্য অন্যের ‘অধিকার’ হরণ করার প্রবণতা ‘বুমেরাং’ না হয়ে পারে না। বোলার খুব জোরে ‘বল’ ছুঁড়তে পারেন কিন্তু অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লেগে তা ‘ছক্কায়’ পরিণত হতে পারে।
পরিস্থিতি পরিবেশের কারণে মানুষ একাধারে ‘উদ্ধত’,‘অনুগত’, ‘অবনত’ এমনকি ‘নতজানু’ও হতে পারে। মানুষ কোন কোন সময় ‘মিথ্যা’ অথবা ‘অর্ধসত্য’ও উচ্চারণ করতে পারে। সত্যের বিপরীত উচ্চারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব কিন্তু তা কোন মতেই গৌরবের বিষয় নয়। মানুষকে আল্লাহপাক যে অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী করেছেন তার সাথে মানুষের এ আচরণ (আসলে মিথ্যা বলার মত অসদাচরণ) সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পাশাপাশি অনিবার্যভাবে মানুষ ‘সত্য কথাও’ সাহসের সাথে উচ্চারণ করতে পারে। এ সত্যকথন অনেক সময় তাকে অপমান কিংবা নির্যাতনের শিকারে পরিণত করতে পারে। কিন্তু এতে তার গৌরব বাড়ে। কারণ এক সময় না এক সময় মিথ্যার খোলস ভেঙে সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ড. আবদুল করিম (১৯২৮-২০০৭) জীবন সায়াহ্নে এসে একটি জাতীয় দৈনিকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সে সাক্ষাৎকারে তাঁকে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন: ‘ইতিহাসকে কেউ বিকৃত করতে পারেনা।’ ইতিহাস একসময় সত্য কথাটি প্রকাশ করে দেয়। কিন্তু মানুষের দুর্ভাগ্য এই যে, তারা ইতিহাসের প্রকাশিত সত্যকে নিজস্ব সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক প্রয়োজনে সচেতনভাবে ভুলে থাকে। তখন সত্য তাকে উদ্বুদ্ধ করে না বরং আবেগ তাকে প্ররোচিত করে। এ প্ররোচনা তাকে ‘হীনতর’ করে ‘মহত্তর’ করে না। আমাদের সুদূর ও নিকট অতীত ইতিহাসে এর প্রমাণ বিদ্যমান। একটা উদাহরণ দেই। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের উদ্দেশ্যে কপটাচারী ব্রিটিশ দখলদাররা ‘ব্ল্যাকহোল’ কাহিনী সৃষ্টি করেছিল। বলা হয়েছিল একটা অতি অপ্রশস্ত কক্ষে অনেক ইংরেজ বন্দী নারী পুরুষ শিশুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে সিরাজের নির্দেশে। কিন্তু পরবর্তীতে ইতিহাস প্রমাণ করেছে সিরাজের বিরুদ্ধে এ অপবাদ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। এ কথা কারো অজানা নয় যে, ৯/১১ ঘটনার পর ইরাকের কাছে মানববিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করেছিল বুশ হানাদার বাহিনী। ইরাক বারবার দাবি করছিল তার কাছে মানববিধ্বংসী কোন রাসায়নিক অস্ত্র নেই। কিন্তু দেশটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস ও লুন্ঠন শেষ হবার পর এখন খোদ আমেরিকানরাই স্বীকার করে বলছে ইরাকের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র থাকার অজুহাতটি ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বেদনাদায়ক সত্য হচ্ছে সা¤্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের এ স্বীকারোক্তি ইরাক ও বিশ্বের ক্ষতিপূরণ করতে মোটেই সক্ষম হয়নি।
কিছু শক্তিধর রাজনীতিবিদদের পরিকল্পিত মিথ্যা বলার ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর অনেক ঐতিহ্য ও মানুষের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়ে পড়ছে। তাঁরা নিজেদের ‘অতীতের’ প্রচারিত মিথ্যাকে স্বীকার করে নিয়ে বর্তমান ‘সত্যবাদিতা’র প্রমাণ উপস্থাপিত করেন। আমাদের আশঙ্কা হয় বর্তমানে কথিত সত্য উচ্চারণের আড়ালে তারা আবার ‘ভবিষ্যতে স্বীকার ’ করার জন্য কোন ‘মিথ্যা’ সৃষ্টি করে চলেছেন কি না। কারণ বিচিত্র ও বিভ্রান্তিকর রাজনীতির কারণে সাম্প্রতিককালে ইংরেজি ভাষায় একটি নূতন শব্দ সৃষ্টি হয়ে গেছে। শব্দটি হচ্ছে ‘অ্যাগনটোলজি’। এর মোটামুটি অর্থ হচ্ছে জনগণকে অজ্ঞ রাখার কৌশল। জনগণকে অজ্ঞ রাখতে পারলেই ধুরন্ধর রাজনীতির স্থায়িত্বের মেয়াদ বেড়ে যায়।
কেউ যখন সত্য বলার দায় গ্রহণ করে না কিংবা সত্য উচ্চারণের মত সহিষ্ণু পরিবেশ সমাজে অনুপস্থিত থাকে তখন নৈরাজ্যই বিরাজ করে সমাজে। আর নৈরাজ্য-কবলিত সমাজ সামনে এগোতে পারে না। তার উল্টো যাত্রা ঘটে পেছন পানে।
বিশ্বে সত্য উচ্চারণকারীরাই সমাজের উল্টোযাত্রা ঠেকাতে পারেন। তাদের পক্ষেই আমাদের সকল সমর্থন। সত্য উচ্চারণের জন্য তারা আবার কর্র্তৃপক্ষীয় নির্যাতনের নির্মম শিকারও হতে পারেন। তাই তাদের পক্ষেই আমাদের সকল সমবেদনা।