somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মনিরপেক্ষতা: শোষনের নির্লজ্জ হাতিয়ার

০৯ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সকাল ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ নিজেকে কিছুর ব্যপারে 'নিরপেক্ষ' দাবী করলেই দু'টোর একটা সত্যি হয়: হয় সে সুবিধাবাদী আর না হয় সংশ্লিষ্ট ব্যপারগুেলা তার কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না সংগত কারণেই, তাই সে কোন পক্ষ নিতে আগ্রহী না।

রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে কেউ নিজেকে 'নিরপেক্ষ' দাবী করলে সে হয় সুবিধাবাদী হয়। কোন একটা দলের পক্ষে সাফাই গেয়ে ঝামেলায় জড়াতে চায় না বলে পক্ষ বাছাই করতে নারাজ। অথবা সে সবগুলো দল নিয়ে খুব চরম বিরক্ত, বিরক্তি থেকেই কোন পক্ষ নিতে আগ্রহী না।

ধর্মের ব্যপারেও তাই। কেউ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ দাবী করলেই বুঝি সে হয় সুবিধাবাদী--কোন পক্ষ নিয়ে েব্কায়দায় পড়তে চায় না। অথবা কোন ধর্মই তাকে অতটা কাছে টানতে পারে না, যাতে ধর্ম কোন 'ব্যপার' হতে পারে।

দু'েটাই শঙ্কাজনক। প্রবল শঙ্কাজনক।

সুবিধাবাদী মানুষ মাত্রই স্বার্থপর। বুঝে না, বিচারকও নিরপেক্ষ থাকে না, থাকে ন্যায়ের পক্ষে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারগুলোতে নিরপেক্ষতা কোন পথ হতে পারে না।

'ধর্মনিরপেক্ষ' শুনে আমরা প্রথমটা বুঝতে চাই না। পৃথিবীতে উন্নত জাতিগুলো নিজেদের 'ধর্মনিরপেক্ষ' দাবী করে বলেই আমরা ভাবতে চাই, 'ধর্মনিরপেক্ষতা' মানেই প্রগতির লক্ষণ। উদারতার লক্ষণ। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মের নামে নিষ্পেষন শেষ হওয়ার সময় এলো বুঝি। মনে মনে সাম্যের গান গেয়ে নেই। গলা বড় করে বলি, 'সব ধর্ম সমান'। যদি বলতে না পারি 'সব ধর্ম সমান' তাহলে নিজের কাছেই ক্যামন ছোট হয়ে যাই। প্রগতিবাদী হওয়ার জন্যই ধর্মনিরপেক্ষ হতে চাই।

আমার প্রশ্ন, যদি কারও ধর্ম থাকে, তাহলে তাকে কেন দাবী করতে হবে সব ধর্ম সমান? যদি সব ধর্ম সমানই হয়, তাহলে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম মানাটা কি একটু বোকামী হয়ে গেল না? বছরের এক এক সময় এক এক ধর্ম মানলেই হয়। অবশ্য তাতে শুধু নতুন আরেক ধর্মের সৃষ্টি হবে! কিন্তু প্রতিটা ধর্মই নিজের ধর্মকে 'সত্য পথ' বলে দাবী করে। ওই দাবীটা মানা মানে, সে ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে পারছে না। তাই কেউ নিজেকে কোন ধর্মের একনিষ্ঠ ভক্ত বলে দাবী করার পরে ধর্মনিরপেক্ষ দাবী করে আমার হিসেব মিলে না!

আচ্ছা দেখুন, আমার দেয়া দ্বিতীয় সংজ্ঞাটা: ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কোন ধর্মই তাকে অতটা কাছে টানতে পারে না, যাতে ধর্ম কোন 'ব্যপার' হতে পারে। তারমানে কোন ধর্মই তার কাছে 'ব্যপার' না। বুঝতে পারছেন, এটা যে নতুন এক ধর্ম, যেখানে প্রচলিত/প্রাচীন ধর্মগুলোর কোন অবস্থান নেই। বরং সবগুলো পুরানো ধর্মকে 'ব্যপার না' বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া হয় বলেই চমকদার নতুন ধর্মের পথ খুলে দেয়, যে ধর্মের নাম 'ধর্মনিরপেক্ষতা'।

ধর্মনিরপেক্ষতার মত শান্তি আর সাম্যের চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকে আর সব প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে প্রবল রকমের অশ্রদ্ধা। স্বঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের কিছু লক্ষণের মধ্যে অবধারিত ভাবে আসবেই এই লক্ষণটা--আর সব ধর্মের বিরুদ্ধে অসম্মান দেখিয়ে জাতে উঠার জান কয়লা করা প্রচেষ্টা। এবং এভাবে মানুষের মারাত্মক সংবেদনশীল একটা জায়গায় নোংরা হাতে ডলাডলি করা, খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করা।
একটু মিলিয়ে নিন চারপাশে।

সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, ডেনমার্কে মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন নিয়ে তুলকালাম কান্ড। মুসলিমদের নিয়ে ব্যাঙ্গ করুক, হিজাব, চার বিয়ে, জঙ্গীবাদী সব কিছু নিয়ে ব্যাঙ্গ করুক, মুসলিম বিশ্বে অত তুলকালাম কান্ড কখনই হবে না। হতো না। কিন্তু মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন নিয়ে করার কারণ হচ্ছে, এক একজন মুসলিম, সে ইসলামের সব অনুশাসন মানুক বা না-ই মানুক, সে মুহাম্মদ (সা) কে নিজের বাবা মা কিংবা সন্তানের চেয়ে বেশি ভালবাসে। এই একটা ব্যপার 'ধর্মনিরপেক্ষ' মানুষেরা কখনই বুঝতে পারবে না। এবং নিজের মাকে, বাবাকে নিয়ে চূড়ান্ত রকমের নোংরা কথা বললে যত কষ্ট হয়, তার চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়ে যাবে। স্রেফ এই 'ব্যপার-না' ভাবের জন্যই। বুঝতে না পারার জন্যই।

ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের দাবী... ধর্মকে ঘরের চার দেয়ালে বন্দী করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তাদের কাছে ধর্মের আইডিয়াটা ইন্টারেস্টিং। তাদের নিজেদের কাছে ধর্ম বা ঈশ্বর হয় 'ব্যপার না' বা 'সময়বিশেষে ব্যপার'। সময়বিশেষে যখন 'ব্যপার' তখন 'শখের ঈশ্বর' এর কাছে যায় ওরা। গ্রন্থে বা শাস্ত্রে কি লেখা আছে তা কোন ব্যপারই না ওদের কাছে। 'শখের ঈশ্বর' এর কাছে যাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত সময়: যখন নিজের প্রয়োজন হয়। অস্থির লাগছে, জায়নামায বা পূজার পট নিয়ে বসে যাবে। পরীক্ষায় ভাল ফল দরকার। বসে যাবে আয়োজন। বিয়ে বা জন্মদিনে একটু রঙিন ব্যপার দরকার... অনিশ্চয়তাটা কারো হাতে সপে দিয়ে নিশ্চিত হওয়া দরকার... 'শখের ঈশ্বর' আছে না?

তাদের এই স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার যারা মানতে রাজী হয় না, তাদের কিন্তু কম শুনতে হয় না। শখের ঈশ্বর বা প্রয়োজনের ঈশ্বরকে যখনই দেখে শখ মেটানোর চেয়ে বড় কোন কাজে লাগানো হচ্ছে, তখনই তাদের নানা ধরণের কমপালসিভ ডিজওর্ডার শুরু হয়। সেটা গায়ে তীব্র চুলকানি থেকে চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসা, ঘন ঘন শ্বাস পড়া, হৃদপিন্ডের দ্রুত গতিতা পর্যন্ত হয়। ইমিডিয়েট রেসপন্স হিসেবে প্রথমে শুরু হয় হুল ফুঁটানো মন্তব্য। এবং তারপরে, যে কোন উপায়ে তীব্র প্রতিরোধ। শখের ঈশ্বরকে তাঁর আসল আসনে আসীন দেখে কি রকম একটা অপ্রতিরোধ্য ভয়ের স্বীকার হন মানুষগুলো।

এই যে মানুষগুলো আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার, আমার 'ধর্ম' কে 'ব্যপার না' ভেবে সব ধরণের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন, ব্লাসফামি বলে কিছুকে আখ্যায়িত করা হলেই সেটা খুঁচিয়ে দিয়ে মজা দেখবেন, এই ব্যপারটাতেই আমি তাদের সাম্যের বাণীর চরম বৈপরিত্য খুঁজে পাই। মানুষের বিশ্বাসের প্রতি চরম ঘৃণা নিয়ে পোলারাইজ করতে দেখি। তাই দু:খিত, ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে একই কাতারে দাঁড়াতে পারব না কখনও। তারচেয়ে আমার ধর্মের 'পক্ষ' নিব, যেখানে অলংঘনীয় নীতি হিসেবে বলা আছে:

ধর্মের (দ্বীনের বা জীবনপথের) ব্যপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই'। (আল বাকারা: ২৫৬)

'আর তোমার প্রভু যদি চাইতেন, তাহলে পৃথিবীর বুকে যারা আছে, তাদের সবাই ঈমান আনত এক সাথে। এরপরও কি তুমি মানুষের উপর জোরজবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য?' (ইউনুস: ৯৯)

(লেখাটা অনেক আগের লেখা। গালাগালি শোনার মুডে নাই। বমি করতে হইলে অন্য ব্লগে করতে পারেন। আলোচনা হইতে পারে। আপাতত ঘুমাবো, আগামী কাল দেখা হবে।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×