somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দি সিরিয়াল-এর পোস্টমর্টেম , খাব না মাথায় মাখব B:-) B:-) ? শেষ পর্ব

৩০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিন্দি সিরিয়ালের পোস্টমর্টেম, পর্ব-১

[ সময়মত পরের পর্বটা দিতে না পারায় আমি খুবই লজ্জিত । কি আর কমু দুঃখের কথা । ইন্টারনেট আছিলনা তিন মাস । তিন মাস পর নেটে বসতে গিয়া দেখি ক্যামনে পিসি শাটডাউন করতে হয় ভুইল্লা গেসি :((:((:(( ]

প্রথমেই বইলা নেই , আজকের পোস্টটা কিন্তু সিরিয়াস আলাপের । কাজেই কেউ হাইসা আমার পোস্টের ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করবেননা । আগের পোস্টে বলছিলাম যে সিরিয়ালগুলার গল্পের পোস্টমর্টেম করা হবে । কালকে নেটে বইসা দেখি পুরনো ক্যাচাল ফিনসে হাজির । বহু পুরাতন ভাব , নব আবিষ্কার । হিন্দি সিরিয়ালের শিক্ষনীয় দিক , এর থীম ,"পারিবারিক পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালোবাসা,দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ,সামাজিক মূল্যবোধ"-এর প্রশংসা কইরা পোস্ট । মাইলাসে মাইলাসে সে পোস্ট সয়লাব । অর্থাৎ কিনা ব্লগাররা কেউ এগিলি দ্যাহেনা । আর যদি কেউ সিরিয়ালপ্রেমী সংখ্যালঘু থাইকা থাকে, তারা উত্তেজিত ভায়োলেন্ট সুশীল ব্লগারগো ডরে কাছে ভিড়তে পারেনাই ।

কিন্তু আমার কথা সেইটা না । কথা হইলো , যারা দ্যাহেনা তারা ক্যান দ্যাহেনা ? যারা দ্যাহে তারাই বা কি দ্যাহে ? ভারতে কি ট্যালেন্টেড রাইটারদের অভাব ? ক্যান তারা বারবার নতুন বোতলে পুরানা মাল ছাড়ে ? পিছনের কারণটা কিন্তু নিছক বিনোদনের চাইতে অনেক বেশী । যেহেতু ব্লগে এদানিং অভিজ্ঞ সিরিয়ালদর্শী বর্তমান , আমাদের অনেক সন্দেহ আর বিভ্রান্তি আমরা যাচাই করিয়া লইবার মানুষ পাইছি । গল্পে কুনো ভুল থাকলে তিনি ধরাইয়া দিবেন ।

হিন্দি সিরিয়ালের মূল টার্গেট যে নারীজাতি তাতে কোনোই সন্দেহ নাই । এমন কোনো সিরিয়াল আমার চোখে পড়লনা যার মূল চরিত্র পুরুষ [মনে হয় খালি সিআইডি ছাড়া।] বুঝাই যায় যে নারী-দর্শকদের আকৃষ্ট করতেই সব নাটকগুলি নারীপ্রধান । কিন্তুক কথা হইলো, নারীজাতির প্রতিই এ অহেতুক পক্ষপাতিত্ব ক্যান ? পুরুষদের কি সাধ-আল্লাদ বইলা কিছু নাই ? তারাও তো টিভি দ্যাখে ? টিভির রিমোটের উপরে হাত বুলাইতে তাদেরও তো দিল-জিগার চায় ? তবে কেন এ হেন জেন্ডার-ডিসক্রিমিনেশন ?

কারণটা আমাদের এক অভিজ্ঞ আপা কিন্তু কইয়া দিসে । শিক্ষনীয় অনেক বিষয় আছে এতে , য্যামন এর থীম , সামাজিক দায়িত্ববোধ-ভালুবাসা ব্লা ব্লা ব্লা । আপার উপরে কোনো রাগ নাই , কারন তিনি নিজে সুস্থ চিন্তার [আন্তরিকভাবেই বল্লাম কিন্তু, খোঁচা দেইনাই, সত্যি] , তাই তার চোখে সুস্থ জিনিষই পরছে । কিন্তু আমার স্বভাব খারাপ, খালি পঁচা ইদুরের গন্ধ পাই । শিক্ষনীয় বিষয় খালি নারীর জন্য ক্যান ? কি এমন শিখাইতে চায় তারা নারীরে ?
এইখানে আইসা আমি সব ব্লগারদের সাথে দ্বিমত । সবাই দেখি মন্তব্য করছে নারীদের কূটনামি শিখানো হয় । পুরাই ভূয়া কথা । [ তা হইলেতো আমি নিজেও সিরিয়াল দ্যাখতে লাইনে বইসা পড়তাম। কূটনামি অনেক কাজে দ্যায় কিন্তু বাস্তব জীবনে ;) ] কুটনামি আর ষড়যন্ত্র দ্যাখানো হয় ঠিকই , কিন্তু মূল উদ্দেশ্য ওইটা শিখানো না । আগে এইটা বুঝেন , নারীদের কূটনামি ক্যান শিখাইতে যাইবো তারা ? নিজেগো পায়ে নিজে কুড়াল মারবো কোন দুঃখে ?

আসলে ঠিক উল্টা । নারীদের সঠিক সহবত ও ধর্ম-কর্ম শিক্ষা দেয়াই সিরিয়ালগুলির মূল উদ্দেশ্য । বিশ্বাস করলেননা ? ফান মনে হইলেও কথাটা সত্যি । পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আধুনিক নারীগো লইয়া যে বিপাকে পড়সে [জামাইগো সেবা করতে চায়না, পয়সা-পাতি না থাকলে বেইল দ্যায়না, ঘরের বউ পর্দা না করিয়া চাকরি করতে চায়, ইত্যাদি ইত্যাদি] , তার সফল সমাধান এই হিন্দি সিরিয়াল । যারে বলে মাছের ত্যালে মাছ ভাজা । যারে বলে কাঁটা দিয়া কাঁটা তুলা । কি আর কইতাম সেই প্রতিভাময় প্রযোজক-নির্মাতাদের কথা , যারা এক মন্তর দিয়া কাল-নাগিনি নারীর বিষ নামাইয়া দিসে । হে বাঙ্গালার পুরুষজাত , তুমরা যদি জানিতে এই সিরিয়ালামৃতে তুমাদের জন্যে ভবিষ্যতে কি উপকার নিহিত আছে, তবে কদাচ এর বিরোধিতা করিতেনা । বরং আদর করিয়া বউয়ের হাতে নিজেরাই রিমোট তুলিয়া দিতে । বাজার হইতে "ক্যাংকা" টিভি কিনিয়া বউকে উপঢৌকন দিতে ।


ভারত দিনে দিনে পুরানো কুসংস্কার ছুড়ে ফেলে আধুনিক দেশ হয়ে উঠছে । ধর্ম নিয়া তাদের কোনো কুসংস্কার বা মৌলবাদ নাই । অন্তত এসব কথাই তারা প্রচারমাধ্যমগুলাতে প্রচার করে , অথবা করতে চায় । আসেন দেখি প্রগতিশীল আধুনিক ভারতের নাটকের থীম বা গল্পগুলি, এবং তাদের নারী-স্বাধীনতার স্বরূপ ।

মূল থীম ঘুরে-ফিরে একটাই । প্রধান নারী-চরিত্রটার জীবনের যত দুঃখ-কষ্ট-সমস্যা , এবং ক্যামনে সে এসব সমাধান করে। এবং এর মধ্য দিয়ে নারীজাতিকে তার মত হইতে মেসেজ দ্যায় । এর কোনো ব্যতিক্রম নাই । থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় । আশ্চর্যের বিষয় হইলো , সব নাটকেই এই মেসেজ পুরুষের আদি ও অকৃত্তিম সেই মেসেজ । নারী তুমি সহনশীলা হও । তুমি দুধে ধোয়া তুলসীপাতা হও । এবং পুরুষের সেবা কর ।
তবে নারীদের কিনা এতটা সোজাসুজি তিতা লাগতে পারে , তাই আধুনিকতার মোড়কে মুড়াইয়া , একটু চিনি মিশাইয়া , এই উপদেশ দেয়া হয় । শাড়ী-গয়নার বাহার দ্যাখার লোভে হইলেও যেন নারী এসব দেখতে বসে । নায়িকার মত সুন্দরী এবং জনপ্রিয় হবার লোভেও যেন তাদের চরিত্র অনুসরণ করে ।


সহনশীলা সেইসব মহৎ নায়িকাদের গল্প, যারা আধুনিক নারীদের আইডল :


নাটক ১ : পাভিত্রা রিশতা : [পিউর রিলেশনশিপ] : জিটিভি-তে প্রচারিত এই নাটক আমাদের শিক্ষা দ্যায় পিউর রিলেশনশিপ ক্যামন হওয়া উচিত । মোটর মেকানিক নায়কের ফ্যামিলি মিথ্যা বলে নায়িকার সাথে বিয়ে দিছে যে নায়ক গ্যারেজের মালিক [রিলেশনের শুরুতেই মিথ্যা] । ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলেও নায়িকা সবকিছুই এ্যাক্সেপ্ট করে নেয় , কারণ সে তো একনিষ্ঠ নারী [ শিক্ষা: নারীজাতি তোমরা এমন হও ] । উল্লেখ্য , নায়িকার পড়াশোনা খুব অল্প । কিন্তু সে ঘরের কাজ-কামে এক্সপার্ট । নায়িকার ভাবী [খলনায়িকা] শিক্ষিত এবং চাকরী করে । কিন্তু সে খুবই খারাপ মহিলা ! খালি ষড়যন্ত্র করে । [অতএব নারীজাতি তোমরা এমুন হইয়োনা ] ।
নায়িকার শাশুড়ী ছলে-বলে-কৌশলে ছেলে আর ছেলেবউয়ের সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করে । বউয়ের উপরে ভয়ংকর অত্যাচার করে , যৌতুক চায় । কিন্তু নায়িকা কোনোই প্রতিবাদ করেনা । কারণ, সে তো খুব ভালো মেয়ে । তাছাড়া "শশুরাল কি ইজ্জত" রক্ষা করা তো নারীদের পবিত্র দায়িত্ব । তার কাছে তো এটা "পাভিত্রা রিশতা" ।

উসকে বাদ তো কামাল হি হোগায়্যা :-* । কুথা থেইকা কই গেলোগা কয়দিন ঠিক ঠাওর করতে পারিনাই । হঠাৎ দেখি কি , নায়ক একলগে দুই বউ নিয়া বাস করতেসে একই বাড়িতে । স্বেচ্ছাসেবীদের জিগাইলাম , এ্যা ? এইটা ক্যামনে ঘটল?
: প্রথমজনরে তালাক দিতে চায় । নানান ঝামেলায় পুরাপুরি তালাক দেওয়া হয়নাই । কয়দিন পরে দিবে ।

তাইলে দুই নাম্বার নায়িকা এখানে কি করতাছে ?
: দ্বিতীয়জনরে এখনো তো পুরাপুরি বিয়া করেনাই । কয়দিন পরে করবে :-/

বা বা বা । একজনরে অর্ধেক তালাক দিয়া রাখছে , আরেকজনরে অর্ধেক বিয়া কইরা রাখছে । দুই-আধা বউ নিয়া সুখের জয়েন ফ্যামিলি :-/। পাভিত্রা রিশতা । :D

আশ্চর্যের ব্যাপার হইলো যে নায়িকার এসবে কুনোই সমস্যা নাই । সে সবতাতেই রাজী-খুশী ।


নাটক ২: ছোটি বাহু : [না ঘরকি না ঘাটকি] : হিন্দি নাটকের একটা কমন স্ট্রাটেজী হইলো , দুইটা নারী-চরিত্রকে পাশাপাশি তুলনা করে দেখানো হবে । একজন কতটা খারাপ আর তার তুলনায় অন্যজন কতটা ভালো । কি কি করাটা খারাপ চরিত্রের লক্ষণ আর কেমন হওয়াটা ভালো চরিত্রের লক্ষণ । খারাপ হলে সেসব নারীর জীবনের পরিণতি কি হবে তাও হাতেনাতে প্রমাণ করে দেখায় দিবে ।
এই নাটকেও নায়িকা "রাধিকা" আদর্শ নারী । যথারীতি ক-অক্ষর-গোমাংস । পড়ালেখা করার কোনো ইচ্ছাও তার নাই, কোনো উচ্চাকাংখাও নাই । সে চায় শুধু ধর্ম-কর্ম আর পূজাপাঠ করতে । ঘরের কাজকর্ম বলার আগেই ঝাপায় পড়ে করে ফেলে । যে যতই অত্যাচার করুক না কেন , টু শব্দও উচ্চারণ করেনা । তার জীবনের যত সমস্যা আছে সব সে ভগবানের ঘাড়ে চাপায় দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে । অপরদিকে তার বোন "বিশাখা" বড়ই খারাপ চরিত্রের । সে পড়ালেখা জানে । উচ্চাকাংখী । মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হতে চায় । যাকে ভালবাসে তাকে বিয়ে করতে চায় । কে নায়কের বউ হবার যোগ্য ? কে হবে তাদের ছোটি বাহু ? উত্তরটা কি বলে দিতে হবে ?


নাটক ৩: ইয়ে রিশতা কেয়া ক্যাহলাতা হ্যায় : [ডোন্ট টক] : গবেষণার খাতিরেও এমনকি আমি এটা বেশিক্ষণ দেখা সহ্য করতে পারিনা । এতটাই অশ্লীল নাটক এইটা । যতবারই চোখে পড়ে বমি এসে যায় । নাটকটা দেখলে সন্দেহ হয় আমি কি আসলেই ভারতীয় কালচার দেখতেছি নাকি ইসলামী মৌলবাদীদের পর্দাপ্রথার উপর নির্মিত কোনো ডকুমেন্টারি । এই নাটকটা দেখে আমি আবিষ্কার করছি যে আমাদের নারীদের অবরোধ প্রথাটার জন্য আসলে কোনো ধর্মই দায়ী না । এটা আমাদের উপমহাদেশের পুরুষদের আন্তরিক ইচ্ছা , হিন্দু হোক বা মুসলিম ।
নাটকের মূল থীমটা হলো একজন ভদ্রঘরের মেয়েকে কিভাবে পর্দা করে আদবের সাথে চলা উচিত । বিয়ের পরে শশুরবাড়িতে গিয়ে কেমন আচার ব্যবহার করা উচিত । মেয়েপক্ষের আচার ব্যবহার কেমন হবে ছেলেপক্ষের সাথে । মোট কথা বৈবাহিক সম্পর্কের পুরা গাইড দিয়া দিছে । নায়িকা পড়াশুনা করছে কিন্তু চাকরি করবে শুনলে শশুরবাড়ির লোকের মাথায় বাজ পড়ে [হামারি ইজ্জতদার ঘরকি বাহু...!!!???] হানিমুনে যাইতে চায় শুইনা মাথায় বাজ পড়ে [হামারি ইজ্জতদার ঘরকি বাহু...!!!???] । নায়ক নায়িকাকে একটা প্রপার্টি কিন্যা দ্যায় বইলা মাথায় বাজ পড়ে [হামারি ইজ্জতদার ঘরকি বাহু...!!!???] । মাথায় ঘোমটা দিতে ভুইলা গেছে [:-/:-/:-/.!!!???] শপিং করতে চাইসে [:-/:-/:-/.!!!???] মোট কথা নায়িকা যা কিছুই করতে যায় [ আজকালকার মেয়েদের মত] , যেকোনো কথাই কইতে যায়, তার সবই খারাপ প্রমাণ করা হয় । এবং কেন এইসব মাইনা নেওয়া উচিত , তার উপর প্রতি পর্বেই শিক্ষাদান করা হয় । আর নায়িকাও নিজের ভুল বুঝতে পাইরা ভাল হইয়া যায় । আর কইতে পারতাসিনা বমি আইতাছে ।


এইবার যে নাটকটার কথা বলব এটা সত্যিই একটা ভয়ংকর নাটক ।
নাটক ৪: প্রতিজ্ঞা : নায়ক ইভ টীজার । নায়িকা প্রতিবাদ করতে যায় । এবং তার ফলে বেয়াদব নায়িকা ও তার পরিবারের কি শাস্তি হয় সেটার উপর গল্পটা । নাটকে দেখানো হয় ইভ টীজার হলেও নায়ক খুব ভালো । যদিও সে নায়িকাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে তবুও সে খুব রোমান্টিক । যদিও সে নারীর গায়ে হাত তোলাকে কোনো অপরাধ মনে করেনা , তবুও সে বেশ ন্যায়পরায়ন গোছের । বিশ্বাস করেন আর না করেন , এই সবই একই চরিত্রে সমাবেশ ঘটায় দ্যাখাইছে । এবং যদিও নায়িকা প্রফেসরের মেয়ে এবং নায়ক অশিক্ষিত , [এই নাটকে উল্টা ] তবুও সে নায়িকার পতি-পরমেশ্বর । অতএব বারবার নায়কের জিত আর নায়িকার জব্দ হওয়া । ইভ টীজারদেরকে ঘৃণা না করে নারীরা যেন তাদেরকে ভালবাসে সেই শিক্ষা দেওয়া হইসে নাটকটাতে ।


আর কত বলব ? প্রতিটা নাটক ঘুরে-ফিরে একই । মেয়েদেরকে ত্যাগের মাহাত্ম্য শিক্ষা দেওয়া । এই শিক্ষা দিয়া পুরুষরা কি করবে বলেন ? এইজন্যই হিন্দি সিরিয়াল তাদের উদ্দেশ্যে না । এইজন্যই হিন্দি সিরিয়ালের কোনো দরকার নাই পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করার ।

আরও অনেক অপমানজনক ব্যাপার দেখানো হয় যার সব বর্ণনা করতে বসলে পোস্ট ফুরাবে না । শশুরবাড়ির ইজ্জত রক্ষার্থে নায়িকা নিজের বাপ-মা-কে ঘর থেকে অপমান কইরা বাইর করে দেয় । লাথ্থি-গুতা খাইয়া আধা-তালাক-দেয়া জামাইয়ের বাড়িতে পইড়া থাকে । নিজের সতীন-এর লিগা জান কুরবান কইরা দ্যায় । এগুলা সবই আদর্শ নারী-চরিত্র । আর যেসব প্রতিবাদী নারী আছে যারা চিল্লাফাল্লা কইরা কথা মানতে চায়না [ এদেরকে বেসিকালি খুব খারাপ চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়, ষড়যন্ত্রকারী ঘর-ভাঙানি, যেন মেয়েদের এসব ছাড়া আর কাজ নাই] , তাদের পরিণতি হয় ভয়ানক । মোটকথা যুগ-যুগান্ত ধরে নারীদেরকে যেভাবে ট্রেইন করতে চাওয়া হইসে সেটারই সফল ফর্মূলা এই হিন্দি সিরিয়ালের চিনি-মাখানো বিষ ।

এসব দেখতে গেলে নিজের ওপরই ঘৃণা হতে থাকে । আসলেই কি মেয়েরা এতটাই নীচু , এতটাই আত্মসম্মানজ্ঞানহীন , এতটাই অবমাননার যোগ্য ? এবং মধ্যযুগীয় চিন্তাধারার বাহক এই সব সিরিয়ালগুলিই মেয়েদের এত প্রিয় ??? মেয়েরা আহাম্মক । আসলেই আহাম্মক ।


আমি কিন্তু এটা বলিনা যে হিন্দি চ্যানেলগুলি বন্ধ করে দেয়া হোক । তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কোনোকিছু নিষিদ্ধ করাটাই আমার ভাল লাগেনা । ভারতীয় চ্যানেলে যে কোন ভালো অনুষ্ঠানই হয়না তা তো না । কেন আমাদের এই বিচার-বুদ্ধিটুকু থাকবেনা যে আমরা ভাল-খারাপ দুটাই দেখে তার মধ্য থেকে ভালোটাকে চিনে নিতে শিখবো ? "দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি ?"
যা কিছু খারাপ তা নিষিদ্ধ করার আইডিয়াটা ঠিক পায়ে ময়লা লাগায় গবুচন্দ্র রাজার পৃথিবী মুড়ে দিতে চাওয়ার মত । নিজের পা-টা মুড়ে নিলে কি হয় ? কি হয় নিজের বিবেকটা ব্যবহার করলে ? ভালো-খারাপ দুটাই দুনিয়াতে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক । ওরা খারাপ কিছু তৈরী করছে , আমাদেরকে সেটার নকল করতে হবে কেন ? আমাদেরকে পাগলের মত সেটার পূজা করতেই বা হবে কেন ? আমরা নতুন কিছু বানাই, যা আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করবে । নাকি আসলে আমাদের অবচেতন মনে আমরাও ধারণ করি এই অবমাননার বীজ ? তাইতো আমাদের দেশেও এত জনপ্রিয় এই হিন্দি সিরিয়াল । খেয়াল করে দেখছেন যে নারী-অবমাননার এই রূপ কিন্তু আমাদের খুবই চেনা ?


আমার মনে হয় , আমরা আমাদের নিজেদের বাড়িতে যদি নিজেদের সংস্কৃতির চর্চাটা বজায় রাখি , অন্যদেরকে বুঝতে সাহায্য করি এইসব ভূয়া নাটকের অসারতা , আর তার পরিবর্তে ভাল কিছু দিতে পারি , তাহলে হিন্দি সিরিয়ালের কুফল কাটিয়ে উঠবার জন্য যথেষ্ট ।

আমি বলি কি, রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি না করে, নিজেদের পরিবারের মেয়েদেরকে সম্মান করেন এবং তাদের আত্মসম্মানবোধের ভিত টা গড়ে উঠতে সাহায্য করেন [যদি সত্যিই সদিচ্ছা থাকে] । ভালো কিছু দিলে সবসময় ভালো কিছুই ফিরে পাবেন ।




















সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৩
৪৬টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×