somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর জন্য সিন-ক্রিয়েট

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর দশটা মা-বাবার মত "লোকে কী বলবে" এই ত্রাস আমাদের মনে সঞ্চারণের কাজটাও আমাদের মা-বাবাই করেছেন। তথাপি আমার বাবা রাস্তাঘাটে, হাটেবাজারে একটা কাজ প্রায়ই করতেন যা ভাইবোন আমাদের জন্য ছিল অত্যন্ত বিব্রতকর। তিনি যখন অমন করতেন, তখন আমরা লজ্জায় মুখ লুকানোর জন্য আড়াল খুঁজতাম। অমন না করার জন্য পিড়াপিড়ি করতাম। হাত টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তিনি আমাদের ওসবে গা করতেন না। যা করার, যা বলার, তা তিনি করতেন এবং বলতেন।

যেমন, হয়তো আমরা সেজে-গুজে কোথাও যাচ্ছি। রাস্তায়। রিকশা, ট্যাক্সি, গাড়ি কিংবা পদব্রজে। হঠাৎ হয়তো রাস্তার ধারে তিনি দেখতে পেলেন কোনও পুরুষ বা মহিলা তার বা কারো কোনও বাচ্চাকে ধরে মারছে। আর বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদছে। এমন দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখি। দেখা যায় অর্ধ উলঙ্গ শিশুটি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে চোখের, নাকের পানিতে মুখ ভাসিয়ে সামনে হেটে চলেছে, আর তার পেছন পেছন লাঠি হাতে হাঁটছে কোনও মহিলা বা কোনও লোক, হয়তো শিশুটির মা বা বাবা বা অন্য কেউ। শিশুটিকে হাতের নাগালে পেলেই দিচ্ছে ভয়ানক দুচার ঘা। কখনো রোখ চেপে গেলে চুলে ধরে দিচ্ছে পিঠে কিল। এমন যখন দেখি, তখন আমরা কী করি? হেটে চলে যাই? আমার বাবা কোনোদিন তা করতেন না। চিৎকার করে ধমকা-ধমকি করে আশেপাশের দোকানপাট, রাস্তাঘাটের মানুষের পিলে চমকে দিয়ে প্রহারকারীকে থামাতেন। গালাগালি করতেন রীতিমত। বকা খেয়ে তারা অবাক হয়ে তাকাত। ভাবতেও পারত না নিজের বাচ্চাকে পেটানোর জন্য রাস্তায় কোনও অপরিচিত মানুষের এমন ধমক তাকে খেতে হতে পারে! কখনো তাদের কেউ কেউ বাবাকে উপেক্ষা করতে চাইত। কিন্তু বাবা নাছোড়বান্দা। যতক্ষণ না সেই লোক বা মহিলা কথা শুনছে, ততক্ষণ ধমকাত! বিব্রতকর অবস্থা! কখনো "আমার পোলারে আমি মারি আপনার কী"- এমন ভাব করে হয়তো উল্টো ঝাড়ি দিত। রাস্তাঘাটে, ভাসমান, অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত লোকজনের সাথে এমন বাকবিতণ্ডায় কে জড়ায়? কিন্তু এক্ষেত্রে মোটেও পিছুপা হওয়ার মানুষ আমার বাবা না। যতক্ষণ না শিশুটিকে মারধর থেকে লোকটি কিংবা মহিলাটি নিবৃত্ত হচ্ছে (হোক সাময়িকভাবে), ততক্ষণ চলত বাবার বকাঝকা, প্রচণ্ড শব্দের ধমক।

এমন কী সেদিনও আমরা বাড়ি যাচ্ছি। গ্রামের রাস্তার পাশে এক বুড়ো এক কিশোরের চুল ধরে দিচ্ছে ইচ্ছে মত কিল। বাবা, জানালার কাচ না নামিয়েই দিল এক চিৎকার! রাস্তার শান্তিপূর্ণ লোকজন, পথচারী সব হতবিহবল! আবারো সেই বিব্রতকর পরিস্থিতি। কিন্তু বুড়ো লোকটা সেই মাফল্ড ধমকেই চুল ছেড়ে দিল ভয়ে। বাচ্চাটা পালিয়ে বাঁচল।

আমরা কিন্তু এমন পারি না। লোকলজ্জার ভয় করি। অস্বস্তির ভয় করি। ভাবি কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি না পড়ি! প্রত্যুত্তরে একটা গালি দিলে, বা "তোর/ তোমার/আপনার কী" কইলেই তো মানসম্মান সব গেল।

শিশু নিপীড়ন বন্ধে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ, ভালোমানুষি জারিজুরি সব নিরাপদে, ঝুট-ঝামেলা থেকে দূরে, স্বস্তি-দায়ক লাইকের ডালি সাজানো মঞ্চে। কথিত মানসম্মান, মর্যাদা ইত্যাদি সমস্তই যেখানে অটুট। কেবল পাওয়ার আছে। হারাবার যেখানে নাই কিছুই। বড়জোর উপেক্ষা থাকতে পারে। তার বেশি কিছু না। ভালোমানুষিতে, ভাল কাজে আমাদের কোনও বিসর্জন নাই। ঝুঁকি নাই। প্রতিশ্রুতি নাই। নো ম্যাটার হোয়াট নাই। রাস্তায় আমরা ভদ্রলোক। বাজারে আমরা মশাই। বাসায় আমরা লোকের একান্ততার প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল।

আগে বিব্রত হলেও এখন বুঝি, বাবার মত ক্ষেত্র-বিশেষে ঠোঁটকাটা বেপরোয়া, প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারদর্শী লোকজনই দরকার। নতুবা শিশু নির্যাতন থামে না। কেবল আহা-উহু আর নির্যাতনের ভিডিওতে ইউটিউব ভরে ওঠে!

সম্প্রতি চাওর হওয়া শিশু নিপীড়নের ভিডিওটি দেখছি! ভিডিও করে লোকে! থামাবার একটা লোক নাই?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×