somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রণয় বা পরিণাম

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্য রাতের আর বেশী দেরি নেই। রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি। হাতে এক বিন্দু আগুন। কিছুক্ষণ পর পর আগুনে টান দিচ্ছি। এদিকে রাস্তা পুরো জনশূন্য। কেবল কিছু কুকুর ঘুরাঘুরি করছে। আমার হাতে একটা ব্যাগ। পরিকল্পনা ছিল ফাঁকা রাস্তা পেতেই কোথাও ছুড়ে ফেলে দেব ব্যাগটা। অনেকক্ষণ হয়ে গেল। কেন জানি এখনও ব্যাগটা ফেলা হয় নি। ফেলে দিতে নিলেই কেবল মনে হচ্ছে সাথে থাক না আরও কিছুক্ষণ।

আমি বরাবরের মতই সম্পূর্ণ শান্ত। উত্তেজনা বা বিষন্বতার মুহূর্তগুলোতে কেন জানি আমার স্নায়ুগুলো একদম শিথিল হয়ে যায়। বিপদে বা উত্তেজনায় এরকম শান্ত থাকার কারণেই হয়তোবা সাদিয়ার নজরে পড়ে ছিলাম আমি। বছর দুই আগের কথা। সাদিয়া সেধে নিজেই এসেছিল আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে। আমারও ভালো লেগে যায় মেয়েটিকে। এরপর বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। ভালোবাসা থেকে আরও কাছে আসা। একান্ত কিছু সময় কাটানো। এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন। এর মধ্য সাদিয়া একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালো আমি বাবা হতে যাচ্ছি। ওর মায়াবী চেহারা আনন্দে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমি ঠিক এখনকার মতই শান্ত ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না ভুলটা কোথায় হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই যা ভাবছিলাম তাই হল। সাদিয়া বলল, ওকে আজই বিয়ে করতে হবে। আমার কাছ থেকে কোন জবাব না পেয়ে ও কেমন যেন কুঁকড়ে গেল। বলল, "তাহলে কি সবই অভিনয় ছিল? তুমি আমাকে কখনও ভালোবাসো নি? কখনও বিয়ে করতে চাও নি?" আমি বললাম, “আমি তোমায় ভালোবাসি এবং বিয়েও করব, তবে আজ না। লেখাপড়া শেষে যেদিন নিজের পায়ে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারব সেদিনই আমি তোমায় বিয়ে কবর সাদিয়া। এর আগে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা একসাথে তিনটি জীবনকে নরকে পরিণত করার কোন মানে হয় না।“ ও কেঁদে দিয়ে বলে ছিল, "এখন আমার কি হবে? আমি যে কাউকে মুখ দেখাতে পারব না। নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আমার কাছে যে আর কোন পথ খোলা রইল না।" আমি বললাম "তোমার নিজেকে শেষ করতে হবে না সাদিয়া। তবে..." তবে বলতেই বলে উঠেছিল ও, "তবে তবে কি?" ওর কণ্ঠে একই সঙ্গে আশা ও আশঙ্খা টের পেয়েছিলাম সেদিন। বললাম, "আমাদের ওকে শেষ করে ফেলতে হবে সাদিয়া। এছাড়া আর কোন পথ নেই।" "তুমি আমাকে আমার সন্তানকে খুন করতে বলছ? তুমি কি মানুষ?" অঝোরে কাঁদছিল ও। অনেক বাকবিতণ্ডার পর রাজি করিয়েছিলাম ওকে। যা ফলাফল এখন আমার হাতের ব্যাগের মধ্যে।

এর কিছু দিন পর, আজ ঘণ্টা দুয়েক আগে আমরা আমাদের সন্তানকে খুন করেছি। সাদিয়াকে ওর এক বান্ধবীর বাড়িতে রেখে আমি এসেছি মাংস খন্ডটাকে আস্তা কুড়ে ফেলে যেতে।

ভাবতে ভাবতে অনেক দূর চলে এসেছি। আর দেরি করা যায় না। সামনে একটা ডাস্টবিন দেখা যাচ্ছে। আসে পাশে কিছু কুকুর ময়লা খুড়ে খাচ্ছে। আমি ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে হাতের ব্যাগটা ছুড়ে মারলাম ওর ভেতর। ডাস্টবিনের গায়ে বাড়ি খেয়ে ব্যাগটা বাইরেই পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে কিছু কুকুর হামলে পড়ল এর উপর। আমার সন্তানের উপর।।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১৫
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×