somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি পরিবার ও পরিবারতন্ত্র , মন্ত্র এবং যন্ত্র _ কিছু সিরিয়াস কথা !

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একখান সিরিয়াস কথা দিয়া শুরু করবার চাই । কথাটা সোভিয়েত শ্বৈত্যপ্রবাহের মতই সইত্ত্য । বঙ্গদেশে জন্মগ্রহন করিয়া যেসব বঙ্গপুত্র -কন্যারা নিজেদিগকে এক হাজার ভোল্ট ফ্লুরশেণ্ট বাতির মতো উজ্জ্বল -সৌভাগ্যবান নক্ষত্র ভাবিয়া থাকেন আমি তাহাদের দলে নহি । আমি সেই হতভাগাদের গোত্রভুক্ত যাহারা সমাজ ও প্রচলিত প্রথার রঙিন চশমা খুলিয়া রাখিয়াছে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের নোংরা ব্যাবচ্ছেদ প্রত্যক্ষ করিয়া হতাশার ড্রেনে খাবি খাচ্ছে । দুঃখের বিষয় হইল সাধারণ লোকেরা আমাদিগের এই চশমা বিসর্জনকে উদ্যত জ্ঞান করিয়া থাকে । তাহারা ভাবিয়া থাকে আমরা জ্ঞান বৃক্ষের ভাঁড়ে ন্যুব্জ কড়ল্লা গাছ , যাহাদের মাঝেমইদ্দে চেকে দেখা উচিৎ , নিয়মিত নহে ।

অত্যন্ত ঔদত্তের সাথেই বলিতেছি আমরা অন্যান্যদের চাইতে _ অসাধারণ ! এই অসাধারণত্বের সাথে সাধারণত্বের মৌল পার্থক্য হইল একটাই ! অসাধারণরা জানে এবং একই সাথে মানে যে আমরা একখান ভুল সিস্টেম এর মইদ্দে আছি এবং এই সিস্টেমের একখান মৌলিক পরিবর্তন দরকার । আর সাধারণ মানুষরা সিস্টেমকে মাইনা নেয় । তাহারা আশা করিয়া থাকে কোন মহামানব আসিয়া তাহাদের দুঃখ - কষ্ট লাঘব করিয়া যিশুর মতো বুক পাতিয়া দিবে ।

মোদ্দা কথা হইল , সাধারণের খোলস ছাড়িয়া উঠার চেষ্টার নামই - অসাধারণত্ব ! আমার ভাবিতে ভালো লাগে যে , আপনিও একজন অসাধারণ মানুষ ।

যাহারা আমার এই বক্তব্যের আধ্যাত্মিক ( ! ) মাজেজা বুঝিতে ব্যর্থ হইবেন তাহাঁরা আমার চরিত্রের সাথে ঔদত্তের কালিমা লেপনে প্রস্তুত হইতে পারেন । তাহাদিগকে আমি বলিব _ এ সবি আপনাদিগের একান্তই ব্যক্তিগত আবিলাশ !

কথায় আছে , বারো হাত কাকুরের তেরো হাত বিচি ! কথা কইবার চাইছিলাম এই দেশের মহান পরিবারতন্ত্র নিয়া । অপ্রাসঙ্গিক ভুমিকার সাইজটা নয়মাসি পোয়াতি বিবির সাইজ হইয়া গেল । সুরি ।

আমরার পরিবারগুলার সাথে এরশাদ আমলের বাংলাদেশের একখান প্রতিসম সাদৃশ্য আছে । এই দেশের পরিবার গুলা একনায়কতান্ত্রিক এবং স্বৈরশাসিত । স্বেচ্ছাচার এই দেশের পরিবার গুলার ব্রিটিশ সংবিধান । এইখানে দরিদ্র , অসহায় , প্রলেতারিয়েত সম্প্রদায় হইল পরিবার প্রশাসকদের পুত্র - কন্যারা ! জন্মের পরেই তাহাঁরা পরিবার নামক এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের ফেসিস্ত ডিকটেটর এর হাতের পুতুলের মতো বড় হইতে থাকে । এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আদর- যত্ন মিলিলেও_ স্বস্থি যৎকিঞ্চিত ই মিলিয়া থাকে । কিয়ৎখানেক বড় হইবার সাথে সাথেই পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি উহার প্রলেতারিয়েতদের স্কুল - কলেজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিতে আপনা সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করিয়া অভাবনীয় সাফল্যের প্রতিক্ষা করিতে থাকে । কেউ কি তাহাদের একবার বলিবে , প্রথমস্থান অধিকার করিবার উদ্দেশ্যে , কষিয়া খাতা ভরিয়া , পুস্তক ছিঁড়িয়া , মস্তিষ্কের সৃষ্টিশীল অংশটার ঘড়িতে বারো 'টা কে দাগাঙ্কিত করা যে এক মস্ত বড় অমানবিক অসভ্যতা ? নাহ । আমি উহা বলিতে ইচ্ছুক নহি ।
সংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারতন্ত্র এই দেশে হাঁটু দাবিয়ে বসিয়াছে । এই পরিবারের মোড়ল কর্তাবাবু । তাহার ইচ্ছাই _ ম্যাগনা কার্টা ! তাহার সন্মানবোধই _ পুত্র-কন্যাদের কেপিলারি ট্র্যাক ! কোথায় গনতন্ত্র ! সেলুকাস ! কন্যা হইলে আপনাকে এপ্রন পরিতে হইবে এবং পুত্র হইলে কাধে টি - স্কেল ঝুলাইতে হইবে _ ইহা যেন বাইবেলের অধ্যাদেশ ! কেন রে বাবা ! আপনার পুত্র কি জন লেনন হইতে পারিত না ? কাফকা , গাভাস্কার , বচ্চন , ফাইনম্যান , দালি , ওয়াশিংটন বা চে' হওয়ার চেষ্টা কি অপরাধ নাকি অধর্মীয় ?

হাতে ছয় স্ট্রিং , কিবা রঙের তুলি নেয়া ঝাঁকড়া চুলের ওই বিস্ফোরক তরুন কি কেবল টি - স্কেল কাধে না নেয়ার অপরাধে পরিবারচ্যুত হইবে !আউট বই নামে সৃজনশীল শিক্ষণের যে অসাধারণ অংশটিকে পরিবার উহার পোস্যদের নিকট তেতুলের মতো তেঁতো প্রতীয়মান করিবার চেষ্টা করিয়া থাকে , তাহাকে আমি কি বলিব ? শাসন ? নাকি সৃজনশীলতার মার্ডার ? মানুষ হত্যার বিচার হয় , সৃজনশীলতা হত্যার কি কোন বিচার নাই ?

নাহ । আমি দোষের রাজনীতি করিবার উদ্দেশ্যে বসিনাই । যাহা ভুল আমি স্রেফ তাহার কথাই উচ্চকিত হইয়া উগ্লে দিচ্ছি । এই দেশে পারিবারিক শাসন ' নামক যে নাৎসি প্রথা চালু আছে , উহাকে সবাই ফলদায়ক বৃক্ষের মতই চমকপ্রদ মনে করিয়া থাকে । তাহাঁরা বলিয়া থাকে উহা আছে বলিয়াই নাকি তাহাদের তথাকথিত সু- সমাজ টিকিয়া আছে । আমি তাহাদের জিজ্ঞাসা করিতে চাই _ আপনাদের এই তথাকথিত পদ্দতি কতজন আইনস্টাইন বা তলস্তয়ের জন্ম দিতে পারিয়াছে ? আমি জানি এই প্রশ্ন শুনিয়া উনারা কতক বিদ্যাপতিতা দামি কেরানীর নাম লইবেন , মানব সমাজের অগ্রগমনে যাহাদের কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভুমিকা নাই । আমি পরিবারের শাসন এর বিপক্ষে নহি , আমি স্রেফ একনায়কতন্ত্রের বিপক্ষে , গণতন্ত্রের পক্ষে । সিদ্ধান্ত লইবার পূর্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করিবার অধিকার সবার থাকা উচিৎ ।

আমরা এখন যে নিয়মের মইদ্দে বাস করিতেছি তাহা উহার পূর্বেকার নিয়মের ধ্বংসাবশেষের উপর দণ্ডায়মান । কাজেই , ভবিষ্যৎকে গড়িতে হইলে বর্তমানকে ভাঙিতে হইবে । এর কোন বিকল্প নাই । পরিবার গুলা নিউট্রন নক্ষত্রের মতো , উহার প্রশাসকদের প্রবল জ্ঞানগম্মির ভাঁড়ে যে বিপুল গ্রেভিটি তৈয়ার হয় তাহার টানে প্রতিভার আভা কখনোই নক্ষত্র সদৃশ পরিবার গুলা ছাড়িয়া বের হইয়া আসিতে পারেনা । কাজেই আমরা একখান হ্যান্ডিক্যাপ প্রজন্ম যারা আরেকখান হ্যান্ডিক্যাপ প্রজন্ম জন্ম দেয়ার অপেক্ষায় আছি ।

আমাদের দেশের পরিবার গুলোকে আরও অধিক গনতান্ত্রিক আচরন করিতে হইবে । পুত্র - কন্যারা কি চায় তাহা বুঝিবার সক্ষমতা অর্জন করিতে হইবে । মা ! বাবা ! উনারা সব বুঝেন , এই টাইপের ম্যাটাফিজিক্যাল কথা বার্তা ডিলিট মারিতে হইবে । আফটার অল , আমরা দুইখান আলাদা প্রজন্ম । জেনারেশন গেপ বলিয়া একখান কথা আছে । হয় গ্যাপ ফিল কর নতুবা গ্যাপ মানিয়া নেন । মাঝামাঝি বলিয়া কোন অপশন থাকিতে পারেনা ।

পরিবার প্রশাসকদের প্রতি দুঃখময় ভালবাসা ।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×