সুখ কখনো স্পর্শ করা যায় না। এটা অনুভব করবার বিষয়। অথচ এই অশ্পর্শী সুখের জন্য আমরা কি না করে থাকি। এখন যা করছি তা একটু পর সুখ পাওয়ার জন্য। কাল যা করব তা পরের দিনটিতে সুখি হওয়ার জন্য। এভাবে যুগ যুগ ধরে আমরা সুখ নামক অদৃশ্য বিষয়টির আবেশে নিজকেে জড়াতে ব্যস্ত থাকি। কখনো কখনো সুখের অনুভূতি পাই কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী রুপ ধারন করে না। কারন আমাদের চাহিদা অসীম তাই একটা সুখ অনুভূত হওয়ার পর আমাদের মনে নতুন সুখের হাতছানি মেলে। আর আমরা উঠে পরে লেগে যাই সেই সুখের সন্ধানে। আমরা চাই সুখের শিখরে আরোহন করতে কিন্তু আমাদের জীবনের অবসান ঘটে তবুও সুখের শিখর পাই না।
সুখের অনুভূতিটা পেতে আমরা বিভিন্ন রকম ধারনা পোষন করি। সুখ আমাদের মনের তৃষ্ণা । সুখের মধুর জলে মনতৃষ্ণা যখন ক্ষুন্ন হয় তখন মন শান্ত থাকে, কিন্তু আবার তার তৃষ্ণা পায় আর আমরাও শুরু করি তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা। কেউ সুনীতি করে সুখ পায় কেউ দুর্নীতির মাঝে সুখ খোজে। কেউ অন্যকে কাদিয়ে সুখি কেউ বা হাসিয়ে। কেউ আবার টাকা পয়সার মাঝে সুখের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। তাই তারা নিজের মনুয্যত্য, সততা, নীতি, আদর্শ, সব বিসর্জন দিয়ে শুধু টাকা পয়সার পিছনে দৌড়ায়। এই গোত্রের মানুষগুলো সুখ কখনোই পায় না। আবার অনেকে মনুয্যত্য, সততা, নীতি, আদর্শকে আখড়ে ধরে রাখার মাঝে সুখের অনুভূতি পায়। আমাদের আকাঙ্খা যতদিন থাকবে সুখও ততদিন তার ধাপ একের পর এক বাড়াতে থাকবে।
যাহোক, আজ আমি এক নতুন সুখের সন্ধান পেয়েছি তাও আবার ১০ টাকার বিপরীতে। একটু ভেঙ্গেই বলিঃ-
সকাল বেলা কোনো এক কাজে বাজারে আসি। একটা দোকানের পাশে বসি। একজন ভদ্র মহিলা ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। দোকানের পাশে এসে ছেলেটির বায়না চকলেট খাবে। শত আদরের সন্তান কিনে দেওয়াটাই স্বাভাবিক। ১০ টাকা দামের একটা চকলেট কিনে দেন। বিলটা পরিশোধ করার আগেই ছেলেটি চকলেট খেতে শুরু করে দিল। হঠাৎ চোখ চলে গেল দোকানের পাশে দাড়িয়ে থাকা ছোট্ট একটা ছেলের দিকে। ভদ্র ছেলেটির চকলেট খাওয়া দেখছে আর হয়ত ভাবছে, আমার মা কেন আমাকে এভাবে কিছু দেয় না, তাদের মা কত ভালো আর আমার মা কত পচা, এই চকলেট টা যদি আমি খেতে পারতাম। চকলেটটি ভদ্র ছেলেটির মুখে থাকলেও ছেড়া জামা পরিহিত ধুলিমাখা কালো বর্ণের অগোছালো চুলের ফ্যাকাশে চেহারার ছেলেটিকে দেখলে সবাই বুঝবে চোখ দিয়ে সব রস টেনে এনে তার জিভ ভিজাচ্ছে আর গিলছে। দৃশ্যটা মন দিয়ে অবলোকন করলাম। ভদ্র মহিলাটি তৎখনাত চলেগেল।
আমি টোকাই ছেলেটাকে কাছে ডাকলাম সেও বাধ্য হয়ে আসল। মাথা নিচু করে দাড়ালো। পকেট থেকে ১০ টা টাকা বের করে দিলাম আর বল্লাম একটা চকলেট নিয়ে আয়। মাথা নিচু করে টাকা নিল এবং একটা চকলেট কিনে এনে আমাকে দিতে হাত বাড়ালো.....
ছেলেটি হয়ত পৃথিবীর মানুষগুলোকে এতটুকু ভালো ভাবতে পারেনি যে, তাকে কেই ১০ টাকার চকলেট খাওয়াবে। কতজনতো কতকিছুই আনায় আর সামনে বসে খায় তার দিকে তাকিয়েও দেখেনা। প্রথমদিকে সে কারো কিছু এনে দিলে হয়ত ভাবত তাকেও একটু দিবে। কিন্তু না পেয়ে পেয়ে সে আজ হয়ত মুখস্থ করে ফেলেছে যে, গরীবরা শুধু মুখে তুলে দেওয়ার মালিক খাওয়ার মালিক না।
আর তাই হয়ত শত খাওয়ার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রন করে আমার হাতে তুলে দিচ্ছে।
কিন্তু চকলেটটা আমি তাকে খাওয়ার জন্য দিলাম এমনটা বোঝার পর ফ্যাকাশে চেহারাটা টলটল হয়ে গেল। কারন এতক্ষন ধরে যে মনের তৃষ্ণায় সে কাতর ছিল তার অবসান হল। নীরব মুখে হাসির অভয়ব ভেসে উঠল।.............................
দৃশ্যটি দেখার পর আমিও ক্ষনিকের জন্য নিজেকে সুখি মনে করলাম আর বোঝার চেষ্টা করলাম এটা কেমন সুখের অনুভূতি।
এটা কল্পনা নয় সম্পূর্ন সত্য ঘটনা