দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে চলছে সেলিনা। গর্ভে সন্তানের বয়স ৭মাস। আসন্ন সন্তানটি ছেলে কি মেয়ে এখন সেটাই জানার বিষয়।
সেলিনার ১ম সন্তানটি ছিল এক ফুটফুটে সুন্দরী কন্যা। ১ম সন্তান নিয়ে সবার ই বরাবরের মত অনেক আশা ও উত্তেজনা থাকে। সেটা মেয়ে হলেও সবাই খুশি আর ছেলে হলে তো মারহাবা মারহাবা ব্যাপার। তবে একটি পরিবারে, শুরুতেই একটি মেয়ে সন্তান চলে এলে, এর পরবর্তী সন্তানটি যেন ছেলে হয় সে নিয়ে মানুষের আশা এবং উত্তেজনার সীমা তো থাকেই না বরং চিন্তা আরো দ্বিগুণ বেরে যায়, ‘পাছে যদি এইবার ও মেয়ে হয়?’
তবে সেলিনার এই ব্যাপার নিয়ে কোনোই মাথা ব্যাথা নেই। তার কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল তার আসন্ন সন্তানের সুস্থতা।কিন্তু যে যাই মনে করুক, কিছু মানুষের জন্য গর্ভের সন্তানটি সুস্থ আছে কিনা সেটা জানা যতটা না জরুরি ছিলো,তার থেকেও বেশি জরুরি ছিলো সন্তান টি 'ছেলে কি মেয়ে', সেটা জানা। সেলিনা কে তাই Ultra-sonogram করতে যেতে বললেন সেলিনার স্বামী।
যেই ডক্টর সেলিনার ১ম সন্তানের সময় অপারেশন করেছিলেন, এইবারও তার কাছেই গেলো সেলিনা। Ultra-sonogram এর রিপোর্টটি দেখিয়ে ডক্টর এর কাছে সে জানতে চাইলো তার কোল আলো করে এইবার কি কন্যা সন্তান আসবে নাকি পুত্র সন্তান?
রিপোর্ট টি দেখে ডক্টরটি আমতা আমতা করে বললেন যে রিপোর্টটা তে সেইভাবে কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। একথা শুনে সেলিনার বুঝতে আর এক মুহূর্তও দেরী হলনা যে এইবারও সে একজন কন্যা সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছে।
সেলিনা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে শুধু এত টুকুই জানতে চাইলো যে তার সন্তান টি সুস্থ আছে কিনা।
আশংকাজনক কোন ব্যাপার নেই শুনেই সেলিনা খুশি হয়ে গেলো। তার এরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে ডক্টর তাকে একটাই কথা বললেন, ‘Salina you are a brave women’
কিন্তু একজন মা যেই ভাবে তার আসন্ন সন্তানের ব্যাপের ভাবেন, সেই ভাবনা বা সেই রকম চিন্তা করার সাহসটাও অন্য কারোর থাকে না, এমনকি সন্তানটির বাবার ও না।
Ultra-sonogram এর রিপোর্টটি পেয়ে বড়ই কষ্ট পেলেন সেলিনার স্বামী। বাকি ১০ জনের মত তিনিও আশা করেছিলেন এইবার হয়ত তিনি একটি পুত্র সন্তানের মুখ দেখতে পারবে। কিন্তু বিধাতা তার জন্য এমন কিছু চেয়েছেন যা তিনি নিজেও হয়ত চাননি।
হয়ত মুখে বলেন নি, কিন্তু সেইদিন বিকেলে বউ কে রেস্টুরেন্ট এ স্যুপ খাওয়ানোর কথা ছিল তার...... সেই স্যুপ আর খাওয়া হলনা সম্ভাব্য কন্যা সন্তান প্রস্রবকারী অভাগা সেলিনার।
বাড়ি ফিরতেই সেলিনার বাসায় আসল তার দুই ননদ। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে তাদের দোনোজনের ঘরেই আশীর্বাদ স্বরূপ, একটি করে ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা মানুষের মত মানুষ হচ্ছিল কী বখে যাওয়া সঙ্গীদের সঙ্গ দোষে ভেসে যাচ্ছিল সেটা দেখার বিষয় না। মোক্ষম বিষয় হল তারা ‘ছেলে’। ব্যাস।
সেলিনার এইবার ও মেয়ে হবে শুনে তার দুই ননদ তাদের ‘বিজয় উল্লাস’ স্বরূপ হাসি টাকে অনেক কষ্টে সামাল দিয়ে এক দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহেরা করার চেষ্টা করে, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘ আবার ও মেয়ে?’
সেলিনা কিছুই বলল না।
*********
অবশেষে সেলিনার কোল আলো করে পৃথিবীর মুখ দেখল তার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান। সন্তান হওয়ার সাথে সাথেই নার্স ও বলে উঠলেন, ‘আবারো মেয়ে?’
সেলিনা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। নার্স টা স্বয়ং একজন 'নারী' হয়ে কীভাবে এমন একটা মন্তব্য করতে পারলো? তবে কি তার জন্মের সময়ও সবাই একই মন্তব্য করেছিলো? নাকি তার নিজের ঘরে কোনো পুত্র সন্তান নেই বলে সকলের কাছ থেকে তাকে শত ধিক্কার সইতে সইতে আজ অবচেতন ভাবেই তার মুখ দিয়েও এমন কথা বের হচ্ছে? নাকি যা সেলিনার কাছে অস্বাভাবিক ঠেকছিলো, বাস্তবে সেটাই স্বাভাবিক?
‘কেন? তার আবারো মেয়ে হয়েছে তাতে কি হয়েছে? মেয়ে হয়েছে তাতে তার কি দোষ? মেয়ে জন্ম দেয়া কি কোনো অপরাধ?’
হয়ত অপরাধ ছিল কারণ, সেই রাতে সেই অভাগা মেয়েটির মুখে এক ফোঁটা দুধ ও উঠেনি। যেই বাবা তার প্রথম মেয়ের জন্মের সময় মেয়েকে কি খাওয়াবে ভেবে ব্যকুল হয়ে গিয়েছিল, সেই বাবাই তার দ্বিতীয় মেয়ের রাতে খাওয়ার জন্য দুধ আনতে ‘ভুলে গিয়েছিলেন’