ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম এবং বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করে!
-দাবী করে?!
জ্বি হ্যাঁ... কারণ তারা শান্তির ধর্মকে অশান্তির কাজে সবচেয়ে বেশী ব্যাবহার করে। আর তার মূল কারণ তাদের অতি উচ্চ ধর্মান্ধতা এবং ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা।
এদেশের মুসলিমদের বেশীরভাগই ‘শুইনা মুসলমান’। ‘আমার বাবা মুসলমান, তাই আমি মুসলমান’ এই নীতিতে তারা বিশ্বাসী। ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা এবং যেকোন ধর্ম যে জানার,বুঝার এবং গবেষণার ব্যাপার এই বিষয়ে তাদের কোন ধারণাই নেই। তাই তারা তার আশেপাশের গুরুরুপি গরুদের কাছে যাই শুনে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। আর তাদের এই অজ্ঞতাই উপমহাদেশে ইসলামের অধঃপতনের মূল কারণ।
এদেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের কুসংস্কারপ্রীতি এবং ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা। আর এজন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী এদেশের তথাকথিত কিছু পীর ও আলেম-ওলামারা। যেমন-
** ছোটকাল থেকে আমাদের শিখানো হয়, ‘অন্য ধর্মের লোকদের সাথে উঠা-বসা কিংবা মেলামেশা করা যাবে না’
-সিরিয়াসলি?! ভাই, তাহলে ইসলাম টা প্রচার করবো কার কাছে?! আমাদের নবী ও সাহাবারা কি মুসলমানদের কাছেই ইসলাম প্রচার করেছিলেন?!
** যে কোন রহস্যময় ঘটনাকেই তারা সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা বলে চালিয়ে দেয় এবং এর পিছনের কারণ কিংবা যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করে না। ফলে ধর্মের যৌক্তিক ব্যাপারগুলোকেও তারা অযৌক্তিক বানিয়ে ফেলে।
** মুসলমান ব্যাতিত অন্য সবাইকে তারা শত্রু মনে করে। ধর্ম প্রচারে শত্রুতা নয়, বন্ধুত্বটাই সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন এই সহজ ব্যাপারটা তাদের উর্বর মস্তিষ্কে আঁটে না। শত্রু তাদেরই বলা হয় যাদের বধ করতে হয়। শান্তির পথে আনতে যে বন্ধুত্বকেই বেছে নিতে হবে এটা তাদের বুঝাবে কে!!
** বাঙালি মুসলমানেরা জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে। আর এ কারনেই কয়েক যুগ ধরে ‘পীর’ কথাটা বললেই ‘ভণ্ড’ কথাটা আপনাআপনি চলে আসে, আর ‘ভণ্ড’ বললেই ‘পীর’ আসে। আজকালতো একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়, দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। ‘ভণ্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ভণ্ড পীর’ বোঝায়! পীরের প্রতি তাদের যেই ভক্তি, তার অর্ধেকও যদি ধর্মের প্রতি থাকতো তাহলে আজ মুসলমানদের এই অবস্থা হতো না।
** শান্তির কথা বলে নিজেরাই মন্দির ভাঙে, এমনকি মসজিদও ভাঙে! ‘লাকুম দ্বীনুকুম অলিয়াদ্বীন’ এই আয়াত টা যেন তারা কখনোই পড়েনি। তারপরও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক, আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তাদের বলে অধার্মিক বা নাস্তিক। বড় জেহাদ টাকে ভুলে গিয়ে তারা ছোটটা নিয়ে লাফালাফি করে। এরা বিধর্মীদের বুঝানোর পরিবর্তে হত্যার নির্দেশ দেয়!
** এরা ‘ফরযের খবর নাই, সুন্নত নিয়া টানাটানি’ এই নীতিতে ভয়ংকর ভাবে আসক্ত। ইসলামি ভ্রাতৃত্য বাদ দিয়ে এরা, কে কোথায় হাত বাধে, কে কোট-টাই পরে, তারাবী কয় রাকাত আর কে চেয়ারে বসে ভাত খায় এগুলা নিয়ে সারা বছর মারামারি করে!!
আমি বলছিনা যে সবাই এমন কিংবা সবক্ষেত্রে এমনটাই ঘটে। অনেক্ষেত্রে এগুলোর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেলেও বর্তমানে আমাদের সমাজে সংস্কারের চেয়ে কুসংস্কারের আধিক্যটাই বেশী। আর এর প্রধান কারণ আমাদের অসহনশীল আচরণ এবং ধর্মের প্রতি উদাসীনতা। তাই আসুন যে কোন ব্যাপারকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে যথাসম্ভব যাচাই করে পদক্ষেপ নিই।
বিঃদ্রঃ ইহা নিতান্তই আমার নিজস্ব চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আর যেহেতু, ম্যান ইজ মরটাল – মানুষ মাত্রই ভুল! তাই যে কোন প্রকার যৌক্তিক সংশোধনী গ্রহণযোগ্য।
চলবে...