somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল দুঃখ ( অনুগল্প )

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( উৎসর্গ ~ আমার এক হতভাগা বন্ধুকে । সে গত কয়েকদিন আগে কিছু নেতার নিষ্ঠুরতার স্বীকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিছানায় ছটফট করছে । আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি । সে বেথার ঔষধ নিচ্ছে । পাশে তার কৃষক পিতা নির্ঘুম রাত পার করছেন । পিতা পুত্রের এই বেথা আমাদের মতন নিষ্ঠুর মানুষদের স্পর্শ করে না । তাই আমরা এমন অন্যায় করি । রাতের বেলা গভীর ঘুমে নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখি । )






সাজ্জাদ সাহেব গভীর উদ্বেগ নিয়ে তার পুত্রের দিকে তাকিয়ে আছেন । পুত্রের নাম মুস্তাফিযুর রহমান । মুস্তাফিয ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ১১৫ নং ওয়ার্ড এর একটি বেডে শুয়ে আছে । বেডের চাদর নোংরা । সাদা চাদর বহুদিন ব্যাবহারে হলদেটে হয়ে গেছে । এক যায়গায় রক্তের দাগ । মুস্তাফিয এর শরীর থেকে রক্ত পড়ছে । তিনি খুবই চিন্তিত । ছেলেটার গত রাত থেকেই রক্ত পড়ছে । এখনো জ্ঞান ফেরে নি । মাঝে মাঝে সারা শরীর কেপে উঠছে । সাজ্জাদ সাহেব গভীর মমতায় পুত্রের হাত ধরে আছেন । শক্ত করে ধরে আছেন । মাঝে মাঝে বলছেন " বাপ গো ভয় নাই আমি আছি । "
তার পুত্র এই কথা শুনতে পাচ্ছে না । তাতে কি । অসুস্ত মানুষের পাশে কথা বলে তাকে ভরসা দিতে হয় । জ্ঞান ফিরলে শুনবে । ডাক্তার সাহেব বলেছেন আজ জ্ঞান ফিরবে । ডাক্তার মানুষটা ভালো । খুব যত্ন নিয়ে তার পুত্রকে দেখছেন । সাজ্জাদ সাহেব তাহাজ্জতের নামাজের সময় মন থেকে ডাক্তারের জন্য দোয়া করেছেন । মুস্তাফিজের জন্য ও দোয়া করেছেন । ছেলেটার যেন তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফেরে । পুত্রের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে তার বড়ই কষ্ট হচ্ছে । তিনি পুত্রের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছেন । বার বার কালেমা পড়ছেন । বিপদের সময় এই দোয়া পড়লে মনে জোর পাওয়া যায় । কিন্তু তিনি জোর পাচ্ছেন না । দুর্বল লাগছে । চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ।

~ আব্বা আপনি কান্দেন কেন ?
~ কই রে বাপ কান্দি না তো ।
~ অবশ্যই কান্দেন । আপনার চোখে পানি ।
~ অনেক ক্ষণ টাকাই ছিলাম তাই পানি আসছে । কান্দি না গো বাপ ।

মুস্তাফিয একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে । গত রাতের পর থেকে তার কোন ঘটনাই স্মরণ নেই । চোখ খুলেই দেখে তার বাবা তার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখ ভর্তি পানি ।

~ বাপ গো এখন কেমন লাগছে ?
~ সারা শরীরে বেথা আব্বা ।
~ আহারে বাপ আমার । তুমি চিন্তা করো না । এইখানকার ডাক্তার বড়ই ভালো মানুষ । তোমাকে খুবই যত্নের সাথে দেখছেন ।
~ আব্বা আমার কি জ্বর আসছে ?
~ বাপ শরীর একটু গরম । চিন্তা নাই বাপ । সবুর করো । মনে মনে কালেমা পড়ো । বড়ই ওজনদার আমল । আমাদের নবী সাহেব অসুস্ত হলে এইটা পড়তেন ।
~ এখন কিছুই পড়তে ইচ্ছা করে না আব্বা । বুক বেথা করে ।
~ আচ্ছা বাপ তুমি চুপ থাকো আমি পড়ি । বুকের কই বেথা করে গো বাপ ।

মুস্তাফিয হাত নাড়াতে পারে না । সাজ্জাদ সাহেব কে ইশারায় বেথার জায়গা দেখায় । সাজ্জাদ সাহেব চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না । পুত্রের সামনে পিতার চোখের পানি ফেলতে নাই । অমঙ্গল হয় । তিনি পুত্রের অমঙ্গল দূর করতে পারেন নি । তার বুকটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । তার সুস্থ সবল পুত্রের এই অবস্থা , তিনি কিছুই করতে পারছেন না । অসহয়ের মতন পুত্রের বিছানার পাশে বসে আছেন । কালেমা পড়ছেন । বেথায় মুস্তাফিজের মুখ নীল হয়ে আছে । পুত্রের নীল মুখের দিকে তাকালে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে ।

গত রাত থেকে তিনি অসহায়ের মতন মুস্তাফিজের বিছানার পাশে বসে আছেন । মুস্তাফিজকে তার হলের রাজনৈতিক নেতারা মেরেছে । সবাই সরকার দলের লোক । হাত পা লম্বা । গভীর রাত পর্যন্ত ছেলেটাকে মেরে হাত পা ভেঙে দিয়েছে । সে চিৎকার করেছে । কেউ তাকে বাঁচাতে আসে নি । মুস্তাফিজের দোষ সে নাকি শিবির করে । কিন্তু তিনি তো তার পুত্র কে চেনেন । ছেলে কোন কালে রাজনীতির ধারে কাছেও যায় নি । সেই ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে এই ভাবে কেউ মারতে পারে তা তিনি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না । হাজার হোক যারা মেরেছে তারাও তো মানুষ । তাদের ও তো পিতা মাতা আছে । একদিন সন্তানের খোঁজ না পেলে অস্থির হয়ে থাকে । সাজ্জাদ সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । মানুষের নিষ্ঠুরতায় তিনি বড়ই বেথিত ।

~ আব্বা চুপ হয়ে আছেন যে ?
~ এমনি গো বাপ । তোমার এখন কেমন লাগে ।
~ ভালো না আব্বা । বড়ই বেথা । পায়ের মধ্যে টনটনায় ।
~ বাপ আমার আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করো । আরাম হয়ে যাবে বাপ । তুমি সুস্থ হয়ে যাবে ।
~ কবে সুস্থ হব আব্বা । আমার পা ঠিক হবে তো আব্বা । পায়ে যে কোন বল পাই না ।

এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবেন তিনি বুঝতে পারছেন না । ডাক্তার বলেছে সুস্থ হতে সময় লাগবে । সময় নির্দিষ্ট না। সাজ্জাদ সাহেব তার পুত্রকে মিথ্যা বললেন , " অবশ্যই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে বাপ । নিশ্চিন্ত থাকো । আল্লাহ্‌ আছেন । "

~ আব্বা আমি কি পরীক্ষা দিতে পারবো ?

সাজ্জাদ সাহেবকে আরেকটা মিথ্যা কথা বলতে হবে । এই মিথ্যা বলতে গিয়ে তার গলা ধরে আসে ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×