somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যাপী এন্ডিং ( ছোটগল্প )

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি খুব সাহসী মেয়ে। সাহসী আর মেয়ে দুটি শব্দকে কিছু মানুষ মেলাতে পারেন না, হয়তো মেলাতে চানও না। কিন্তু আমি বাস্তবিক অনেক সাহসী শুধু একটা প্রাণীতে আমার তীব্র থেকে তীব্রতর ভয়। সেটা হলো সাপ। সাপের একটি গল্প আমার বিছানায় উঁচুতে গোটা রাত্রি বন্দী করে রাখার জন্য যথেষ্ট, সেখানে চাক্ষুস দর্শন নিষ্প্রয়োজন। অথচ আমার জীবনের প্রথম প্রেম যে এই বিশিষ্ট প্রাণীটি ঘটাবেন আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি।
চার বছর আগের কথা। কলেজ থেকে বের হয়ে সি এন জি নিয়ে সোজা বাসায় যাব। এমন সময় তিন বেদেনী এসে উনাদের কাঠের বাক্স আমার বুকের কাছে ধরে, “এই আপা, টাকা দে”। বাক্সের ভেতর থেকে লিকলিকে একটা ছোট সাপ মাথা বের করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ব্যস ! আমি আর আমি রইলাম না। এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে ভঁয়ে কাপতেও ভুলে গেছি। আমার নিরুত্তাপ মুখ দেখে আবার একজন আরেক টা বাক্স এগিয়ে বললো, “কি হলো দে?” আমি এবার ভয়ে জ্ঞান হারাব। ভেতর ভেতর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আচমকা একটি ছেলে পিছন থেকে এসে ওদের একটা বাক্স কেড়ে নিয়ে দৌড়। আমরা সবাই অবাক। কি হলো এটা? বিস্ময়ে আর জ্ঞান হারাবার কথা মনে রইল না। দেখলাম সেই তিন বেদেনী কন্যাও সেই ছেলের পিছন পিছন শাড়ী হাঁটু অবধি তুলে দৌড় লাগালো। আর চিৎকার করে বলছে, “ভাইজান, আপার টাকা দেয়া লাগব না, আপনি আমাদের বাক্সখানা দিয়া যান। ও ভাই জান”। খানিক টা দূর দৌড়ে ছেলেটা একটা ডাকের ওপরে বাক্সটা রেখে হাসতে হাসতে আমার দিকে ফিরে আসলো। বেদেনী কন্যারা তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে বাক্সখানা উদ্ধার করলো। তাঁরা বিশাল ভয় পেয়েছে। এমন অভিজ্ঞতা ওদের জীবনে হয়তো প্রথম। এই সাপগুলোই ওদের ব্যবসার পুঁজি। তাই ওরা আর ফিরে আসতে সাহস করলো না। যদি আবার নিয়ে দৌড় দেয়। দূর থেকে চোখ গরম করে তাকাল। হয়তো কয়েকটা অভিশাপ দিচ্ছিলো। তারপর চলে গেল। ছেলেটি হাসতে হাসতে আমার এসে দাঁড়ালো। আমাকে কাছে এসে হাসার শব্দ আর গতি দুটোই যেন জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে দিল। কিছক্ষণ আগে ছিল ভয়, তারপর বিস্ময় কিন্তু তখন হতে শুরু করলো রাগ। এভাবে হে হে করে হাসার কি আছে? মানুষের কি ভয় থাকতে পারে না? কত বড় বড় পালোয়ান কুকুর দেখলে ভয় পায়। আমি মোটেইও পাই না। আমার ভয় পাই সাপে। ভয়ের পাওয়ারই প্রাণী ওটা। ঐ যে কি একটা সিনেমার ডায়লগ আছে না, এই ছোবলেই ছবি। এমন প্রাণীকে যারা ভয় না, তাঁরাই বরং মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের নিয়ে হাসা উচিৎ। রাগের মাঝেও একটা কৃতজ্ঞতা ছিলো, অস্বীকার করবো না।
সেইদিন থেকে শাহেদের সাথে আমার বন্ধুত্ব। বেশ কিছুদিন আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। তারপর শুরু পরের পরিচ্ছেদ, প্রেম। একটা ছেলের যেকোন গুন চেহারা, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ এমনি যোগ্যতা অবজ্ঞা করা যায় কিন্তু ছেলেটি যদি দুঃসাহসিক হয় তবে তাঁকে অবজ্ঞা করা একটা মেয়ের জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত যদি সে প্রতিনিয়ত আপনার সামনে থাকে, সঙ্গে থাকে। শাহেদ যেদিন আমার প্রথম ওর অনুভূতির কথা জানায়, আমি ভাববার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উপেক্ষার ভাবনাটুকুও আমার কাছে ছিল না। তারপর শুরু হলো আমাদের পথচলা। প্রেম আসলেই একটা ব্যাধি। ভালবাসার মানুষ যখন কাছে না থাকে সবকিছু শূণ্য মনে হয়, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শাহেদ যেন আমার নিঃশ্বাসে ঘুরত। বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ, জ্যোৎস্না, প্রেমের কবিতা, লাল রং এসবকিছুতে আমার অতিরিক্ত আবেগ ছিলো না কখনোই। ন্যাকামি মনে হত। কিন্তু যখন প্রেম হল, যেন বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা শাহেদ হয়ে আমাকে ছুঁয়ে যেত, মেঘলা আকাশ হত আমার বন্ধু যাকে আমি শাহেদের গল্প শোনাতাম, জ্যোৎস্নাকে বলতাম আমাকে দুটো ডানা দাও আমি পরী হয়ে তোমার আলোতে হেঁটে যাব ওর কাছে। ইচ্ছার মাটিতে গড়া স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। আমার হয়েছিল। কারণ হাত বাড়ালেই শাহেদ নামের স্বপ্নটা আমায় ছুঁয়ে যেত। এভাবে যে কখন চার চারটা ফাল্গুন কেটেছে আমি কি চ্ছু জানি না। কিন্তু হঠাৎ একদিন শাহেদের বাড়ি থেকে ওর বিয়ে ঠিক হল। ওর দাদী খুব অসুস্থ। হয়তো যেকোন সময় ঘটে যাবে কোন অঘটন। তাই শাহেদকে একটা মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। বিয়ে করতে হবে ওকে। আমি ওকে কিছুই বলিনি। কোন প্রতিবাদ করিনি। কারণ প্রতিবাদ করার সামান্য কারণটুকুও আমার কাছে ছিল না।
আজ শাহেদের বিয়ে। একটু পরে হয়তো ও পৌছাবে শ্বশুরবাড়ি। আর আমি এই বদ্ধ ঘরে একা বসে শাহেদের মুখখানা কল্পনাতে দেখবার খুব চেষ্টা করছি। বরবেশে কেমন লাগছে আমার শাহেদকে? আচ্ছা আজ একটিবারও কি ও আমার কথা ভেবেছে? একটিবার কি আমার জন্য ফোনটা হাতে নিয়েছে ?
নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হচ্ছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি জ্ঞান হারাব। সংজ্ঞাহীন এক কষ্ট হচ্ছে। হবেই বা কেন? এতো ভারী শাড়ি গয়না পরে বউ সেজে বসে আছি। বিয়ের টেনশনে এসিতেও ঘামছি। আর বান্ধাবীরা সবাই আমাকে ফেলে বর দেখতে গেছেন। বর নাকি হাতির পিঠে করে আসবে। স্বভার আর গেল না। বিয়ের পর টাইট দিতে হবে ভাল করে। আর লিখতে পারছি না। হাত ব্যাথা করছে। যাই হোক শাহেদের সাথে আজ আমার শুভ বিবাহ। কেউ হিংসে করবেন না। সবাই দোয়া করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×