somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাবি শিক্ষার্থী প্রতীকের আত্মহত্যা : আমার নিজস্ব কিছু অভিব্যাক্তি

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতীকের আত্মহত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনা , যদিও পত্রিকায় বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখেনি কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পত্রিকা গুলোর উচিত ছিল অনুসন্ধানী রিপোর্ট চালানো ।

প্রতীক ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশাবাদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সম্মান শ্রেণীর ছাত্র , মেধাবী এই শিক্ষার্থী অনার্স এ ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিল , হয়তো তার বুকভরা আশা ছিল আরো সামনে যাবার , ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কিংবা আন্তর্জাতিক মানের বড় কোনো গবেষক হবার । কিন্তু প্রতীকের জীবন এখানেই নিভে গেলো , প্রতীকের বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদার ভাষ্যমতে , প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হবার পরেও তার বিভাগ থেকে তাকে মাস্টার্স লেভেলে থিসিস এর সুযোগ দেয়া হয়নি যা ছিল সুইসাইডের মূল কারণযা ছিল সুইসাইডের মূল কারণ । কি অদ্ভুত দেশ আর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের !!!!

আপনাদের যাদের ধারণা আছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি সম্পর্কে তারা নিশ্চয় জেনে থাকবেন এই সাবজেক্টটি অত্যন্ত উঁচু মানের একটি বিষয় ।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একদম সামনের দিকের অর্থাৎ প্রথম ত্রিশজন শিক্ষার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হয় এই সাবজেক্ট পাবার জন্য ।বিষয়টি সম্পূর্ণ গবেষণাধর্মী এবং সম্ভবত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ এই সাবজেক্টটি প্রথম চালু হয় নব্বই এর দশকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ খুব সম্ভব ২০০০ সালের দিকে এই বিভাগ খোলা হয় ।মূলত বিভাগ থেকে পাশ করা বড় সংখ্যার শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চলে যেত আগে এবং এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে , তবে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে বেশ কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখানে বায়োটেক গ্রাজুয়েটরা বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছে ।

কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে এই সবকিছুর সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক কোথায় ??? বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র হচ্ছে প্রতিবছর বায়োটেকনোলজি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীর তুলনায় কর্মক্ষেত্র একেবারেই সীমিত । বেসরকারি সেক্টরে সুযোগ নেই বললেই চলে , হাতে গোনা কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে যেমন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি , এটমিক এনার্জি কমিশন কিংবা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অথবা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সবখানেই সীমিত কিছু পদ এই বিভাগ থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েটদের জন্য বরাদ্দ , এবং আবেদনের প্রথম শর্তই হচ্ছে অনার্স এবং মাস্টার্স এ ফার্স্ট ক্লাস এবং থিসিস থাকা আবশ্যক !!!

প্রতীককে এইসব কিছুই তাড়া করে ফিরেছে , সে দেখেছে থিসিস ছাড়া সে না পারবে কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে না পারবে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কোনো চেষ্টা করতে কারণ সকল বিদেশী স্কলারশিপের জন্য থিসিস এবং থিসিস এর গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে গ্রহণযোগ্য মানের পাবলিকেশন্স আবশ্যক , থিসিস না পেলে সে কোনোমতেই তাৰ কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে না । আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া তো তো বলাই বাহুল্য ।সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তার বিভাগের শিক্ষকের কাছে তার থিসিসের সুপারভিশন নেবার জন্য কিন্তু তারা রাজি হয়নি , কিন্তু কি কারণে বিভাগের প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীর সুপারভাইসর কেউ হতে চাইলো না তা রহস্যজনক !!! প্রতীক এই চাপ হয়তো সামলাতে পারেনি , ফলাফল তীব্র হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নিজেকে মৃত্যুর কাছে সমর্পন ।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্বন্ধে আমার মন্তব্যের আর কিছুই নেই ।থিসিসের সুপারভিশন খুবই সামান্য একটা ব্যাপার , আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা বেশিরভাগ সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সুপারভিশন নিয়ে শিক্ষার্থীকে পাঠিয়ে দেয় বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় যেমন আইসিডিডিআরবি , বিসিএসআইআর কিংবা এটমিক এনার্জি কমিশন । সেখানে একজন কো-সুপারভাইজার যিনি সেই প্রতিষ্ঠানের একজন উর্ধতন বিজ্ঞানী তার অধীনে থিসিস করে এবং থিসিস লেখার কাজ ও সে সম্পাদন করে , কোনো কোনো সময় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারভাইসর থিসিস এ কি কাজ হয়েছে তা জানেওনা এমনকি থিসিসটি পরেও দেখেনা , কিন্তু সুপারভিশন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ থেকে তাকে সম্মানী দেয়া হয় যা সে ঠিকই তুলে নেয় ।বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের থিসিস সুপারভিশন খুবই সামান্য এবং কষ্টবিহীন একটা দায়িত্ব , তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের নিজেদের তত্ত্বাবধানে যত্নসহকারে ছাত্রকে থিসিস করে তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন কিন্তু শতকরা নব্বইভাগ ক্ষেত্রেই এর উল্টো দেখা যায় ।

প্রতীকের আত্মহত্যার জন্য তার বিভাগের শিক্ষকরা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেনা ।অনুমান করা যায় প্রতিকের তার বিভাগের শিক্ষক হবার ইচ্ছা ছিল ,কিন্তু সে তার শিক্ষকদের পছন্দনীয় প্রার্থী ছিল না , সে কারণেই তার শিক্ষক হবার পথে বাধা তৈরির জন্যই সুপারভিসনে অনাগ্রহ , এই দায় থেকে কোনোভাবেই তার শিক্ষকদের মুক্ত করা যায় না ।

সবশেষে প্রতীককে বলছি , বাংলাদেশের মত একটা দরিদ্র দেশে অনেক সময় আর অর্থ খরচ হয় তোমার মত একেকজন প্রতীক তৈরী হতে । অজস্র মধ্যবিত্ত পরিবারের কষ্ট আর ত্যাগ জড়িত থাকে তোমার মতো একজন প্রতীক তৈরী হবার পেছনে । পৃথিবী থেকে চলে গেলেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায়না । তোমার দিকে তোমার পিতামাতা তাকিয়ে ছিল , তাদের একবুক আশা ছিল তোমাকে ঘিরে , তাদেরকে এভাবে কষ্ট দিয়ে তোমার যাওয়া ঠিক হয়নি ।কঠিন পরিস্থিতির সামনাসামনি হতে হয় , জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে হয় , নিজেকে শেষ করে দেয়া কাপুরুষের কাজ ।

আর কোনো প্রতীকের এভাবে চলে যাওয়া দেখতে চাইনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×