দুর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়ানো একটি সরকার দিন দিন স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে- এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই এর প্রভাব সব স্থানে পড়বে। পত্রিকা বন্ধ হবে, টিভি চ্যানেল বন্ধ হবে, সম্পাদক জেলে যাবেন। ব্লগ বন্ধ হবে, ব্লগার কিংবা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টরা জেলে যাবে। আর যারা প্রাণ বাচিয়ে থাকবেন তারা থাকবেন গোলামী মানসিকতা নিয়ে, প্রথম শ্রেণির স্তাবক হয়ে, দালালী করে। যারাই একটু বাঁকা চলার চেষ্টা করবেন তারা স্বীকার হবেন এই দমননীতির।
এর আসলে কোন সমাধান নেই। যতদিন সরকার নৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন তাই হতে থাকবে। কারণ, তাদেরকে সরিয়ে ফেলানোর একটা আতঙ্ক সব সময়ই কাজ করবে।
এখন আপনি সরকারের এই চাওয়ার কাছে নিজকে সমর্পন করবেন, নাকি নীরব হয়ে বসে থাকবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে একে কাত করে ফেলে দেবার শক্তি আপনার হবে না। কারণ, এর মাত্র যাত্রা শুরু। এটি বড় হবে, পাকবে তারপর পঁচবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগে এর কোন পরিবর্তন না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
একটি গণতান্ত্রিক মনোভাবের সরকারের এই অধ:পতন তা অবশ্যই ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। কথা হচ্ছে সরকার কেন অনলাইনের উপর নজরদারি বাড়াবে? নিশ্চয় সরকারের দুর্বলতা রয়েছে। তা ছাড়া দাবি করা হচ্ছে রাজপথে আন্দোলন করতে না পেরে এখন একটি গোষ্ঠী অনলাইনে অংশ নিচ্ছে।
কিন্তু সরকার কি পারে না তাদের ক্ষোভের প্রশমনটা ঘটাতে? তারা প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো অংশ না নিতে পেরেই তো অনলাইনে প্রবেশ করেছে। প্রধান সারির মাধ্যমগুলোতে তাদেরকে দূরে সরানো হলো কেন? এখানেই কী এই বিষবৃক্ষের অঙ্কুরোদগম ঘটানো হলো না?
হ্যা, সরকার যদি নিজেদেরকে মজবুত খুটির উপর ভিত্তি করা একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিজেদেরকে ভাবতে পারত তাহলে তাদের কোন ভয় ছিলো না। কিন্তু আংশিক গণরায় আঙশিক মানুষকে রায় প্রদান থেকে বঞ্চিত করে যে সরকারের জন্ম হলো তা একটি অস্বাভাবিক শিশু। তার কাছ থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যাবহার আশা করা বৃথা।
এখন একটি শিশু যেহেতু অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে তাকে কি করা যায়? তার সৃষ্ট অনাচার সহ্য করতেই হবে। তবে আশা এই যে, শিশুটি অসুখে আক্রান্ত। সুতরাং স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অর্থাত তার রোগই তাকে তার মৃত্যু ডেকে আনবে।
এই পরিণতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার কোন ওষুধ আওয়ামী লীগের কাছে আছে কী? হ্যা, শক্তি আছে, অনুগত প্রশাসন আছে, প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাহায্য করা আশ্বাস আছে। যা প্রতিটি স্বৈরাচারী শক্তিরই থাকে। কিন্তু ভাল শাসক হয়ে মানুষের মন জয় করে তাদের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার ইচ্ছে কি আ্ওয়ামী লীগের আছে? নাকি পূর্ব প্রতিশোধ নেওয়াই তাদের টার্গেট?
প্রতিশোধ নেওয়াই যদি টার্গেট হয় তাহলে আমি বলবো এই প্রতিশোধে আরো নতুন প্রতিশোধের জন্ম দেবে। বংশপরম্পরায় তা চলতেই থাকবে।উভয় পক্ষ থেকেই রক্ত ঝড়তে থাকবে। ঠিক যেমনটি ঘটে চলেছিল রসুলাল্লার আগমন পূর্ববর্তী ইয়াসরীবের। আমরা দেখেছি তাদের এই বিবাদ যখন রসুলের মাধ্যমে একটা নিষ্পত্তিতে পৌছলো তখন তারা পৃথিবীতে একটি বিজিত শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করলো।
আর আমাদের দেশ যদি এইভাবে একে অন্যের প্রতি অন্যায়ের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে ততপর থাকে তাহলে তা অনন্তকাল ধরেই চলতে থাকবে । এর কোন শেষ হবে না। কিন্তু একটা টার্ন নেওয়া কি সম্ভব নয়? আমরা কি এই চিন্তাটুকু করতে পারি না? ভাল হতে বাঁধা কোথায়? বিশেষ করে দেশের একদম টপ লেভেলে থেকে। উপর থেকে ভাল হতে শুরু করলে নিচে পর্যন্ত সহজেই ভাল করা যায়। নিচ থেকে ভাল করা যায় না। কারণ উপরের চাপে নিচ অংশটা সব সময় কাপে।
শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।