somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমি ( দ্যা লেডি হিমু )

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-ও ময়না পাখি টা কোথায় যাও ! এদিকে একটু আসো না, পিলিজ !
এই উত্যক্ত উক্তি শুনে বাকি দুজন পথচারী মেয়ে শংকায় হিম হয়ে গেলেও হিমির কোন উচ্চ বাচ্য নেই। সে স্বাভাবিক ছন্দে হেটে চলেছে। অবশ্য কলেজের মোড়ে বখাটের উৎপাত আমাদের অঘোষিত একটা জাতীয় সমস্যা। ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েদের একজন পিছনের দিকে বার বার উদ্বেগের সাথে তাকাতে তাকেতে বললো,
-এদের জ্বালায় একদিনও শান্তিতে বাসায় যেতে পারবো না !
শুনে আরেক ভয়ে সিটিয়ে যাওয়া মেয়ে বললো,
-বাড়িতেও বলার উপায় নেই। সোজা কলেজ বন্ধ।
এসব আহাজারি শুনে হিমি কিছু বললো না, শুধু বিজ্ঞের মত মাথা নাড়ল। যখন শিক্ষক শত চেষ্টা করেও ছাত্রদের দিয়ে ভাল ফল করাতে পারে না, তখন হতাশ হয়ে যেমন মাথা নাড়ে ঠিক সেইভাবে মাথা নেড়ে এই বকাটেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মনে মনে শংকা প্রকাশ করলো।
বাড়িতে ফেরার পর হিমির মা রীতিমত দৌড়ে এলো। হিমির মা মানুষ খারাপ নন। শুধু উনার সর্বনিম্নে অবস্থা্ন কৃত গলার উচ্চারণও রাস্তার ঐ পাড়ের মানুষ বিনা তৎপরতায় শুনতে পায়। আর আজ যে গলায় বললেন অন্য গ্রাম হতে শোনাও বিচিত্র নয়,
-ওরে হিমি, তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছা। আর এখানে এক মুহুর্ত নয়।
হিমি একটু অবাক না হয়ে বললো,
-আমার জামদানি শাড়ীটা কেচে দিয়েছি, ঐটা আগে শুকিয়ে যাক। তারপর ব্যাগ গোছাচ্ছি।
-অতসময় নেই রে মা!
-ঐ জামদানি শাড়ী না নিয়ে আমি এক চুলও নড়ছি না।
-কি জন্য যেতে বলছি শুনবি তো?
-শুনে আর কি হবে? আচ্ছা বলো, শুনি?
-একটু আগে পঞ্চু মন্ডলের ছেলে বাইক নিয়ে এসেছিলো ।
-তো ! এরজন্য বাড়ি ছাড়ার কি আছে? এক কাপ চা খাইয়ে বিদেয় করে দিলেই ল্যাটা চুকে যায়।
-ঐ ছোরা বলছে, ওর সাথে তোর বিয়ে না দিলে তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।
- আচ্ছা ! তাই বলো।
-আচ্ছা মানে কি ??? শীঘ্র কর। আর এক মুহুর্তে নয়। আজই তোর মামার বাড়ি গিয়ে এর একটা বিহিত করতে হবে।
-আমার এখন যাবার সময় নেই। হাত পায়ের নখ কাটতে হবে। বিচ্ছিরি রকমের বড় হয়ে হয়েছে ঐগুলো। নতুন একটা নেল পলিস এনেছি। পরে দেখতে হবে রং টা ঠিক আছে কিনা।
শুনে হিমির মা বিস্ময়ে আর কোন কথা বলতে পারলো না।
এই পঞ্চু মন্ডলের ছেলে সোনাই রোজ হিমিকে কলেজের সামনে গিয়ে প্রেমের কথা বলে, তোমাকে ছাড়া বাচবো না, নদীতে লাফিয়ে মরবো, পুকুরে ঝাপিয়ে পরবো এইসব কথা বার্তা। হিমি শুনে কিছুক্ষন মানসিক ডাক্তারের মত সোনাইয়ের মুখ নীরিক্ষা করে কোন কথা না বলে বাড়ির দিকে হাটে। তবে বাড়ি বয়ে বিয়ের প্রস্তাব টা নতুন।
পরেরদিন দুপুর বেলা সোনাই বাইক করে হিমির বাড়ির সামনে হাজির হয়ে চেচিয়ে বললো,
-হিমি ! হিমি !! তুমি কোথায় ??? আজ তোমাকে আমি নিয়েই বাড়ি ফিরব।
এভাবে ১০ মিনিট চেচামেচি করার পর । হঠাৎ শাড়ী পরে করে সাজা একটি মেয়ে সোনাইয়ের বাইকের সামনে এসে দাড়ালো। মেয়েটি একেবারে নতুন বউয়ের মত সেজেছে। ঘোমটা দেয়া। মাথাটা লজ্জাবতীর মত নোয়ানো । দেখে যেকেউ বলে দিতে পারবে বিয়ের কনে। মেয়ের হাতে আবার জামা-কাপড় বোঝাই ব্যাগ। তারপর মেয়েটা সোনাইয়ের বাইকের পিছনে গিয়ে উঠে বসে লজ্জাস্বরে বললো,
-চলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় সোনাই কিছুক্ষনের জন্য হা হয়ে রইল। প্রথমে মেয়েটাকে চিনতে পারেনি সোনাই। মস্তিষ্কে অনেকদিন পর জোর দিয়ে যে বুঝতে পারলো এটা আর কেউ নয়, হিমি । অতিকষ্টে নিজেকে সামলে গলা দিয়ে বের করতে পারলো,
-কোথায় যাবো?
-বারে তুমি না আমাকে বিয়ে করবে? দেখো, আমি বউ সেজে এসেছি। আমাকে সুন্দর লাগছে না। আজ আমাদের বিয়ে।
শুনে সোনাই কয়েকবার ঢোক গিললো, গরমের মাত্রা এখনো বেশি না হলে ঘামে নিজেকে ভিজিয়ে ফেললো। হিমি তাড়া দিয়ে বললো,
- কি হলো ? বাইক স্টার্ট করছো না কেন? চলো । আজ আমরা বিয়ে করে তোমার বাবা-মা কে একদম চমকে দেবো।
অস্ফুট উচ্চারণে সো নাই বললো,
-হ্যা, এই তো স্টার্ট দিচ্ছি। কিন্তু বাইকের যেন কি হইছে, বুঝলে? কিছুতেই স্টার্ট নিচ্ছে না।
হিমি দুঃখ দুঃখ মুখ করে বললো,
-ইস ! তাহলে আর কি করার চলো হেটেই যাব শ্বশুর বাড়ি। চলো !
সোনাই হিমির হেটে যাওয়াটা মহাপাপ হবে এমন ভাব করে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
-না না, তা কি করে হবে। তুমি দুই মিনিটা দাড়াও আমি দশ মিনিটের মধ্যে মেকানিক নিয়ে আসছি।
-আমিও যাব তোমার সাথে। হিমি নাছোড়বান্দা
-না না, তোমার যেতে হবে না। আমি যাব আর আসব।
-আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকব তোমার।
মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে লক্ষ কোটি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সোনাই ঐখান থেকে রীতিমত দৌড়ে পালালো।
সেই যে সোনাই গেলো। আজ ফিরে এলো না। বাইকখানা নিতে পাঠিয়েছিলো বটে। কিন্তু তারা এসে বলেছে। তার ঐ বাইক চুরি গেছে হিমিদের বাড়ি থেকে। সোনাইয়ের আর সাহসে কুলায়নি বাইক নিয়ে হিমির বাড়ি গিয়ে দরবার করতে।
এদিকে হিমি নতুন স্কুটি কিনেছে। স্কুটি কেনার টাকা পাওয়া নিয়ে অনেক কানা-ঘুষো শোনা যায়। সোনাই এর বাইক বেচে নাকি এটির যোগাড় হয়েছে। হিমি কি আর ঐ সবে কান দেবার মেয়ে ! দুই বান্ধবীকে পিছনে বসিয়ে সে রোজ কলেজ যায়। আর সোনাইয়ের ব্যাপার টা জানার পর থেকে কেউ ওদের আর ঘাটাতে সাহস করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×