somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বছরে দুইশ পোস্ট (আস্তমেয়ে)

২২ শে মার্চ, ২০০৭ ভোর ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগে আমার এক বছর হলো মার্চের দশ তারিখ। ইচ্ছা ছিল দুইশ' তম পোস্ট তখনই দিব। লিখে কুলাতে পারি নি। অবশেষে সময় আসল, তবু হাত খুলছে না কিছুতেই। অনেক দিন একশ' নিরানব্বইতে আটকে ছিলাম। আজ মনে হল--লিখেই ফেলি।

হু, দুইশ পোস্ট করেছি। এক বছর থেকেছি। তো কি হয়েছে? এমন করে ঘোষণা দিয়ে বক্তৃতা ছাড়ার কি আছে? আমি জানি, নো বডি কেয়ারস। কিন্তু, আমার কাছে এই দুইশটা পোস্ট আর একটা বছরের মূল্য যে অনেক বেশি! লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না একদম!

ব্লগে আর কারও এমন হয়েছে কি না জানি না, আমি কিন্তু যেদিন ব্লগ খুঁজে পেয়েছি তার পরের দিন থেকেই ধুমায়ে ব্লগ করা শুরু করেছি। একটুও অপেক্ষা করি নি, এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি নি ঘটনা কি, লোকে কি বলে, কি শুনতে চায়। লেখার শুরুটা হয়েছিল একান্তই নিজের জন্য। বাংলাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্য।

আমি দেশ ছেড়েছি পনের বছর বয়সে। হাতে গোণা অল্প কিছু বাংলা বই ছিল সাথে। ওগুলো এত পড়েছি যে ওগুলোর কোন পাতায় কি আছে, সব বলে দিতে পারব। কয়েকটা চিঠি লিখেছি বন্ধুদের। পাঁচটা সিডিতে পাঁচশর মত গান এনেছিলাম বাংলা। আমার বাংলা চর্চা বলতে তো এতটুকুই!

প্রবাসীরা বাংলা চর্চা যেভাবে করে, সেই পথগুলোতে আমি যাই নি। আমি খবরের কাগজ পড়ি না। খবরের কাগজ পড়লে আমাকে বিষণ্নতা আর হতাশায় পেয়ে বসে তাই। লোকে দেশের বাইরে গেলে খুঁজে খুঁজে ইন্টারনেটে বাঙালীদের ফোরাম বের করে, সেখানে আশ মিটিয়ে বাংলা চালায়। প্রথম প্রথম খুঁজেছি বাঙালী ফোরাম, গিয়ে হতাশ হয়েছি... যেগুলো পেয়েছিলাম সেগুলোতে টাঙ্কি মারা ছাড়া আর কিছু হয় না। মানুষগুলোর স্বপ্ন নেই, কেবল হতাশা। মানুষগুলোর জীবনের কোন দর্শন নেই, শুধু ভেসে চলা।

চলে আসলাম। প্রবাসী বাঙালীদের স্ট্রেস রিলিফের আরেকটা উপায় হল--সাপ্তাহিক বাঙালী আড্ডায় বাংলাদেশ এবং বাংলা চর্চা করা। এই ব্যাপারটা থেকেও আমি বঞ্চিত ছিলাম, কারণ আমার ওঠা বসা 'এদেশে' বড় হওয়া বাংলাদেশীদের সাথে, বাংলাদেশকে দেখার চোখ ওদের বড় বেশি 'আন্তর্জাতিক'। আমার আটপৌরে মা, যার ছায়ায় ঘরে ফেরার শান্তি পাই, সেই বাংলাকে খুঁজে পাই না।

ব্লগ খুঁজে পাওয়ার এক মাস আগে মোটে আমি বাংলাদেশ থেকে দ্্বিতীয়বার আসলাম। আমার প্রবাস জীবন শুরুর পরে প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমন। খুবই নস্টালজিক। ব্লগ পেয়ে আমি মুক্তি পেয়ে গেলাম। আর কোন কারণ দেখাতে হবে, ব্লগ খুঁজে পেয়ে কেন বিপুল আনন্দিত হয়েছি?

অনেক তো পেলাম। খুঁজে খুঁজে বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। আসলে গত এক বছর আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর ছিল। উহু, ব্লগিঙের জন্য না। গত বছরটা আমার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য খুব খারাপ একটা মার্কা মারা বছর ছিল। অনেক শিখার বছর। বড় হওয়ার বছর। দু' দু'টো বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার বছর, যেই দু'টো বড় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেকগুলো রাত নির্ঘুম কেটেছে। আমার স্বপ্নগুলো মাঝ পথে হুট করে হারিয়ে গিয়েছিল। রং হারিয়ে সাদা কালো হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়েই ব্লগ এল।

ব্লগে একটা বড় সময় কাটা ছাড়াও, অনেক ঘুরেছি। অনেক কিসিমের মানুষের সাথে মিশেছি। প্রচুর বই পড়েছি। আমার প্রথম পাঁচটা ব্লগ, মাঝের পাঁচটা ব্লগ আর শেষ পাঁচটা ব্লগ পড়ে বুঝতে বাধ্য হবেন, মেয়ে পরিবর্তিত, অভিযোজিত হয়েছে। ব্লগের বাইরের আর ভিতরের চাপে পড়ে।

মাঝে কয়েকদিনের যেই প্রচন্ড অর্থহীন, আনফেয়ার, জঘন্য রকমের কান্ড ঘটেছে আমাকে ঘিরে, শুধু ওই সময়টার ক্ষত এখনও শুঁকায় নি, শুঁকাতে সময় লাগবে। মানুষ কতটা বোধহীন হয়, আমার ছোট্ট জীবনে এত ভাল করে আগে বুঝি নি। ওই সময়ে কে কোথায় কি বলেছে তার প্রতিটা গাঢ় হয়ে বসে গিয়েছে মনে, ওসবের হিসাব আমার মিলে নি।

এছাড়া আর প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে মহামূল্যবান।

ব্লগে সবচেয়ে বেশি যেটা উপভোগ করেছি, নি:সন্দেহে, বিনা হিসেবে বলে দিচ্ছি--এতগুলো মানুষের জীবন ছোঁয়া। একটা বড় সময় তর্ক করে, গালি খেয়ে, অভিমান করে, কম্পিউটার দুম করে বন্ধ করে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলে তারপরে চোখ মুছে একটা ঝগড়াটে উত্তর লিখে, ভাল লাগার ঢেউয়ে দুলতে দুলতে, খুব খুশিতে আত্মহারা হয়ে... সময়গুলো কেটেছে ব্লগারদের সাথেই। তাঁদের জানা মতে, কিংবা অজানায়। বেশ কয়েকজন ব্লগারের সাথে সম্পর্কটা ব্লগের পরিধি টপকে জিমেইল/এমএসএন/ইয়াহু, এসএমএস এমনকি ফোনে কথা বলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। আই লাভড ইট। মানুষগুলোর জীবন ছোঁয়া আমার জীবনের খুব বড় প্রাপ্তিগুলোর একটা। এভাবে না হলে কখনই, কোন হিসেবেই এই মানুষগুলোর সাথে আমার কথা হওয়ার কথা না। দিনে একবার কথা না হলে রাতে ঘুম হবে না, ওমন হওয়ার কথা না। ব্লগের জন্য হিসাব মিলে গেল।

এখানে মজার ব্যাপার হল, আমার ব্লগের চরিত্র তথাকথিত 'বিতর্কিত' বলে, ব্লগের বাইরের পিঠ চাপড়া চাপড়ি ব্লগে এসে পেঁৗছায় নি। একজনের নিজ মুখের ঘোষণা, 'আস্তমেয়ে'কে সে অপছন্দ করে, আসল আমিকে পছন্দ করে। ঝামেলা! এইটা শোনার পরে সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেলাম, আমি তো কখনও অভিনয় করি নি, তবু আমার ভার্চুয়াল চরিত্র কেন অন্যরকম হবে?

[গাঢ়]ভেবে যা বের করলাম তা ব্লগিং শুরু করার একদম শুরুতেই জানলে আমার পুরো ব্লগিংটাই হয়তো অন্যরকম হতো।[/গাঢ়]

আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন, আমাদের যেই চেহারা ভার্চুয়াল জীবনে ফুটে উঠবে, সেটা কখনই পূর্ণ চেহারা না। আমাদের আসল 'আমিত্বের' খুবই অল্প একটা অংশ। সমস্যা হল, আমাদের সামনে ব্লগারদের বিচার করার মানদন্ড ওই একটায়, বিভিন্ন সময়ে তার বলা নানা কথাগুলো। নিশ্চিত হন আপনারা, ব্লগারদের পিছনের এক একজন মানুষ আসল জীবনে এর চেয়েও অনেক বড় (কিংবা ছোট!)। এই আমি, প্রথম দিকে পুরাটা সময় চেষ্টা করে গিয়েছি মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে। বোকা আমি বুঝি নি, মানুষগুলোর মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিশ বছর ধরে। আমার বিশ মিনিটের উত্তরে তার কিচ্ছু বদলে যাবে না। এই আমির বেলাতেও তা সত্যি।

আরেকটা মজার ব্যাপার খেয়াল করলাম। সাইকোলজিতে ইনডিভিজুয়াল সাইকোলজি আর গ্রুপ সাইকোলজি আলাদা করে গবেষণা করা হয়। এর পিছনের কারণ হলো, আমরা মানুষের সামনে বদলে যাই। অল্প মানুষের সামনে আমাদের চরিত্র এক রকম। বেশি মানুষের সামনে আরেক রকম। পরিচিত মানুষের সামনে একরকম, অপরিচিতের সামনে আরেক রকম। সামাজিক আমরা খুব অন্যরকম। ইন্টারেক্টিভ ব্লগ বলে ব্লগটাও আস্তে আস্তে সমাজ হয়ে গিয়েছে।

একই মানুষকে ব্লগীয় পরিসরে চিনে, আস্তে আস্তে ফোন পর্যন্ত আবিষ্কারের ব্যাপারটা সত্যিই অনন্য। ওই যে, বড়ত্বটা বড় করে ধরা পড়ে চোখে, তাই। আমার দুর্ভাগ্য, সবার থেকে খুব দূরে থাকি। না হলে মানুষগুলোর সাথে সময় কাটাতাম কিছু। আরেকটু ছুঁয়ে দিতাম।

আমার খুব মানুষ দেখার শখ। উত্তর বঙ্গে খালি পায়ে ঠেলা গাড়িতে চলার পাশাপাশি ইউরোপের আল্পস মুগ্ধ চোখে দেখতে চাই। চীনের কোন গ্রামে বসে পূর্বপুরুষের বন্দনা করতে চাই। আফ্রিকার সুন্দর মানুষগুলোর সাথে আগুন ঘিরে বসে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চাই। সাউথ আমেরিকার খোলা মনের মানুষগুলোর সাথে গলা মিলিয়ে হাসতে চাই, গান গাইতে চাই। মধ্যপ্রাচ্যের মাথা গরম মানুষগুলোর পাশে কালো বোরখায় নাক ঢেকে 'কেউ একজন' হয়ে যেতে চাই। মেয়ে আমি। আস্তমেয়ে। মেয়েদের অনেক বাঁধা, নিজের তৈরি, সমাজের তৈরি, ভালবাসার তৈরি। কতদূর পায়ের চিহ্ন ফেলতে পারব জানি না। কিন্তু এই একটা বছর আপনাদের সাথে থাকলাম, অনেকগুলো 'মানুষ' দেখলাম... আমার খুব বেশি ভাল লেগেছে। খুব।

কখনও 'হুমকি' দেই নি, ব্লগ ছেড়ে ভাগব। দিবও না। এত পেয়ে নিমক হারাম হই ক্যামনে? তবে আপাতত এখানে দুইশ পোস্টই থাকুক। লিখব mܨvevwZ হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৩:২২
১০৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×