somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিঙ্গারা

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি মনে করতে পারি স্কুলের সেইসব দিনের কথা যখন টিফিনের সময় দুটি কুমকুমে গরম সিঙ্গারা এবং একটি গাঢ় কমলা রঙের বস্তা আইসক্রিম দিয়ে আমি টিফিন করতাম। টিফিন-ঘণ্টায়, ভিড় ক’রে আসা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আশায় স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলো সিঙ্গারা ভাঁজত ডুবো তেলে, তাদের বিশালাকারের কুচকুচে কালো কড়াইয়ের ভেতর। উত্তপ্ত তেলের আকাশে হলদে-সাদা আতশবাজির মত ভাসত সিঙ্গারাগুলো। বার্গার কিঙের প্রকাণ্ড বার্গারগুলোর চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না সেসব সিঙ্গারার অবস্থান- অন্তত আমার কাছে। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হত যখন টিফিনের সময় সংবাদপত্রের ছেড়া কাগজে মোড়ানো গরম সিঙ্গারাগুলো হাতে পেতাম। হালকা উষ্ণ ময়দার প্রথম স্তরটি ভেদ ক’রে যখন ভেতরের হলদে, তপ্ত আলুগুলোর সংস্পর্শে আসত আমার জিহ্বা, আরেক হাতে ধ’রে রাখা অরেঞ্জ আইসক্রিমে সযত্নে বসাতাম একটি যথার্থ কামড়। সেটি ছিল যেন বরফ-কুঁচিতে ভরা কোকাকোলা ভর্তি গ্লাসে চমৎকার একটি চুকুমের মত। কখনো তার চেয়েও বেশি।

এরও আগে- যখন এলাকার শেষ প্রান্তে অবস্থিত সিঙ্গারার হোটেল গুলো পর্যন্ত পৌঁছানোর মত বড় ছিলাম না, তখন সিঙ্গারার জন্য আমাকে নির্ভর করতে হত এলাকার ফুটোর দোকানের উপর। আমাদের কলোনি ও সংলগ্ন পাড়াগুলোর মধ্যকার সীমানা গড়া ছিল একটি উঁচু দেয়ালে। সিঙ্গারার দোকান ছিল পাড়ার অংশে, দেয়াল ঘেঁষা সরু রাস্তারও অপর পাশে। সীমানা নির্ধারণী এই দেয়ালের মাঝখানে একটি ফুটো করা ছিল এবং কলোনিতে বসবাসকারী মানুষজন সেই ফুটো দিয়েই পাড়ার দোকানগুলো থেকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করত। তখন এত ছোট ছিলাম যে, দেয়ালে চ’ড়ে বসা-তো বহুদূরের কথা, দেয়ালের ফুটো পর্যন্তও পৌঁছাতে পারতাম না। তখন কি করতাম, দেয়ালের ফুটোর নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম বড় লোকজনদের কারো আগমনের অপেক্ষায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর বড় কেউ এলে, তার সাহায্য নিতাম দেয়ালের অপর-পাশে থাকা সিঙ্গারা বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য।

কখনো এই দুষ্প্রাপ্য, অমৃত তুল্য সিঙ্গারা খাওয়ার সময় কোত্থেকে উড়ে এসে ছোঁ মেরে তা ছিনতাই ক’রে নিয়ে যেত, নিষ্ঠুর-উদ্ধত-তস্কর কাক। যখন এমনটা ঘটত, তখনো মুখের ভেতর চিবাতে থাকা অংশ আর শূন্য খবরের কাগজে তৈরি ঠোঙ্গা হাতে আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে; লুটেরা কাকের দিকে। নিজেকে অসহায়, সর্বস্বান্ত মনে হত। ছলছলে চোখে, মুখের ভেতরে থাকা অংশটি সাবধানে, বাড়তি সময় নিয়ে চিবাতে চিবাতে আমি ভাবতাম কিভাবে মায়ের কাছ থেকে আরও দুই টাকা জোগাড় করা যায়।

আমাদের জীবনে সিঙ্গারার ভূমিকা অপরিসীম, অনস্বীকার্য। আমাদের বড় হয়ে ওঠায় সিঙ্গারা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। অথচ আমরা এখনো সুযোগ পেলেই সিঙ্গারা খাই যদিও, তথাপি অসাধারণ এই খাবারটিকে নিরন্তর তুচ্ছ করি। বার্গার, স্যান্ডুইচ, চিকেন-ফ্রাই, লেজানিয়া, পিজা, পাস্তা ইত্যাদিকে সিঙ্গারার উপরে স্থান দেই! এটা অবিশ্বাস্য এবং অগ্রহণযোগ্য। সিঙ্গারাকে বাংলাদেশের জাতীয় নাস্তা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হোক। মজা ক’রে বলছি না। গুরুত্বের সাথে বলছি। আমার মুখ গম্ভীর।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×