জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নাম মানে শুধু জাবি শিক্ষার্থীদের দুর্নাম নয়, এটি সারা দেশের জন্য দুর্নাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য লীলাভূমি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ৪২ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এখানকার সাধারন শিক্ষার্থীদের রয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করার সফল উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সমসাময়িক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করা এই ক্যাম্পাসটির বুকে অংকিত আছে মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার প্রতীক। বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা সহস্র কৃতি সন্তানের সফল ও নামকরা ব্যক্তিত্ব হয়ে গড়ে উঠার পেছনে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগরের মাটি-বাতাসের প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ অবদান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দ্বিতীয় জন্মস্থান। জাবি ক্যাম্পাসের মাটি আমাদেরকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে, লালন করেছে। আমাদের অনুভূতি আর চেতনার প্রতিটি বিন্দুতে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাময়ী ছাপ। আমরা আমাদের মায়ের অপমান সহ্য করবো না। আমাদের প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসের নামে মিথ্যা দুর্নামের সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
প্রতিবাদ আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মে করেছি। কখনো শহীদ মিনারের পাদদেশে অনাহারে শুয়ে থেকে আমরণ অনশন করেছি, কখনো ভিসি স্যারের বাড়ির সামনে… আমাদের প্রতিবাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের সাফল্যগাঁথা ইতিহাস। আমরা প্রতিবাদ করে হেরে যেতে শিখিনি। কিন্তু সব ধরনের প্রতিবাদের ক্ষেত্র এক না। শরীরি অপমানের প্রতিবাদ হয় শরীর দিয়ে, মানববন্ধন দিয়ে কিংবা অনশন বা বিক্ষোভ দিয়ে। কিন্তু অনলাইনে মিথ্যা দুর্নামের আর গুজবের প্রতিবাদ কী দিয়ে হবে? হ্যা, অনলাইনের অন্যায় আচরণ অনলাইনেই ঠেকাতে হবে। আমাদের ক্যাম্পাসের সম্মানরক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।
কিন্তু কীভাবে? সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদ অনেকেই করেছেন তাদের নিজস্ব ফেইসবুক ওয়ালে। কিন্তু সবাই তা করতে পারেনি। অনেকে জানতেই পারেনি ঘটনা কী ঘটেছে আদৌ! কারন ঘটনাটির প্রসঙ্গ বাদে প্রায় পুরো ঘটনাটিই অনলাইনভিত্তিক। অনেকেই ফেইসবুক আইডি থাকা সত্যেও নিয়মিত লগ ইন করেন না বা সময় পান না। তাই তাদের চোখে পড়ে না অনেক কিছুই। কিন্তু যারা করেন তাদের? তারা সব দেখে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সঙ্গী বা সমর্থক খুঁজে পায় না। জনপ্রিয় ফেইসবুক পেইজগুলোতে হট হট পোস্টের শত শত হুজুগে অশালীন কমেন্টের ভীড়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েও পাত্তা পায় না আমাদের জাবি পরিবারের ভাই-বোনের সত্য কথাটি। আমি ভালোভাবেই জানি যেই সত্যি কথাটি, যেটি এই মুহুর্তেই চোখের সামনে দেখে আসলাম সেটিকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে আমার চোখেরই সামনে। কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছি না। বললেও কেউ বিশ্বাস করছে না। হুজুগে কমেন্টের ধাক্কায় ছিটকে পড়ছে সত্য, ভূলুন্ঠিত হচ্ছে অস্তিত্ব। সেই অসহায় অনুভূতিটা যে কী রকম তা যারা ঐসব পোস্টে কমেন্ট করে অপমানিত হয়েছেন তারা ছাড়া কেউ বুঝবে না। অনেকটা এরকম মনে হয় যেনো আমাকে বেঁধে রেখে আমারই ভাইকে খুন করা হচ্ছে, ধর্ষন করা হচ্ছে আমারই আপন বোনটিকে!
কিন্তু এর কার্যকারন কী?
ফেইসবুক পেইজগুলোতে হাজার হাজার ফ্যানদের সমাগম ঘটে। ছোট্ট একটি স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেয়া হলেও তা কয়েক সেকেন্ডেই হাজার হাজার ফেইসবুক ইউজারের কাছে পৌছে যায় খুব কম সময়ে। তাই জাবি ক্যাম্পাসকে জড়িয়ে মিথ্যা একটি তথ্য বিভিন্ন পেইজে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সাধারন লোকেরা জাবি ক্যাম্পাসের ভেতরের আসল সত্যটি যাচাই করতে না পেরে বেশিরভাগেরাই সেগুলো বিশ্বাস করেছে। সাধারন আর হুজুগে জনগণের গালিগালাজ দিয়ে ভরে গেছে নামসর্বস্ব ফেইসবুক পেইজের সেসব পোস্টগুলোতে। যেখানে পেইজের মোট জনসংখ্যার তুলনায় স্বভাবতই জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা খুবই নগন্য হওয়ায় তারা সফলভাবে সেগুলোর প্রতিবাদ করতে পারছে না।
আমাদের আসলে করণীয় কী?
জানি শত শত মানুষ সত্য একটি কথাকে মিথ্যা বললেও সত্য সেটা সত্যই থাকবে। কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ন্যুনতম চেষ্টাটুকু আমরা করতে পারি। এখনই সেটা করার সময়! আমরা যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করি, ফেইসবুক টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করি, তারা খুব সহজেই এটি করতে পারি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিনই ফেইসবুকে লগ ইন করেন, অনেকে সারাদিনের অনেকটা সময় জুড়েই ব্যবহার করেন। তারা এসব গুজবের তাৎক্ষণিক ও জোরালো জবাব দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। অনেকেই জবাব দিয়েছেন। কিন্তু এককভাবে। বিতর্কিত জায়গাগুলোতে তারা ঠিকই কালিমাখা হয়ে ফেরত এসেছেন টিকতে না পেরে। এটি ঘটেছে সমর্থকের অভাবে, আন্তঃ আর অন্তঃযোগাযোগের অভাবে। একটি ভালো কমেন্ট দিলেও দশটা খারাপ কমেন্টের চাপে সেটা টিকতে পারে না। তাই এটিকে সফল অনলাইন প্রতিবাদ বলা যাচ্ছে না। সফল প্রতিবাদ করতে হলে একতাবদ্ধ হতে হবে, নিয়মিত হতে হবে, সমর্থক প্রয়োজন হবে।
কীভাবে একটি পেইজের মিথ্যা একটি পোস্টের সফল প্রতিবাদ করা যেতে পারে তার একটি নমুনা দিচ্ছি। ধরুন আমরা একটি ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমে একতাবদ্ধ হলাম যেখানে ঐসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বা ফেইসবুকার থাকবে যারা প্রতিদিনই নিয়মিত ফেইসবুকে লগ ইন করে। জাবি পরিবারের ভেতরে এরকম লোকের সংখ্যা নেহাৎ কম হবে না। সর্বনিম্ন কয়েক হাজার হবে বলে আমার বিশ্বাস। যখনই কোনো ফেইসবুক পেইজে বা যে কোনো জায়গায় জাবি ক্যাম্পাসকে নিয়ে কোনো মিথ্যা অপপ্রচার বা বাজে মন্তব্য করা হবে, সেটি দেখা মাত্রই গ্রুপে যে কোনো সদস্য গ্রুপে এসে সেই খবরটি লিংক সহকারে জানাবে। তাতে গ্রুপের সবাই সেই খবরটি জানতে পারবে এবং লিংকটিতে গিয়ে দল বেধে মন্তব্য করে আসতে পারবে। তাতে অন্তত লোকেরা আমাদেরকে একা আর অসহায় ভাববে না। আমাদের কমেন্টগুলো চাপা পড়ে যাবে না, অবজ্ঞা করা হবে না। সত্য কথা ঢেকে দিতে কয়জনের কমেন্ট ডিলিট করবে ওরা? একটা জনপ্রিয় ফেইসবুক পেইজের হট একটা পোস্টে কতোগুলো মন্তব্য পড়তে পারে? একশো-দুইশো। আমরা জাবি পরিবারের মধ্য থেকে এর কয়েকগুণ বেশি সংখ্যক একটিভ ফেইসবুকার পাওয়া যাবে খুঁজলে। তাদের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশই যথেষ্ট এসব অপপ্রচার আর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সফল প্রতিবাদের জন্য।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্ট সিনিয়র একজন স্টুডেন্ট হিসেবে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা থেকেই একটা পাকনামো করে ফেললাম। অনলাইনভিত্তিক সকল সামাজিক গণমাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সকল ধরনের নেতিবাচক সমালোচনার বস্তুনিষ্ঠ জবাব দেয়া, ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক বিভিন্ন তথ্যের যৌক্তিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ, প্রাক্তন ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইন ঐক্য তৈরী এবং সংরক্ষনের উদ্দ্যেশ্যে গ্রুপটি তৈরী করা হলো। জানি না কতোটুকু সফলতা আসবে এর মাধ্যমে। তবু আমি আশাবাদি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ জাবি পরিবারের সকল সদস্যকে আহ্বান জানাই ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি আর বৈষম্য সকল কিছুর উর্ধে শুধু জাহাঙ্গীরনগরের প্রাণের টানে এই গ্রুপটিতে জয়েন করে আমাদের অনলাইনভিত্তিক অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য। আর যারা নিয়ইত ফেইসবুকে লগ ইন করেন, বিভিন্ন ব্লগে লেখেন তাদের কাছে আহ্বান নয়, অধিকার থেকেই আবদার রইলো কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য। এটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠির আবদার নয়, এটি আমাদের মায়ের আবদার, আমাদের অস্তিত্বের আবদার। এগিয়ে আসুন, আরেকবার দেখিয়ে দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুধু মাঠেই প্রতিবাদ করতে জানে না, অনলাইনেও পারে… প্রতিবাদে গর্জে উঠুন! জাহাঙ্গীরনগর চিরজীবি হোক!!!
লিখেছেন Nahid Frozen Grave-dweller
সামুতে তেনার অবস্থান না থাকায় আমার আইডি থেকে শেয়ার দিলাম।
ধন্যবাদ নাহিদকে ।
বর্তমান ও সাবেক সকল জাহাঙ্গীরনগরিয়ানকে এই গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি.।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৭