somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পায়েস বউ (অনুগল্প)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


( উৎসর্গঃ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি । যাঁদেরকে স্বদেশের মাটি পরম মমতায় আগলে রেখেছে । )

- মা ভাত খাবো না । ওয়ক থু । ভাত কেউ খায় ?
- কেন বাবা ? অবশ্যই ভাত খেতে হবে। ভাত না খেলে পেটে পোকা হবে । এই পোকা লাফালাফি করবে । তখন বুঝবে মজা ।
- হোক পোকা । তাও খাবো না । আচ্ছা মা, পোকা দেখতে কেমন হবে ? কার্টুনের মতন হবে মা ?
- না , এই পোকা হবে ভয়ঙ্কর । দাঁত হবে বড় বড় । হলুদ রঙের । এই দাঁত দিয়ে পেটে কামড় দিবে ।
- মা পোকারা দাঁত মাজে না । ছি ছি ছি । মা পোকাদের তুমি বোকে দিবে , আচ্ছা মা । দাও , ভাত দাও মা। পেটে পোকা কামড়াচ্ছে ।

খোকন এই বলে বিছানায় শুয়ে পড়লো । পেটে হাত দিয়ে মুখ বাকালো । ভাব এমন যে সত্যি সত্যি তার পেটে পোকা কামড় দিচ্ছে । সেই অবস্থায় ভাত খাওয়ার জন্য মুখ হা করে রেখেছে । মিতা তার ছেলের কাজ দেখে হেসে ফেললেন । ছেলে বড় হচ্ছে এক গুন , তার দুষ্টুমি বড় হচ্ছে তিন গুন । সব হচ্ছে তার বাবার কারনে। ছেলে বাবা বলতে পাগল । বাবা ছেলে বলতে দুই ডিগ্রি বেশি পাগল । খোকনের বাবা জামিল আহমেদ আর্মির মেজর । খুবই রাগি মানুষ । একবার চড় দিয়ে এক লোকের নাকি দুইটা দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন। এই গল্প শোনার পর খোকন তো হেসেই কুটি কুটি । যখন তার দুধের দাঁত নড়ে যায় , বেথা হয় তখন কাউকে হাত দিতে দেয় না । বাবার জন্য বসে থাকে । বাবা আসলেই দৌড় দিয়ে কাছে যায় । কাছে গিয়ে বলে " বাবা, বাবা আমাকে চড় দাও । চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দাও । খুব বেথা বাবা । জলদি চড় দাও । " জামিল সাহেব হেসে ছেলে কে জড়িয়ে ধরেন । যা ছেলে হয়েছে তার ।

- মা, বাবা কখন আসবে ?
- আসবে বাবা । কাজ শেষ হলেই চলে আসবে ।
- মা, মা আজ বাবা আসলে বলবো পোকাদের চড় দিতে । এরা দাঁত মাজে না । চড় দিয়ে হলুদ দাঁত ফেলে দিবে। কেমন হবে মা । আমরা এই দাঁত নিয়ে খেলবো , ঠিক আছে মা ।

মিতা তার ছেলের কথা শুনে হাসতে থাকেন । খোকন এখন কথার পিঠে কথা বলে । আজ খোকনের বাবা আসলে বলতে হবে ছেলে বড় হয়েছে । এখন পড়াশোনা দরকার । স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে । আচ্ছা আজ ওর বাবা এতো দেরি করছে কেন ? আজ তো ওর জলদি আসার কথা । মিতা আজ খুব আগ্রহ করে ওর জন্য পায়েস রান্না করেছে । ও পায়েস খুব পছন্দ করে। পায়েস পেলে মানুষটার আর কিচ্ছু চায় না । মিতা খুব ভালো পায়েস রাঁধে । তার পায়েস রাঁধার গোপন রেসিপি আছে । এইটা তার আবিষ্কার । এই কারনে জামিল তাকে পায়েস বউ বলে ডাকে ।

অনেক বেলা হয়ে গেলো । জামিল এখনো আসছে না । মিতার কি করবে বুঝতে পারছে না । ও এতো দেরি করছে কেন । মিতার চিন্তা বাড়লে ও একশো থেকে উলটো করে গুনতে থাকে । এখন সে এই কাজ করছে । কুড়ি পর্যন্ত গুনতেই মিতার ফোন বেজে উঠলো । ও পাশ থেকে জামিল কথা বলছে ।

- মিতা খোকন কোথায় ?
- এই তুমি আজ এতো দেরি করছ কেন । আমি তোমার জন্য রান্না করে বসে আছি । খোকন ঘুমাচ্ছে গো । তোমার কথা বার বার বলছিল ।
- মিতা শোন , আমাদের এখানে সমস্যা হয়েছে ।
- এই কি সমস্যা হয়েছে । তোমার বিপদ হয় নি তো ।। তুমি ভালো আছো তো ।
- মিতা শোন আজ বিডিআর এর দরবার হলে কিছু সমস্যা হয়েছে । আমি এখানেই আছি । ওরা গুলি করছে । - তুমি চিন্তা করো না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।

মিতা কাঁদতে শুরু করেছে । 'এই শোন আমি কিচ্ছু বুঝি না । তুমি ওখান থেকে চলে আসো । ওখানে তোমার থাকার দরকার নাই । তুমি চলে আসো প্লিজ ।'

- মিতা শোন , আমার কিচ্ছু হবে না । খোকন কে দেখো । রাতে একসাথে খাবো ।

- না না , তুমি এখনি চলে আসো । তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না । তুমি চলে আসো প্লিজ । দোহাই তোমার । আমি তোমার জন্য পায়েস রান্না করেছি । তুমি চলে আসো ।

মিতা শোন ওরা অনেক কাছে চলে এসেছে । পরে কথা বলবো । মিতা শোন ............... খোকন ............।।

ওপাশ থেকে কল কেটে গেছে । মিতার খুব হতাশ লাগছে । চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে । ও বার বার বলছে ' তুমি চলে আসো । প্লিজ তুমি চলে আসো ।' কান্নার শব্দ গোপন করতে গিয়ে মিতার বুক ফেটে যাচ্ছে । খোকন ঘুম থেকে উঠে পড়েছে । খোকন মার কান্না দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । কি করবে বুঝতে পারছে না । সে মার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । "মা , ও মা । কান্না করলে পোকা আসবে । পেটে কামড় দিবে মা । " মিতা খোকন কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো ।

ঘটনা ২ঃ

মিতা রাতের খাবারের আয়োজন করেছে । আজ শুধু পায়েস দিয়ে রাতের খাবার খাওয়া হবে । তাদের তিনজনের জন্য তিনটা বাটি । খোকন তার পছন্দের লাল বাটি নিয়ে বসে আছে । ও খুব অস্থির । বার বার প্রশ্ন করছে ।

- মা বাবা কখন আসবে । পায়েস তো ঠাণ্ডা হয়ে গেলো । ও মা ঠাণ্ডা পায়েস খেলে পেটে পোকা হয় তো ।

মিতা চুপ করে বসে আছে । জামিল বলেছে রাতে একসাথে খাবার খাবে । ও মিথ্যা বলে না । ও অবশ্যই আসবে । এর মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে । ও সব ঠিকঠাক করেই আসবে । পথে বোধয় আটকে গেছে ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×