এক
১২ জুন, ২০১৫
বিশ্ব শিশু শ্রম বিরোধী দিবস উপলক্ষে নবযাত্রা ফাউন্ডেশন শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদি সমাবেশ আয়োজন করিয়াছে। এলাকার সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এবং সমাজসেবকরা সেইখানে আমন্ত্রিত হইয়াছেন। যেহেতু জনসংখ্যা হাজার উর্ত্তীণ করিয়াছে সুতরাং উহাকে মোটামুটি বিশাল জনসভারূপে আখ্যা দেয়াই যাইতে পারে। একে একে অতিথিরা জ্বালাময়ী ভাষণ প্রদান করিয়া সভাস্থল উত্তপ্ত করিয়া ফেলিতেছেন। তাহাদের আক্রোশ সেই সব পশু তুল্য মনুষ্যদের প্রতি যাহারা ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের কায়িক শ্রমের নামে অত্যাচার করিয়া থাকে। দু এক জন পারিলে মঞ্চে ঐ রূপ অবিবেচকদের দুচার টা লাশ ফেলিয়া দেয়। সবশেষে প্রধান অতিথি আহ্নিক দও ভাষণ দিতে আসিলেন। বিশিষ্ট সমাজসেবক হিসাবে সমাজে ইনার প্রতিপত্তি ঈর্ষণীয়। স্কুল, হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম এমন কিছু নাই যে স্থাপন করিয়া মানব জাতির কল্যাণে কোন ঘাটতি রাখিয়াছেন। শুধু কি তাহাই, উনার ভাষণ অত্র শহরে সর্বাপেক্ষা যুক্তিসঙ্গত এবং জ্ঞানগর্ভ বলিয়া বিবেচিত হয়। তাই উনি আসিয়া মাইকের সম্মুখে উপস্থিতি হইতেই চতুর্পাশ নিরবতায় চাপিয়া ধরলি। উনি শুরু করিলেন,
“উপস্থিতি শুধীবৃন্দের আমার একটা অনুরোধ, আপনারা সকলে কয়েক মুহুর্তের জন্য চোখ বন্ধ করুন। ( প্রায় সকলে অনুরোধ পালন করিলেন) এবার আপনাদের কল্পনার চোখে একবার দেখার চেষ্টা করুন আপনার নিজের সন্তানকে। আপনার ছোট ছেলে কিংবা মেয়ে টি অন্য কারো বাসায় কাপড় কাচছে, বাসন মাজছে। আর সামান্য ভুল ক্রটির জন্য তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে, আঘাত করা হচ্ছে। আপনাদের কেমন লাগবে? আজ সে শিশুটি আপনার বাসায় এমন ভারী কাজ করছে মনে রাখবেন সেও কারো না কারো সন্তান। আপনার সন্তান আঘাত পেলে যেমন আপনার বুকে বা পাশে যন্ত্রনা হয় তাদেরও হয়। আপনার ছেলেরা কত কিছু ভাঙ্গে, নষ্ট করে। আপনারা তার হিসাবও রাখেন না। কিন্তু ওরা একটা চামচ হারিয়ে ফেললে ওদের সামনে ঝড় বইয়ে দেন। আমি বলছি না তাদের মাথায় করে নাচবেন। তার দরকারও হবে না। কারণ ওদের প্রয়োজন অনেক সামান্য। যদি ওদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা না করতে পারেন তাহলে অন্তত একটু ভাল ব্যবহার আর পেট ভরে দুবেলা খেতে দিবেন। এতেই দেখবেন ওদের মুখে সব সময় একটা হাসি লেগে আছে। এই হাসি আপনাকে আর কিছু না দিক একটা সুখ দেব যা অমূল্য। আপনাদের... ”
এভাবে আরও অর্থপূর্ণ এবং আবেগময় কিছু উক্তি বলিয়া আহ্নিক বাবু তাহার ভাষাণ শেষ করিলেন। মঞ্চ করতালিতে ফাটিয়া গেল। শ্রোতাদের উত্তেজনা দেখিয়া এমন প্রতিপন্ন হইলো যে আজকের আহ্নিক বাবুর এই ভাষণের মধ্যে দিয়ে শিশু শ্রম পৃথিবী হইতে যেন বিদায় লইলো।
দুই
শুয়োরের বাচ্চা সপ্তাহে সপ্তাহে গ্লাস ভাঙবি? দাম কি তোর বাবা দেবে? পুরো কথা শোনার পূর্বেই আট বছরের ঝন্টু একটা প্রচন্ড শব্দ শুনিতে পাইলো আর নিজেকে শূণ্যে আবিষ্কার করিল। ওর গায়ের ওজনের থেকেও চড়টার ওজন অনেক বেশি হইবার কারণে ঝল্টু রীতিমত ছিটকাইয়া পড়িল। সামনে মনিবের পাশবিক রূপ দেখিয়া ভয়ে সিটকাইয়া কাঁপিতে কাঁপিতে ঝন্টুর মুখ হইতে অতি কষ্টে “আর হবে না, বাবু”। এই চারটি শব্দ বাহির হইলো। মনিবের আর একটা লাথি মারিবার অভিপ্রায় থাকিলেও বৈঠকখানায় যাইবার ব্যস্ততা থাকায় তিনি নিজেকে শান্ত করিলেন। বৈঠকখানায় পৌছানো মাত্রই, নবযাত্রা ফাউন্ডেশনের সংগঠক হাত ধরিয়া বলিলেন, “সামনে সপ্তাহে নারীদিবস প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আপনার কিন্তু না আসলে চলবে না আহ্নিক বাবু।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৫১