somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্জিনিটি ফিরে পাওয়ার অপারেশন এবং এরশাদের সর্বশেষ আবেদন । ১৮ + +

০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্দোনেশিয়ার চিত্রনায়িকা দেবি পারসিক। দুই স্বামী এবং এক বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে আসার পর তিনি আবারও আগের মতো ভার্জিনিটি বা সতীত্ব ফিরে পেতে চান। মিসরের এক হাসপাতাল নাকি তার সেই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে দিয়েছে। অনেকটা একই প্রক্রিয়ায় এরশাদও চাচ্ছেন নামের শেষে স্বৈরাচার টাইটেলটিকে ছোট্ট একখানা অপারেশনের মাধ্যমে ছেটে ফেলতে।


একজন গ্ল্যামার জগতের চিত্রনায়িকা। অন্যজন নির্মম, নিষ্ঠুর ও অত্যন্ত শঠ প্রকৃতির স্বৈরাচারী শাসক। দুজনই জীবনটা উপভোগ করেছেন তাদের মতো করেই। সারা বেলা রঙ্গ করে বেলা শেষে এখন চান অন্যধরনের পরিচিতি বা স্বীকৃতি। নয় নয়টি বছর দেশের শিশু গণতন্ত্রটিকে যাচ্ছেতাই দলিত মথিত না করলে ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এররের’ মাধ্যমে আমরা আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতাম তাতে কোনো সন্দেহ নাই। সেই ভয়ঙ্কর স্বৈরাচার এখন দেবি পারসিকের মতো সামান্য একটু অপারেশন করেই গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে গণ্য হতে চান। মিশরের হাসপাতাল দেবি পারসিককে আবারো সতী বানিয়েছে। আমাদের অপরিণামদর্শী সংঘাতের রাজনীতি এরশাদকে আবারো জননেতা বানিয়েছে।


ক্ষমতা দখল করেই সবার চোখকে তাক লাগিয়ে সাইকেল চালিয়ে অফিস করা শুরু করেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবী জগতটি এই দেশের প্রধান ‘মরাল ব্রিগেড।’ কাজেই এই মরাল ব্রিগেডকে ঘুষ দেওয়ার নিমিত্তেই সম্ভবত কবিতা লেখা শুরু করে দেন। উল্লসিত পত্রিকার সম্পাদকদের কেউ কেউ প্রথম পাতায় সেই সব কবিতা ছাপাতে শুরু করেন। একদিকে নূর হোসেন, ডাক্তার মিলনসহ অনেক তাজা প্রাণ কেড়ে নেয় আবার অন্যদিকে এক শিশুশিল্পীর কাজের মেয়ের অভিনয় দেখে চোখ ভিজিয়ে ফেলেন। শরিয়ত আর বে-শরীয়তকে একাকার করে ফেলে। গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিতাকেও বিদায় দিয়ে দেন। তবে রাজনীতি ও রমণী-নীতি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। শেষবারের মতো তওবা পড়ে বিদিশাকে বিয়ে করেন। সেই তওবাকেও আবারো অনেকবার রিফ্রেশ করতে হয়েছে। তাকে দেখে মনে হয়, এই দুটি থেকে অবসর নেওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই।

গায়ের পোষাক-আশাকটি আধুনিক হলেও ভেতরের মাল-মসলা ছিল অনেকটাই মধ্যযুগের। ‘আটকুড়ে বাদশাহ’ বদনামটি ঘোচানোর জন্যে জ্বলজ্ব্যান্ত স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে সন্তানের জন্মদান ঘোষণা করেন। নামটি প্রেসিডেন্ট হলেও কাজগুলো ছিল সব শাহী ধরনের। এমনকি তার অন্দরমহল বা হেরেমের সাইজটিও খুব একটা ছোট ছিল না। শুধু অন্দরমহলেই নয়, প্রকাশ্য জনসভায় বসেও অন্যের স্ত্রীর শাড়ীর আচল নিয়ে দিব্যি খেলা করতেন এই বিশ্বপ্রেমিক।

এসব ব্যাপারে অত্যন্ত খোলামেলা দেশগুলোর সবচেয়ে প্লেবয় প্রেসিডেন্টগণও অপরের স্ত্রীকে নিয়ে প্রকাশ্যে রঙ্গ করার এমন সাহস দেখাতে পারেননি। নিজেদের চরিত্র যাই হোক, প্রেসিডেন্ট বা সরকার প্রধানদেরকে জনগণ চায় একেবারে ধোয়া তুলসীপাতা হিসেবে। আধ্যাত্মিক কোনো কারণের চেয়ে বাস্তব তাগিদেই কমান্ডার-ইন-চিফ এর যৌনতার ব্যাপারে এই কিপটামিটুকু সেসব দেশের উদার জনগণ করে থাকে। কারণ দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহীর এ জাতীয় দুর্বলতা দেশের নিরাপত্তাকে ঝুকিপূর্ণ করে ফেলতে পারে।

প্রকারান্তরে আমরা মনে করি রাজা-রাজরাদের এই ধরনের দুর্বলতা একটু-আধটু থাকবেই। এ ব্যাপারে আমরা দাতা হাতেম তাঈয়ের চেয়েও বেশি উদার। আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অস্থির ও দুর্বল করার জন্যে প্রয়োজনীয় এন্টিনা বা কলকব্জাগুলো এই কবি ও বিশ্বপ্রেমিকের সেই ৯ বছরেই পুতে রাখা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কাজেই কোন এক প্রেয়সীর গালের তিলের জন্যে এই প্রাক্তন কবি আমাদের কোন কোন সমরখন্দ আরা বোখারা বিলিয়ে দিয়েছেন তার হিসাব টানতে বা উপলব্ধি করতে আমাদের আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

ওয়ান ইলেভেন ও তার পরবর্তী সিকোয়েন্সগুলো সেই সময়েই হয়তবা ঠিক করে রাখা হয়েছিল। যে রাজনীতিবিদগণ এই ওয়ান ইলেভেনের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে তারাও সেদিন টের পায়নি যে কাকের মতো কোকিলের ডিমে তা দিয়ে গেছে। বাচ্চা বড় হলে টের পায় যে এগুলো তার বাচ্চা নয়। প্রথম প্রথম এটাকে তারা তাদের নিজেদের লগি-বৈঠার আন্দোলনের ফসল বললেও পরে টের পেল যে এটা ছিল তাদের আন্দোলনের পরিণাম। মাঝখান থেকে দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটি করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করে। এরই ধারাবাহিকতায় এক নিরাপত্তাবাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে অন্য বাহিনী।

পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ অত্যন্ত মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শিকারী এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মেরেছে। পিলখানার ঘটনা ’৭১-এর বর্বরতাকেও ম্লান করে দিয়েছে। ফলাফলটি হয়েছে, এখন ক্ষমতায় যেই আসুক নতজানু না হয়ে আর উপায় থাকবে না। কাজেই মাই ডিয়ার কান্ট্রিম্যান, সতর্ককারীকে কোনো বিশেষ দেশ বা জাতি বিদ্বেষী, প্রতিক্রিয়াশীল না ভেবে প্লিজ ওয়েক আপ। চিলের পেছনে দৌঁড়াতে বলছি না। দয়া করে শুধু কানে হাতটি দেন।


সম্ভবত বাবা-মার দেয়া নামটি ছিল মুহম্মদ এরশাদ হুসেন। বিলাতি স্টাইলে আগে পিছে করে নিজেই এটাকে বানিয়ে ফেলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাংবাদিক বন্ধুগণ আরো সংক্ষেপ করে বা আদর করে ডাকতে শুরু করে হু. মু. এরশাদ।

চিত্রকর কামরুল হাসান উপাধি দেন ‘বিশ্ববেহায়া’। কবি শামসুর রাহমান লিখেন, উদ্ভট এক উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। ফরহাদ মাজহার লিখেন, লেফটেনেন্ট জেনারেল ট্রাক। সাংবাদিক শফিক রেহমানের যায়যায়দিন ঝলসে ওঠে এই সময়টিতেই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক কলামে নতুন একটি ধারা উঠে আসে মইন-মিলার টেলিফোন সংলাপে ।


আজ সেই এরশাদ ভালো হয়ে গেছে। তিনি আবেদন জানিয়েছেন, ভাইসব আমাকে আর স্বৈরাচার ডাকবেন না। মনে ব্যথা পাই।

তার এই আবেদনের পর আমাদের সার্বিক নীরবতা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের মর্মে তার এই আবেদন গৃহীত হয়েছে, গৃহীত হয়েছে। মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। এদেশের মরাল ব্রিগেড বা ‘ছি-ছি-ছি’ পার্টির সার্বিক চরিত্রটি সত্যিই অদ্ভুত। এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গী না হয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গী হলে জানতে পারতাম ছি-ছি এরশাদ কত খারাপ।’

মহাজোটের পরবর্তী মিশনটি হল এরশাদের মন থেকে এই ব্যথাটি দূরীভূত করা। এরশাদকে তাদের আরো দরকার। ১৯৭৫ সালে বিরোধী দলবিহীন বাকশাল করা হয়েছিল। এবার হবে বিরোধী দল সম্বলিত বাকশাল। আর এরশাদ হবেন সেই বিরোধী দলের নেতা। ভাই-বোন মিলে পিতার সেই স্বপ্নটিই যেন বাস্তবায়িত করবেন। বিরোধীদলীয় নেতার ইমেইজটি শানিত করার জন্যে আগের দিন ইন্ডিয়া থেকে ফিরে পরেরদিনই তিনি ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে লংমার্চ করে এসেছেন। সকালে বউকে নিজের হাতে আম কেটে খাইয়ে সন্ধায় চুরির কেইসে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন। বহুরূপী এরশাদের এই বিশেষ গুণটিকে এই ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশটির একান্ত নিজের মাছগুলো তো নিজের খালুইয়ে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন বিরোধী পক্ষের মাছগুলো এই এরশাদের মাধ্যমে সেই একই খালুইয়ে ঢালার ব্যবস্থা হচ্ছে। এরশাদ এখানেই অনন্য।


আর সেজন্যে এখন দেবি পারসিকের অনুরূপ এরশাদেরও একটা অপারেশন দরকার। অপারেশনটির নাম স্বৈরাচার কর্তন। এই অপারেশনের সার্জন টিমে থাকবেন মেনন-ইনু-দিলীপ-নাহিদ-মতিয়া প্রমুখ। অপারেশনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে আরো কিছু কাজ করা দরকার। কামরুল হাসানকে সাগর-রুনির মতো একটিবারের জন্যে হলেও কবর থেকে তুলে আনতে হবে। উদ্দেশ্য ‘বিশ্ববেহায়া’ শব্দটি তার নিজের মুখেই সংশোধন করে যাক। যায়যায়দিনের মইন-মিলাকে খুঁজে এনে জোড় করে বিয়ে পড়িয়ে এরশাদের কাছে পাঠাতে হবে কদমবুছি করার জন্যে।

দেবি পারসিকের পরবর্তী স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডের মতো এদেশের জনগণও এখন প্রস্তুতি নিতে পারে রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি ভার্জিন এরশাদকে বরণ করার জন্যে।































সংগৃহিত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৫৬
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×