-তোর কি একটু সময় হবে?
-কেন? কি হয়েছে?
-একটা কথা বলতাম। ব্যস্ত থাকিস তাই বলি বলি করি বলা হয় না।
-কি কথা? তাড়াতাড়ি বলো। রাতে আবার একটা পার্টি আছে।
-বলছিলাম কি বাবা, সামনের বুধবার তোর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, যদি কটা টাকা দিতি, তাহলে ক্যাথিড্রালে গিয়ে কয়টা মোমবাতি জ্বালিয়ে একটু প্রার্থনা করতাম।
-উঃ বাবা !!! ঐদিন তোমার বৌমার ভাইয়ের ম্যারেজ ডে। তুমি জেনেশুনে কেন ঝামেলা করো বলতো? এখন আমার কাছে বাজে খরচের জন্য কোন টাকা হবে না।
কিছু নীরবতা আর কয়েক ফোটা চোখের জল নিয়ে পিটার সাহেব ঘরে ফিরলেন। দিনের পর দিন কেটে গেল। আগামীকাল বুধবার। কেউ আলো জ্বালবে না কাল তার প্রয়াত স্ত্রী লিয়ানের জন্য। অথচ এই লিয়ান তার সন্তানকে বুক দিয়ে ভালবাসতো। একবার পিটার সাহেব ছেলেকে প্রতিবেশীর জানালার কাচ ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রচন্ড মেরেছিলেন। পুরো সাত দিন লিয়ান কথা বলিনি অভিমানে। আজ সেই ছেলে, হ্যা সেই ছেলে মায়ের মৃত্যুদিনে একবার মাকে মনে করে না। মদ আর বিলাসিতার ফোয়ারায় গা ভাসায়। পিটার সাহেবে চিন্তাশক্তি থেমে যচ্ছিলো ভাবতে ভাবতে।
বুধবার সন্ধ্যার অবয়বে অন্ধকার মাত্র ফিস ফিস করে কথা বলতে শুরু করেছে। পিটার সাহের লিয়ানের প্রিয় চেয়ারটায় বসে আছে। চোখে কষ্ট, বুকে অসংজ্ঞায়িত এক যন্ত্রনা। হঠাৎ সামনের ফুল বাগানে পরিচিত অগ্নি রঙ্গের আভা। পিটার সাহেব কৌতূহলী হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থমকে গেলেন। সামনে এক বিন্দু বিন্দু আলোর মিছিল। পুরো সামনের চত্বর টা কেউ অসংখ্য মোমবাতি দিয়ে আলোয় ভাসিয়ে দিয়েছে। আর আলোর মিছিলের শেষ প্রান্তে লিয়ানের একটা বড় প্রোট্রেট।
পিটার সাহেব এক পা দু পা করে প্রোট্রেটের দিকে এগোতে লাগলেন। ছবিটা যেন জীবন্ত। এখনই কথা বলবে লিয়ান। প্রোট্রেটের সামনে এসে পিটার সাহেব কেদে উঠলেন। এ কান্না অবহেলার নয়, অনুস্মৃতির।
ঠিক সেই সময় একটা হাত এসে পিটার সাহবের কাধে ছুয়ে পাশে দাড়াল। পিটার সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন হাতটা তার নাতি নিয়নের। এতো কিছু আয়োজনের পরেও র্পিটার সাহেবের আবেগকে স্পর্শ করে নিয়ন যেন ভাবলেশহীন। আজ পিটার সাহেবের মনে হলো, তার পাশে নিয়ন দাঁড়িয়ে নেই, দাড়িয়ে আছে নতুন প্রজন্ম, পুরাতনকে আগলে তার টুকরো অনুভূতির রত্নগুলোকে মনের গভীরে সাজিয়ে রাখতে পারে, এমন এক নতুনের অভিযাত্রী।
গল্পটা পড়ে কেউ বৃদ্ধদের জন্য মনে সমবেদনা আনবেন না । শুধু সম্ভব হলে নিজের ঘরের বৃদ্ধ মানুষটির সাথে একটু সময় কাটাবেন। উনারা বড় একা। জীবন যুদ্ধে আমাদের সব দিয়ে আজ নিঃস্ব। আর আপনার একটু সঙ্গ উনাদের মুখে এমন হাসি ফোটাবে, যার থেকে আপনি পৃথিবীর সব থেকে দামী জিনিস বিনা ব্যয়ে পেয়ে যাবেন, সুখ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৪