somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন কাহিনী ৩ - চট্টগ্রাম অভিযান

০৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
যেভাবে শুরু হলো

সামনে ইংরেজি নববর্ষ ২০১৩।
৩১শে রাতে কি করা যায় এই নিয়ে ফেসবুকে তুমুল চ্যাট হচ্ছে রাব্বির সাথে। হ্যা বিশিষ্ট লজিকবিদ হিসাবে তাকে আমরা চিনি। সব কিছুর পিছনে লজিক দিয়ে বেড়াবে। মেসি কেনো বিশ্বের সেরা ফুটবলার না এ ব্যপারে তার লজিক শুনলে মনে হবে আহঃ বেচারা মেসি কেনো জন্মালো, আর জন্মাবিই যদি হতচ্ছাড়া বার্সেলোনায় কেনো ফুটবল খেলতে এলি? ফেনী সকার দলের হয়ে খেললে বোঝা যেত কতবড় প্লেয়ার তুই! তো এই লজিক্যাল বন্ধুর সাথে ঠিক হল ৩১ শে রাত উদযাপন করা হবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আর আমাদের সাথে আরো একজন যাচ্ছে ওঁ হল সেফটি ব্যাংক টেনিদা।

টেনিদা ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে প্রচুর টাকা কামিয়েছে। এই টাকার একটা সুষ্ঠ ব্যাবহারতো হওয়া চাই আর তা ছাড়া এ দেশের পর্যটন শিল্পেরও তো এই টাকার উপর একটা হক আছে! কাজেই যাওয়া যাক কক্সবাজার। এই উপলক্ষে তিনি পাঁচ হাজার টাকার শপিং করে বসলেন, বিদেশ সফর হলে গোটা নিউমার্কেট কিনে ফেলতেন কিনা কে জানে!

আমি গোঁফওয়ালা। ট্রাভেলিং এর ব্যাপারে মোটামুটি না করতে পারি না। মালাকোচা দিয়ে নেমে পড়লাম কক্সবাজার যাওয়ার আয়োজনে। ভালো প্যারা গেছে আমার আর লজিকের উপর টিকিট পেতে। বহুকষ্টে টিকিট ম্যানেজ করে অবশেষে আমরা কল্যানপুর বাস স্ট্যান্ডে। টেনিদা ফুরফুরে মেজাজে এক প্লেট তেহেরী খেয়ে চিপস, এনার্জি ড্রিঙ্কস ট্রিঙ্কস নিয়ে ফুল বাবু সেজে বাসে উঠলেন।বাসে উঠে টেনিদা সহ আমাদের মনের অবস্থা তখন টুহু টুহু। আনন্দে কি করি তার ঠিক নাই। যা হোক ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ রাত এগারটায় তীব্র শীতের মধ্যে শুরু হল আমাদের যাত্রা।

দুই
শীতে ধরাসয়ী হওয়ার পর

সারা রাত তীব্র শীতে প্রেসার-প্যারা (এই শব্দ দুইটা পরে আমার মুদ্রাদোষে পরিনত হয় :পি) শব্দগুলো টেনিদা মোটামুটি নামতার মত বলছিলেন। বাস কুমিল্লায় এসে একটা ব্রেক নেয়। গা-হাতপা চাঙা করার জন্য টেনিদা আর লজিক বাস থেকে নামার পর কুয়াশায় আমি আর ওদের খুঁজে পাই না, অথচ তারা আমার থেকে বড়জোরএক হাত দূরে। ভয়ানক অবস্থা, সারা রাত কুয়াশা আর শীতে ঠক ঠক করে কাপতে কাপতে সকালে চিটাগং এসে পোছলাম। ওদের কার কি অবস্থা জানি না, প্রায় এক দশক পর আমার শৈশবের শহর চিটাগং এসে আমি স্বাভাবিক ভাবে প্রচণ্ড উৎফুল্ল (এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না)। তাছাড়া ট্রাভেলিং এর একটা মজাতো রয়েছেই সে যতই শীতের কাছে নেট রান রেটে হারি না কেনো।

যা হোক ব্রেকফার্স্ট করা দরকার, পেটে ছুচো ডন দিচ্ছে। এক জরুরী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল সকালের নাস্তার দায়িত্ব লজিকের, দুপুরেরটা টেনিদার আর আমার রাতের।সকালে এক হোটেলে আমার নাস্তা করলাম তেহেরী। সত্যিই অসাধারন, ঢাকার তেহেরী থেকে এটা ভিন্ন। কিন্তু বড় ধাক্কা খেলাম চা খেতে যেয়ে, এ ব্যপারে কোড অব কন্ড্যাক্ট এর কারনে আর কিছু বললাম না। তবে শুধু এটুকু বলতে পারি কেউ চিটাগং গেলে এ জিনিস খাওয়া ফরজ। নাস্তার পর টেনিদা বেশ চাংগা হয়ে উঠেছেন, দাঁত ঘষতে ঘষতে ঘোষনা করলেন এবার একটা হোটেল ম্যানেজ করে দু ঘন্টা ঘুমোতে পারলে দু-তিন রাত জেগে থাকা তার জন্য কোন ব্যপারই না। রাতের পর রাত গেম খেলে কাটিয়ে দিলাম আর এতো নস্যি। ভালো কথা এর মধ্যে এম কে ভাই এসেছেন (লজিক আর টেনিদার পরিচিত) আমাদের সাথে দেখা করতে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে হোটেল পাওয়া নিয়ে বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার না ঘটলে ঠিক জমে না। কিন্তু সবাইকে কাঁচকলা দেখিয়ে প্রথম যে হোটেলে ঢুকলাম তার ম্যানেজার চাবি গছিয়ে দিল! টেনিদা দাঁত কেলিয়া বললেন যাহ! বাবা আমি তো ভাবলাম কত প্যারাই না যাবে।

তিন
চট্টগ্রাম

টাইগার পাসের (চট্টগ্রাম) হোটেলটায় বেশ একটা ঘুম দিয়ে দুপুর ২ টা নাগাদ উঠলাম। ছোট খাট একটা হিল ট্রেকিং শেষে মন মত একটি রেস্তরা খুঁজে বের করা হল দুপুরের খাবারের জন্য। তবে শব্জি, ছোট মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে এবেলা ঠিক জমলো না। টেনিদাতো খাবার খেয়ে ছ্যা ছ্যা করতে লাগলেন।

একটা সিএনজি ঠিক করা হল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য। ইতোমধ্যে আমাদের চিটাগং টু কক্সবাজারের টিকিট কনফার্ম করা হয়ে গেছে। সিএনজি তে বসে টেনিদা বেসুরো গলায় গান ভাঝছেন আর বলছেন কি শহর মাইরি সমুদ্রও আছে আবার পাহাড়ও আছে! এদিকে লজিক তো জীবনের প্রথম সমুদ্র দেখার উত্তেজনায় টগবগ করছে। আর আমি আমার পরিচিত শহর দেখে নতুন করে রোমাঞ্চিত, পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের নোনা বাতাসেরগন্ধ সত্যিই অসাধারন।

পতেঙ্গা বীচে নেমে তো আমরা রীতিমত হাওয়ায় ভাসছি। বীচটা আকারে ছোট হলেও এর একটা সাঙ্ঘাতিক আবেদন আছে। ঢেউ আর গর্জনে মিলেমিশে একাকার-সত্যি এর তুলনা হয় না কোন কিছুর সাথে। তাড়াতাড়ি কেডস-মোজা খুলে নেমে পড়লাম পানিতে, ওদিকে টেনিদা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বন্দুক নিয়ে। আসে পাশের জড় হওয়া লোকজনের দেখানো টার্গেটে বেলুন ফাটাচ্ছেন। সব যে লাগছে তা না তবে টেনিদা মুখে এমন একটা ভাব ফুটিয়ে রেখেছেন যেন নেহাত বেড়াতে এসেছেন দেখে ইচ্ছে করে লাগাচ্ছেন না, অন্যথায় এসব তোতার কাছে ডাল-ভাত

আমরা যখন জলকেলি-টেলি করে সৈকতে এলোপাতাড়ি হাটাহাটি করছি তখন আবির্ভাব ঘটে চতুর্থ মূর্তির। ওর নাম আবু সায়ীদ রুমি (স্কুল ফ্রেইন্ড), এখানে একটা পেট্রোল কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনাটা হচ্ছে। রুমিকে আগেই বলা ছিলো, ও প্রায় সন্ধ্যায় আমাদের সাথে যোগ দেয়।

চার
সমুদ্র সন্ধ্যা

সন্ধ্যায় আসলে সমুদ্র তীরের আসল মজা। ডুবন্ত সূর্যের লাল আভা আর সমুদ্রের গর্জন-উফ! ভাবা যায় না। কেমন একটা স্পেশাল ইফেক্টস দেওয়া ফিল্মি আবহাওয়া। যা হোক একই রকম পোজে প্রায় ১৭ খানা ছবিতোলা শেষে টেনিদা ঘোষনা করলেন সমুদ্র দেখতে এসে বিয়ার না খেলে ঠিক জমে না, আসল বাহাদুরী তো এখানেই! কাজেই সমুদ্র তীরের দোকান গুলোতে খোঁজ লাগানো হলো। বেশিরভাগ দোকানই ঝিনুকের জিনিস আর আচারে ঠাসা, খাবারের দোকানতো আছেই।

সমুদ্রের তীরে খোলা আকাশের নীচে চেয়ার টেবিল দিয়ে পাতানো এসব দোকানে বসলে বেশ একটা ভাব এসে যায়। ১০০০ টাকায় দুটো বিয়ারের ক্যান আনা হলো, সাথে কাঁকড়া আর পেঁয়াজু। আহ! এখানে দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত কাটানোর পর আমরা গেলাম নেভাল একাডেমীর ওদিকে। ওখানে আরো কয়েক রাউন্ড কাঁকড়া খাওয়ার পর শহরে ফিরে আসার পালা।

চট্টগ্রামের হালিশহরে আমরা আসলাম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। মোটামুটি নামকরা এক রেস্টুরেন্টে ঢুকা হলো চিটাগং এর রুট খাবারের আসায়। ভাত, কয়েক রকম সামুদ্রিক মাছ আরশুটকির অর্ডার করা হলো। ভরপুর খাও্লা-দাওয়ার পর আবার চা! খেয়ে আমারা টাইগার পাসে আমাদের হোটেলে ফিরে আসলাম। প্রচন্ড ক্লান্ত আমরা। এখন রাতে একটা সলিড ঘুম দরকার, কারন সকালে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে যাত্রা :)


টাইগার পাস (তিন লেয়ারের রাস্তা)


৫/১০ বছর আগেও এত স্পীডবোট ছিল না এই সৈকতে।


সূর্যাস্ত।

পূর্বের ভ্রমন কাহিনীঃ
ভ্রমন কাহিনীঃ ২ লালন আখড়া অভিযান ২০১২
ভ্রমন কাহিনীঃ ১ ডায়েরীর পাতা থেকে (সুন্দরবন ভ্রমন)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×