১
আশি বছরের এক বৃদ্ধার সাথে অলক প্রভাতকালেই প্রচন্ড দরকষাকষি আরম্ভ করিয়া দিলো। না কোন স্থায়ী সম্পদ বা সোনা-হীরা জন্য নয়। দুখানা বেলী ফুলের মালা জন্য। বৃদ্ধা অনেক দাম হাকাইয়াছে। দুইটা মালা ত্রিশ টাকা বলিতেছে। অলকের প্রেয়সিনী অহেনজিতার বেলী ফুলের মালা বড়ই প্রিয়। তাই বলিয়া ত্রিশ টাকা। বুড়ি কি অলককে বোকা ঠাওরাইছে। অলক বলিল বিশ টাকার অধিক সে কিছুতেই দিবে না। বুড়ি কাতরস্বরে কহিল, দে না রে বাপ, কয়টা ভাতই তো খাবো । তোরা সবাই এমন করিস কেন, বাবা? এইসব ছোট ব্যবসায়ীদের সরলতার মার্কেটিং পলিসি অলক খুব ভাল করিয়াই জানে। তাই শত আবেদন-নিবেদন করিয়াও বুড়ি দুইটা টাকাও বাড়াইতে পারিল না।
২
অহেনজিতাকে বেলী ফুলের মালা পরাইয়া লইয়া অলক আইসক্রীম পার্লারে ঢুকিলো । সগর্বে দোকানীকে জিজ্ঞাসা করিলো, আইসক্রীমের পার স্কুপ কত করিয়া? দোকানী জানাইলো, একশত টাকা। অলক নাক সিটকাইয়ে বুক ফুলাইয়া বলিল, মাত্র। আমাদের ঐখানে তো দেড়শত টাকার নিচে স্কুপ নাই (মিথ্যা কথা) তারপর দুজনে অতি আনন্দের আইসক্রীম খাইয়া একে অন্যেকে প্রেমের বন্যায় ভাসাইয়া রিক্সাযোগে ভ্রমণ করিলো। ঘন্টা খানেক ঘুরিবার পর অহেনজিতা অলককে নামাইয়া বলিল, এখন বাসায় না ফিরিলে মা বকুনী দিবে।
৩
অলককে নামাইয়া দিয়া অহেনজিতা খানিক পথ অতিক্রম করিয়া রিক্সা থামাইতে বলিল। একটি কুদর্শন কিন্তু অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে রিক্সা অহেনজিতার পাশে আসিয়া বসিল। অতঃপর অলক আর অহেনজিতার মধ্য যা ইতিপূর্বে ঘটিল এই যুবকের সাথেও রিক্সার হুট তুলিয়া তাহার পুনরাবৃত্তি হইলো। বরং একটু বেশি হইয়া গেল। অলকের দেওয়া বেলী ফুলের মালাটা উহাদের বন্য প্রেমে খন্ড খন্ড হইয়া গেলো।
৪
বুড়ি পথে ধারে বসিয়া অবশিষ্ট বেলী ফুলের মালা নিয়ে স্বপ্ন দেখিতেছে, আগামীকাল যদি সব মালা বিক্রি হইয়া যায় তাহলে মাছ কিনিয়া খাইবে। কতদিন হইয়া গেলো এক টুকরো মাছ খাইতে পায় নাই।
অলক কল্পনায় দেখিতেছে যত দ্রুত হয় অহেনজিতাকে লইয়া ঘর বাধিবে, সংসার করিবে। তারপর সন্তানদের কোলাহলে দুজনে ডুবিয়া যাইবে।
অহেনজিতা অবশিষ্ট বেলীর ফুল চুল হইতে ছাড়াইতে ছাড়াইতে ভাবিতেছে এইবার কোন কোটি পতি ছেলেকে পটাইতে হইবে। এইসব খুচরা পয়সা আর কতদিন চলিবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৮