করোনা ভাইরাসের এই প্যানডেমিক্যাল সময়ে বিশ্বজুড়ে রীতিমতো ক্যাওস শুরু হইছে।চীন থেইকা শুরু হওয়া মাস্টার পারসুয়েডর ট্রাম্পের ভাষায় “চাইনিজ ভাইরাস” টি চায়না থেকে বেরিয়ে বাকি দেশগুলিতে হানা দিয়েছে।চীন কোরিয়া সহ কিছু দেশ মোটামুটি ক্ষতি সামাল দিতে পারলেও ইতালি রীতিমতো ধ্বংসের পর্যায়ে, স্পেন খাবি খাচ্ছে, আর ইরানের প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে উপরওয়ালার কাছে চলে যাচ্ছে।
গোটা বিশ্ব লকডাউন। অর্থনীতি মারা খেয়ে শুয়ে আছে। মহামারি পরবর্তী মন্দা দেখা যাওয়ার সকল আলামত স্পষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দুষন কমার কারনে পরিবেশও ভাল হইতে শুরু করছে।আর স্টুপিডদের স্বর্গরাজ্য বাংলাদেশের স্টুপিড পিপলদের মধ্যে উটপাখি সিনড্রোম দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য এই জাতির উটপাখি সিনড্রোম তথা পেইন এভয়েডিং সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল সেই আদ্যিকাল থেকেই আছে। বছর বছর বন্যা, খরা,প্রাকৃতিক জলোচ্ছাসের মুখোমুখি হতে হতে এই জাতি ভেবে নিয়েছে যে কোন কিছুই এদের কিছু করতে পারবে না। এই নচ্চার করোনা আবার কোন ছার!
উঠপাখি সিন্ড্রোম আদতে কি? মরুভুমিতে যখন ধুলিঝড় হয় তখন উটপাখি নিজের মাথাটা বালিতে গুঁজে রাখে। নিজের মাথা বালিতে গুঁজে সে এই ধুলিঝড় থেকে নিজেকে বাঁচাচ্ছে এমনটা নয়। নিজের মাথাটা বালির মধ্যে গুঁজে রেখে সে সিচুয়েশনটাকে অস্বীকার করার চেস্টা করে।ধুলিঝড় থেকে বাঁচার জন্যে নিরাপদ আশ্রয়ে না গিয়ে, ধুলিঝড় যে আসছে এই ব্যাপারটাকে অস্বীকার করে বাঁচতে চাচ্ছে। আমাদের আশেপাশেও এরকম অনেক মানূষই দেখে থাকবেন বিশেষত স্টুপিডপ্রধান দেশ হওয়ায় আরো বেশী দেখে থাকবেন, যারা সমস্যা সামনে এলে একে মোকাবেলা করার চেস্টা না করে, সমস্যা যে আছে এইটা অস্বীকার করে যায়।ওই উটপাখিটির মতো বালিতে মুখ গুঁজে রাখে।
যারা এরকম করে তাদেরকে আমি উটপাখি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বলে ধরে নেই। এর গালভারী নাম হলো পেইন এভয়েডিং সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল।
এই করোনার ভাইরাস যেখানে বিশ্বব্যাপি মহামারি আকারে ধারন করছে এবং অলরেডি বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ এই সমস্যাটারে অস্বীকার করে বালিতে মুখ গোঁজা উটপাখিরত মত আচরণ করছে।
শুধু তাই নয়, স্টুপিড দেশের স্টুপিড সরকার নিজেও এই উটপাখি সিন্ড্রোমে জর্জরিত, তবে আমি সরকারের ব্যাপারে কিছু বলবো না,কারন সবাই জানে,কেন বলবো না। তাই সরকারকে বাদ দিয়ে মানুষদের কথাই বলি, যারা নানা উপায় অবলম্বন করে এই সমস্যাকে সমস্যা বলে মনে করছেনই না।
করোনা প্যানডেমিকের কারনে শেখ মুজিবের জন্মদিন পালন বন্ধ না করলেও ১৫ দিনের জন্যে স্কুল কলেজ হাবিজাবি বন্ধকরে দেওয়ার পর এই বেকুব জাতি অতি উতসাহের সাথে ট্যুর দিতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। এদিকে প্রবাসীরা এসে বিয়ে করছেন, মেয়ে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছেন, রডে বসিয়ে বেল বাজানোর পরিবর্তে বাজারে হাটে ঘাটে মাঠে মানুষজনের সাথে কোলাকুলি করে একাকার করে ফেলছেন। আপনি এদের সবাইরে যদি করোনার প্যানডেমিকের কারনে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন তাইলে এরা যে উত্তরটা আপনার দিকে ছুড়ে দিবে, তা অনেকটা এরকম, “আল্লাহ বাঁচাইবে!” “হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ।” “করোনা কি বালটাই আর হালাবে!” ইত্যাদি ইত্যাদি!
এদের কথা শুনে আপনার মনে হইতে পারে যে এরা সবাই ঈমানী জোসে উজ্জীবিত হয়ে এমন কথা বলছে বা আল্লাহ পাকের উপর এদের অগাধ ভরসা!
কিন্তু আসলে তা না। এই অতিবেকুবদের এই সমস্ত কথা বলার পেছনে সে সাইকোলজিক্যাল প্রবলেমটা কাজ করছে তা হইলো, করোনা যে একটা বিগ প্রবলেম,এই সমস্যাটাকে দেখতে না চাওয়া,খারাপ অবস্থাটাকে বুঝতে না চাওয়া।এবং এই খারাপ অবস্থার ফলে কি হবে সেইটা ভাবতে না চাওয়া ও এড়িয়ে যাইতে চাওয়ার মানসিকতা। ভালো করে খেয়াল করে দেখেন, ইতালি স্পেন আমেরিকার মত ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড এর সবর্ত্র খারাপ অবস্থা।সবাই ইমার্জেন্সি ঘোষনা করছে।তার উপর এই ভাইরাসের এখনো কোন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এইটা হইলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থা! এখন দেখা যাচ্ছে যে সবকিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।করোনা হলে কি হবে,তার পরবর্তীতে মন্দা হইলে কি হবে,বাঁচবো কেমনে,খাবো কেমনে এইসব অনেক প্রশ্নের কোন উত্তর নাই।
এবং মানুষ মাত্রই অনিশ্চয়তা মেনে নিতে পারে না। সলুশন যে নাই এই জিনিসটা সে অস্বীকার করতে চায়। তাই অদৃষ্টের মত বলে দেয় যে, -আল্লাহ আছেন!আল্লাহ বাঁচাবেন!করোনায় কিছুই হবে না।
তো দেখা যাচ্ছে এই আল্লাহর উপর ভরসা আসলে আল্লাহর উপরে ভরসা করা না। এইটা হইলো পরিস্থিতি অস্বীকার করার মেকানিজম।উটপাখির মত বালিতে মাথা গুজে আসন্ন সমস্যাকে না দেখার ভান করার মেকানিজম। কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে চাও সেই ভদ্রলোকের সাইকোলজি এরকমই। যারা বলে “করোনা চুদিনা! আল্লাহ আছেন।” তাদের মানসিকতা একইরকম। এনারা সবাই সমস্যা অস্বীকার করে যেতে চাচ্ছেন। এইজন্যেই এই বিবদমান পরিস্থিতিতে এই অতিবেকুব উটপাখি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষজন সতর্কতা অবলম্বনের ধার না ধেরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে!
অথচ একজন বিশ্বাসী হইলে তার জানার কথা যে আল্লাহ নিজে থেকে এসে তাকে করোনা থেকে বাঁচিয়ে দিবে না।মসজিদ যখন ভাংগা হয় তখন আল্লাহ নিজে এসে তা রক্ষা করেন না। প্রফেট মুহাম্মদ (সঃ) এইজন্যেই বলেছেন আগে উট বান্ধো,দ্যান আল্লাহর উপরে ভরসা করো! কোরানে আল্লাহ ও বলেছেন, “যে জাতি/ব্যক্তি যতক্ষন না নিজেকে সাহায্য করে না,ততক্ষন আল্লাহ ও তাকে সাহায্য করেন না!”
একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি আগে সতর্ক হবে, দ্যান আল্লাহর উপর ভরসা করবে। একজন অপটিমিস্টিক এইভাবেই চিন্তা করে।
বীপরিতে যারা পেসিমিস্টিক, তারা সলুশন খুজে না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর সকল দায় ভার চাপিয়ে দিয়ে সিচুয়েশনকে অস্বীকার করে বসে! কাজেই করোনার এই মহামারির সময়ে এইধরনের ফেইক আল্লাহতে বিশ্বাস রাখা স্টুপিডগুলাকে দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।
আগে নিজের নিরাপত্তার দিক দেখবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিজের নিয়ন্ত্রনে থাকা কাজটুকু করার পরে তবেই আল্লাহর উপর ভরসা করবেন!
সো ব্রাদার এন্ড সিস্টারগন, করোনার এই সময়ে ম্যাক্সিমাম সতর্কতা অবলম্বন করুন। কোভিড ১৯ থেকে বাঁচার জন্যে জনসমাবেশ, ও সকল রকমের গ্যাদারিং এড়িয়ে চলুন। বাসায় অবস্থান করুন।নিজের কেয়ার নিন। আর অবশ্যি বয়োঃবৃদ্ধদের খেয়াল রাখুন। আর বেশী বেশী দোয়া করুন।নিজের জন্যে,সমগ্র মানবজাতির জন্যে।
আল্লাহ ভরসা!