পাখিদের আবেগ আর উচ্ছাস থেমে গেল স্বর্ণালীর বুকে ব্যথার কাশফুল জেগে ওঠে। যেখানে এই কিছুক্ষণ আগেও প্রতিবেশিদের কোলাহল ছিলো, পাখির কূজন ছিলো। শঙ্কাকুল হয়ে পশুরা ফিরে গ্যাছে আর পাখিরা আশঙ্কায় ঝাউবনের মাথায় তাদের নিজস্ব ভাষার প্রতিবাদ করছে। প্রতিবাদের ভাষা খুব একটা খারাপ লাগে না স্বর্ণালীর।
পশু-পাখিদের এই অভয়ারণ্যই যে দিনের তারার মতো লুকিয়ে থাকার ঠিকানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে তা ভুলেও মনে পড়েনি স্বর্ণালীর। ছোট বেলায় বাবার সাথে পাখি শিকারের সময় এই ঝাউবনে এসে স্বর্ণালী শেয়ালের গর্ত দেখেছে। তার আজকের এই আশ্রয়স্থল শেয়ালের গর্তের মতো হলেও তাতে আছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
ছোটবোন পারুল সূর্যের আলো দেখবে বলে বাঙ্কার থেকে বেরোতে চাইলে স্বর্ণালী তাকে অন্ধকার রাতের গল্প শোনায়। গল্প শেষ না হতেই নীরব, নিস্তব্ধতায় নুয়ে আসে ঝাউবন। যেন এখানে এখন প্রাণহীন মানুষের বসতি।
স্বর্ণালী কান খাড়া করে তার শিশুকে বুকে জড়িয়ে শুনবার চেষ্টা করে জলপাই রঙের মানুষগুলোর পদধ্বনি। তদমুহূর্তেই পাখিরা ফড়ফড় করে উড়ে দিয়ে প্রতিরোধের ভাষা জানান দিয়ে যায় বিহ্বল উচ্ছাসে। পদশব্দ স্পষ্ট হলে শিশুর কান্নার তীব্রতাও বাড়ে। কান্নাকে রোধ করবার জন্যে শিশুকে মাতৃসুধাপানে রত রাখলে পদশব্দ স্পষ্টতা হারায়। বুটের আঘাতে কখন যে মাড়িয়ে গেছে বুকের মধ্যে লেপ্টে থাকা শিশুর প্রাণ স্বর্ণালী তা বুঝতে পারে না। বার বার জপে যাওয়া ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার কোনো কৃপাই সেদিন রা করতে পারেনি স্বর্ণালীর নিষ্পাপ শিশুকে।