মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিমান করেছেন,আমার মনে হয়নি ।বরং বিচক্ষণতার সাথে একটা ভয়াবহ বৈষম্যের মৃত্যুপরোয়ানা পাঠ করেছেন।প্রথমে,কেন কোটা বাতিল করা যায় তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড দাঁড় করিয়েছেন।উন্নয়নশীলদেশের প্রাথমিক শর্ত পূরণের বিষয়টা দিয়ে শুরু।মধ্যমআয়ের দেশ এবং উন্নয়নশীলদেশ এই দুইটা টার্মের সাথে ৫৬% কোটা তাচ্ছিল্য করে।যেহেতু সংবিধানে বলাই আছে কোটা অনগ্রসর ও পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য,সেখানে ৫৬% কোটা মূলত বিশাল অংশের পিছিয়ে থাকাকেই উপস্থাপন করে।ফলে,৫৬% কোটা সরকারের অর্জন বলে প্রচারিত মধ্যমআয়ের দেশ ও উন্নয়নশীলদেশের যৌক্তিকতাকে কুঠারাঘাত করে।এরপর টার্ন করলেন শিক্ষাব্যবস্থার দিকে।একটা ফিরিস্তি দিলেন।তার মানে এই,এখন সবাইকে কম্পেটেটিভ করে গড়ে তুলা হয়েছে।একই সাথে যোগ করলেন কোটাধারীরাও কোটা চায় না।প্রতিযোগিতা করতে চায়।মুক্তিযুদ্ধারা সম্মান চায়।তবে নৃগোষ্ঠী আর প্রতিবন্ধী এসবের বাইরে।
এখন পুরস্কার বিতরণ পর্ব।স্বাভাবিক নিয়মেই তৃতীয় পুরস্কার থেকে শুরু।আন্দোলনকারীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন,বিরক্তি প্রকাশ করলেন।অর্থাৎ যারা নিজেদের বঞ্চিত ভাবছেন,তাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন সরকার চাইলেও তাদের কোটা রাখতে পারছেন না,তাদের জন্য শুধুই ভালোবাসা।দ্বিতীয় পুরস্কার দিলেন শিক্ষক সমাজকে,বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কে।এরপর প্রথম পুরস্কার পরিষ্কার কথা-- কোটা বাতিল।যার কৃতিত্ব এককভাবে সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের।
এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন- কোটা বাতিল কেন? সংস্কার চেয়েছিলাম।আমি এখানে সংস্কারই দেখতে পাচ্ছি।হয়তো সংস্কারটা আপনার মনের মতো হয়নি।কিন্তু যাদের কোটা পাওয়ার অধিকার(প্রতিবন্ধী আর নৃগোষ্ঠী) আছে তাদের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।এখন দেখতে হবে সেই ব্যবস্থাটা কি? আন্দোলনের মূল স্পিরিটের পরিপন্থী কিনা? বা সরকার কবে থেকে এই ঘোষণা কার্যকর করবেন?এই ক্ষেত্রে আন্দোলনের ফলোআপটা খুব তীক্ষ্ণভাবে করতে হবে।
অনেকের মনে এখনো দ্বিধা কাজ করছে এইভেবে যে,নতুন কোন চক্রান্ত আসছে কিনা?এই ধাধার সমাধান আপনিই।আপনি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ক্ষুব্ধ,সচেতন।তীক্ষ্ণ বুদ্ধির সরকারপ্রধান আপনাকে পুনরায় রাস্তায় নামানোর মতো বোকামি করবে? এটাও একটা ধাধা।আপনিই ভেবে দেখেন।
তাছাড়া আদালত বলেই দিয়েছে- কোটা আদালতের নয়,সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তবে আপনি যখন কোটাকে উপহার সামগ্রী বা সম্মানের মাধ্যম বানাবেন, খুব সচেতনভাবে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ আছে।কোটা একটা করুণা,দান।এটা ততো দিনের জন্য,যতদিন না পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে মেইনস্ট্টিমে নিয়ে আসা যায়।এটা যত দীর্ঘ হবে,সরকারের দুর্বলতাই প্রকাশ পাবে,রাষ্ট্রের ব্যর্থতাই মনে হবে।অবশ্যই,প্রতিবন্ধী সকল হিসাবের বাইরে।রাষ্ট্র যে অবস্থাই থাকুক শুধু কোটা নয়, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তটাই আপাত সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে।যে কারণেই করুক না কেন!