somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার সময়ে অতিবেকুব বাংগালির মনস্তত্বঃ একটি হায়াত মউত আল্লাহর হাতে বিষয়ক পর্যালোচনা!

২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা ভাইরাসের এই প্যানডেমিক্যাল সময়ে বিশ্বজুড়ে রীতিমতো ক্যাওস শুরু হইছে।চীন থেইকা শুরু হওয়া মাস্টার পারসুয়েডর ট্রাম্পের ভাষায় “চাইনিজ ভাইরাস” টি চায়না থেকে বেরিয়ে বাকি দেশগুলিতে হানা দিয়েছে।চীন কোরিয়া সহ কিছু দেশ মোটামুটি ক্ষতি সামাল দিতে পারলেও ইতালি রীতিমতো ধ্বংসের পর্যায়ে, স্পেন খাবি খাচ্ছে, আর ইরানের প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে উপরওয়ালার কাছে চলে যাচ্ছে।

গোটা বিশ্ব লকডাউন। অর্থনীতি মারা খেয়ে শুয়ে আছে। মহামারি পরবর্তী মন্দা দেখা যাওয়ার সকল আলামত স্পষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দুষন কমার কারনে পরিবেশও ভাল হইতে শুরু করছে।আর স্টুপিডদের স্বর্গরাজ্য বাংলাদেশের স্টুপিড পিপলদের মধ্যে উটপাখি সিনড্রোম দেখা যাচ্ছে।

অবশ্য এই জাতির উটপাখি সিনড্রোম তথা পেইন এভয়েডিং সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল সেই আদ্যিকাল থেকেই আছে। বছর বছর বন্যা, খরা,প্রাকৃতিক জলোচ্ছাসের মুখোমুখি হতে হতে এই জাতি ভেবে নিয়েছে যে কোন কিছুই এদের কিছু করতে পারবে না। এই নচ্চার করোনা আবার কোন ছার!

উঠপাখি সিন্ড্রোম আদতে কি? মরুভুমিতে যখন ধুলিঝড় হয় তখন উটপাখি নিজের মাথাটা বালিতে গুঁজে রাখে। নিজের মাথা বালিতে গুঁজে সে এই ধুলিঝড় থেকে নিজেকে বাঁচাচ্ছে এমনটা নয়। নিজের মাথাটা বালির মধ্যে গুঁজে রেখে সে সিচুয়েশনটাকে অস্বীকার করার চেস্টা করে।ধুলিঝড় থেকে বাঁচার জন্যে নিরাপদ আশ্রয়ে না গিয়ে, ধুলিঝড় যে আসছে এই ব্যাপারটাকে অস্বীকার করে বাঁচতে চাচ্ছে। আমাদের আশেপাশেও এরকম অনেক মানূষই দেখে থাকবেন বিশেষত স্টুপিডপ্রধান দেশ হওয়ায় আরো বেশী দেখে থাকবেন, যারা সমস্যা সামনে এলে একে মোকাবেলা করার চেস্টা না করে, সমস্যা যে আছে এইটা অস্বীকার করে যায়।ওই উটপাখিটির মতো বালিতে মুখ গুঁজে রাখে।
যারা এরকম করে তাদেরকে আমি উটপাখি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বলে ধরে নেই। এর গালভারী নাম হলো পেইন এভয়েডিং সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল।

এই করোনার ভাইরাস যেখানে বিশ্বব্যাপি মহামারি আকারে ধারন করছে এবং অলরেডি বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ এই সমস্যাটারে অস্বীকার করে বালিতে মুখ গোঁজা উটপাখিরত মত আচরণ করছে।

শুধু তাই নয়, স্টুপিড দেশের স্টুপিড সরকার নিজেও এই উটপাখি সিন্ড্রোমে জর্জরিত, তবে আমি সরকারের ব্যাপারে কিছু বলবো না,কারন সবাই জানে,কেন বলবো না। তাই সরকারকে বাদ দিয়ে মানুষদের কথাই বলি, যারা নানা উপায় অবলম্বন করে এই সমস্যাকে সমস্যা বলে মনে করছেনই না।

করোনা প্যানডেমিকের কারনে শেখ মুজিবের জন্মদিন পালন বন্ধ না করলেও ১৫ দিনের জন্যে স্কুল কলেজ হাবিজাবি বন্ধকরে দেওয়ার পর এই বেকুব জাতি অতি উতসাহের সাথে ট্যুর দিতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। এদিকে প্রবাসীরা এসে বিয়ে করছেন, মেয়ে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছেন, রডে বসিয়ে বেল বাজানোর পরিবর্তে বাজারে হাটে ঘাটে মাঠে মানুষজনের সাথে কোলাকুলি করে একাকার করে ফেলছেন। আপনি এদের সবাইরে যদি করোনার প্যানডেমিকের কারনে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন তাইলে এরা যে উত্তরটা আপনার দিকে ছুড়ে দিবে, তা অনেকটা এরকম, “আল্লাহ বাঁচাইবে!” “হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ।” “করোনা কি বালটাই আর হালাবে!” ইত্যাদি ইত্যাদি!

এদের কথা শুনে আপনার মনে হইতে পারে যে এরা সবাই ঈমানী জোসে উজ্জীবিত হয়ে এমন কথা বলছে বা আল্লাহ পাকের উপর এদের অগাধ ভরসা!
কিন্তু আসলে তা না। এই অতিবেকুবদের এই সমস্ত কথা বলার পেছনে সে সাইকোলজিক্যাল প্রবলেমটা কাজ করছে তা হইলো, করোনা যে একটা বিগ প্রবলেম,এই সমস্যাটাকে দেখতে না চাওয়া,খারাপ অবস্থাটাকে বুঝতে না চাওয়া।এবং এই খারাপ অবস্থার ফলে কি হবে সেইটা ভাবতে না চাওয়া ও এড়িয়ে যাইতে চাওয়ার মানসিকতা। ভালো করে খেয়াল করে দেখেন, ইতালি স্পেন আমেরিকার মত ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড এর সবর্ত্র খারাপ অবস্থা।সবাই ইমার্জেন্সি ঘোষনা করছে।তার উপর এই ভাইরাসের এখনো কোন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এইটা হইলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থা! এখন দেখা যাচ্ছে যে সবকিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।করোনা হলে কি হবে,তার পরবর্তীতে মন্দা হইলে কি হবে,বাঁচবো কেমনে,খাবো কেমনে এইসব অনেক প্রশ্নের কোন উত্তর নাই।
এবং মানুষ মাত্রই অনিশ্চয়তা মেনে নিতে পারে না। সলুশন যে নাই এই জিনিসটা সে অস্বীকার করতে চায়। তাই অদৃষ্টের মত বলে দেয় যে, -আল্লাহ আছেন!আল্লাহ বাঁচাবেন!করোনায় কিছুই হবে না।

তো দেখা যাচ্ছে এই আল্লাহর উপর ভরসা আসলে আল্লাহর উপরে ভরসা করা না। এইটা হইলো পরিস্থিতি অস্বীকার করার মেকানিজম।উটপাখির মত বালিতে মাথা গুজে আসন্ন সমস্যাকে না দেখার ভান করার মেকানিজম। কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে চাও সেই ভদ্রলোকের সাইকোলজি এরকমই। যারা বলে “করোনা চুদিনা! আল্লাহ আছেন।” তাদের মানসিকতা একইরকম। এনারা সবাই সমস্যা অস্বীকার করে যেতে চাচ্ছেন। এইজন্যেই এই বিবদমান পরিস্থিতিতে এই অতিবেকুব উটপাখি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষজন সতর্কতা অবলম্বনের ধার না ধেরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে!

অথচ একজন বিশ্বাসী হইলে তার জানার কথা যে আল্লাহ নিজে থেকে এসে তাকে করোনা থেকে বাঁচিয়ে দিবে না।মসজিদ যখন ভাংগা হয় তখন আল্লাহ নিজে এসে তা রক্ষা করেন না। প্রফেট মুহাম্মদ (সঃ) এইজন্যেই বলেছেন আগে উট বান্ধো,দ্যান আল্লাহর উপরে ভরসা করো! কোরানে আল্লাহ ও বলেছেন, “যে জাতি/ব্যক্তি যতক্ষন না নিজেকে সাহায্য করে না,ততক্ষন আল্লাহ ও তাকে সাহায্য করেন না!”
একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি আগে সতর্ক হবে, দ্যান আল্লাহর উপর ভরসা করবে। একজন অপটিমিস্টিক এইভাবেই চিন্তা করে।

বীপরিতে যারা পেসিমিস্টিক, তারা সলুশন খুজে না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর সকল দায় ভার চাপিয়ে দিয়ে সিচুয়েশনকে অস্বীকার করে বসে! কাজেই করোনার এই মহামারির সময়ে এইধরনের ফেইক আল্লাহতে বিশ্বাস রাখা স্টুপিডগুলাকে দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।
আগে নিজের নিরাপত্তার দিক দেখবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নিজের নিয়ন্ত্রনে থাকা কাজটুকু করার পরে তবেই আল্লাহর উপর ভরসা করবেন!

সো ব্রাদার এন্ড সিস্টারগন, করোনার এই সময়ে ম্যাক্সিমাম সতর্কতা অবলম্বন করুন। কোভিড ১৯ থেকে বাঁচার জন্যে জনসমাবেশ, ও সকল রকমের গ্যাদারিং এড়িয়ে চলুন। বাসায় অবস্থান করুন।নিজের কেয়ার নিন। আর অবশ্যি বয়োঃবৃদ্ধদের খেয়াল রাখুন। আর বেশী বেশী দোয়া করুন।নিজের জন্যে,সমগ্র মানবজাতির জন্যে।
আল্লাহ ভরসা!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:৩১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×