somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইল-আসক্তি নিয়ে বর্তমান যুগের মা-বাবাদের অন্যায় সমালোচনা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান কালের মানুষের মোবাইল-আসক্তি আছে, তা মানি। কিন্তু অতি সমালোচনা প্রবণ ছিদ্রান্বেষী লোকজন যখন এই অবস্থাকে পূঁজি ক'রে বর্তমান যুগের মা-বাবাদের সমালোচনা করেন, তখন আমার ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠে। তারা বলতে চায় মোবাইলের কারণে বর্তমান কালের মা-বাবারা তাদের সন্তানদের যথেষ্ট সময় দ্যান না; তাদের অবহেলা, অযত্ন করেন। বসুন্ধরা সিটির ফুডকোর্টের টেবিলে শিশুকে বসিয়ে মোবাইলে নিমজ্জিত এক দম্পতির ছবি বেশ চাউর হয়েছিলো কিছুদিন আগে। বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে ফেরার পথে রিকশায় বসে মোবাইল দেখতে ব্যস্ত একজন ভদ্রমহিলার ছবি নিয়েও নিন্দার ঝড় উঠেছিলো সেইসব ছিদ্রান্বেষী অকর্মাদের মহলে।

বাংলাদেশে বর্তমানকালের মা-বাবার মত বাচ্চা-কেন্দ্রিক জীবনযাপন আর কোনো কালের মা-বাপ করেছে কিনা তা নিয়ে আমি গভীর সন্দেহ প্রকাশ করি। এযুগের শিশু-অন্তঃপ্রাণ মা-বাবাদের এই সংক্রান্ত সমালোচনা তাই ঘোরতর অন্যায় এবং ভব্যতার শেষ সীমার অগ্রহণযোগ্য অতিক্রম।

বর্তমানকালে নয়, বরং আগের-কালের বাচ্চারাই নিদারুণ উপেক্ষা, অবহেলা ও অযত্নে বড় হতো। একেক দম্পতির আট দশটা ক'রে পোলাপান হতো বলে প্রথম দুইএক সন্তানের কপালে মা-বাপের কিঞ্চিৎ আদর সোহাগ জুটলেও, পরের সন্তানেরা প্রায় অনাদরে, অযত্নে প্রকৃতির সন্তানের মতই ভাইবোনদের সাথে গড়াগড়ি করে বড় হয়ে যেতো। আমরা যদি লেখকদের শৈশব পর্যালোচনা করি, তবে এই বক্তব্যের যৌক্তিকতা মিলবে।

ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখায় রবীন্দ্রনাথ তার প্রতি ঘটা অনাদর, অবহেলার কথা লিখেছেন। সে যুগে মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্যান্য বড় মানুষ এবং বাচ্চাদের মধ্যকার দূরত্ব ছিলো অনেক। বাচ্চারা বড় হতো বাড়ির চাকরদের কাছে। তাদের অনাদরে অনাহার বা স্বল্পাহারের কারণে জমিদার পুত্র রবি শীর্ণকায় ছিলেন! নীরদচন্দ্রের 'আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ' বইটিতে এর বিশদ বর্ণনা আছে।

ম্যাক্সিম গোর্কি তার আত্মজীবনী ছেলেবেলায় নিজ মা-বাবার জীবিত থাকাকালীন যে স্মৃতির বর্ণনা করেছেন, সে বর্ণনায় তাদের যে মানুষরূপ ফুটে উঠেছে তাতে আমার মনে হয়েছে তারা শিশু গোর্কির প্রতি ছিলেন বিস্ময়কর রকম রুঢ় এবং শীতল। কখনো কেঁদে উঠতে চাইলে তার মা তাকে হুমকি দিতেন। এবং পুনরায় বিয়ে করার জন্য উতলা মা কিভাবে বাচ্চা গোর্কির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন না চাইতেও বিনা অনুযোগে, গভীর অনুকম্পার সাথে তার বর্ণনা গোর্কি দিয়েছেন ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে।

ঘন ঘন বাচ্চা নেয়ার ভারে নুহ্য মা-বাবার কাছে শিশুকালই কাটাতে পারেননি লেখক আর কে নারায়ণ। তিনি মা-বাবা ভাইবোন থেকে অনেক দূরে বড় হয়েছেন নানীর কাছে প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায়। আর কে নারায়ণ তার আত্মজীবনী মাই ডেইজ বইটিতে তার বন্ধুদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন তাদের পোষা বানর আর ময়ূরের কথা। তামিল মা-বাবার ভাষায় কথা পর্যন্ত বলতে পারতেন না তিনি! ভিন্ন ভাষা ভাষী মা-বাবার সাথে দেখা হওয়ার সে অদ্ভুত পরিস্থিতির চমৎকার বর্ণনা বইটিতে আছে।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার আগে জানতেনই না যে তার মা তাকে ভালোবাসেন। ভালো খাবার রেঁধে দিতেন না বলে মা-কে কখনো বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করতেন জসিম উদ্দিন (এর জন্য অনুতপ্ত ছিলেন)। আর তার কাছে বাবা ছিলেন যেন প্রায় অপরিচিত এক ব্যক্তি (আত্মজীবনী: জীবন কথা)। মা হিসেবে চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী হলেও চার্লি এন্ড দ্যা চকলেট ফ্যাক্টরি, মিথিল্ডার লেখক রোল্ড ডালের মা এক পর্যায়ে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং স্কুলে।

সুতরাং, মোবাইল-আসক্তি আছে এমন অজুহাতে নিজেদের জীবনের অধিকাংশ সময় নিজ সন্তানের জন্য ব্যয় করা বর্তমানকালের মা-বাবাদের সমালোচনা করা একধরণের মুখস্থ, নিম্নশ্রেণীর সমালোচক তুল্য আচরণ। সন্তানে নিবিষ্ট মা-বাবার অতি মনোযোগ সন্তানের সাধারণ বিকাশে কীরূপ বিরূপ প্রভাব ফেলছে, আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া উচিৎ বরং সেটি।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২১
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×