যেহেতু আমি প্রচন্ড এবং ভয়াবহ রকমের একজন 'ভাবুক' প্রকৃতির মানুষ, সেহেতু জীবন নিয়ে, জীবনে কিছু করা নিয়ে আমি অনেক ভাবি।
শুধুই ভাবিই, ব্যাস। এই ভাবনার মধ্য দিয়েই জগতের প্রতি নিজের সকল দায়িত্ব পালন করে আমি দায় মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। তবে এ চিন্তা যে শুধু আমার তা না। বোধ করি তরুণ প্রজন্মের অনকেই এ রোগে আজ আক্রান্ত।
তবে কি নিয়ে আমাদের এত চিন্তা?
চিন্তা হল-
* বাবার টাকায় পড়ছি,নিজের জগ্যতায় নহে। তাই পড়া-শোনার ব্যাপারে মাথা উচুঁ করে বলার মত কিছুই না।
* কষ্টে অর্জিত বাবার এই টাকার একটা ন্যায্য মূল্য দিতে হবে।
* টাকার মূল্য কিন্তু দিতে হবে সেই টাকা দিয়েই, তাই চাই একটি ভালো চাকরী।
* ভালো চাকরীর জন্য দরকার একটি ভালো রেসাল্ট।
* কিন্তু এখনকার চাকরীর বাজারে যে শুধুই ভালো CGPA ই মূল্য পায়, তা কিন্তু নয়, ভালো CGPA এর সাথে প্রয়োজন Job Experience, Co-Curricular Activities, Smartness, Attitude আরো না জানে কত কি? (অবশ্য, মাঝে মাঝে মামা-চাচারা থাকলে এত কিছু না হলেও চলে যায়, চালিয়ে নেয়া যায় :/ )
* যাই হোক, এসকল 'সহ-পাঠক্রম সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপ' এর জন্য প্রয়োজন পড়া-শোনার পাশা-পাশি এসকল বিষয়েও সময় এবং ধৈর্য সহকারে আপ্রাণ চেষ্টার দ্বারা বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা।
ঝামেলা টা বাধে এইখানেই। কীভাবে? বলছি
*কিছু মানুষের ক্ষেত্রে Co-Curricular Activities থাকতে হবে ভেবে পড়া-শোনার পাশা-পাশি শুরু হয়ে যায় নানান কার্যক্রমে মনোনিবেশ করা।
* শুরুতে সব কিছুই ঠিক-ঠাক মতই চলতে থাকে কিন্তু একসময় এসে সেটা তাল হারিয়ে মাতাল হয়ে যায়। "পড়া-শোনা তো চলবেই, CVর ওজন বাড়াতে হবে আগে, নাহলে যে চাকরী পাওয়া যাবেনা"
এই চিন্তায় মত্ত হয়ে এরা 'দেশ এবং জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতে'র জন্য নিয়োজিত হয়ে যান বিভিন্ন কাজ-কর্মে।
* এদের মধ্যে
>>কিছু মানুষ এমন আছে যাদের এসকল ক্রিয়াকলাপের জন্য রেসাল্টের ইকটু ক্ষয়-ক্ষতি হলেও,যেই উদ্দেশ্যে তারা এগিয়েছে সেই উদ্দেশ্যে তারা সফল হয়। ফলে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করে এরা আসলেই জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যায়।
>>কিছু মানুষ আবার এমন আছে যারা দোনো নৌকাতে পা দিয়ে দিব্বি সামাল দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যেমন পড়া-শোনায় তেমন পারিপার্শিক বিষয়েও। এদের ভবিষ্যত এতই আলোকিত যে সেটা সম্পর্কে ভাবা মাত্রই আমার চোখ ঝলসে যাচ্ছে।
>>এবার আসি সেসকল মানুষদের কাছে যারা খুব শখ করে দুই নৌকায় পা তো ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু এখন নিজের ফেলা চালে নিজেই বেসামাল হয়ে, ব্যাকূল হয়ে একূল-ওকূল দোনোকূল ই হারানোর পথে। এরা না যেকোন একটা বিষয়ে দৃর-সংকল্প ভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করে, আর না সেটা থেকে সহজে বের হতে পারে। এরা ঠিক অথৈ জলে না ভাবসলেও হালকা পানি পর্যন্ত ডুবে থাকে।
এর পিছে অনেক বিষয়ই কাজ করে কিন্তু যেই ব্যাপার টা সবচেয়ে বেশি কার্যকরি প্রভাব ফেলে বলে আমি মনে করি তা হল, কোন কাজ শুরু করার আগেই, অদূর ভবিষ্যতে সেই লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়ার কাল্পনিক চিন্তায় বিভোর থাকা।
যেমনটা ঘটে আমার সাথে।
তাছাড়াও এদের মনে চলে আরো নানান চিন্তা, যেমন
> পাছে যদি আমি আমার এই লক্ষে সফল না হতে পারি? তখন তো আমি সব কিছুই হারাবো ( আরে বাবা ব্যাথা পাবে জেনে কি তুমি হাটাই বন্ধ করে দেবে?)
> আমাকে কত টুকু শ্রম ও সময় দিতে হবে? ( সেটা কাজ শুরু করার পর ই তো জানতে পারবে)
এবং সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে গুরুত্বূুর্ণ ব্যাপার 'আলসেমী', যেটাকে নানান ধরনের 'পারিবারিক ঝামেলা, শারীরিক অসুস্থতা, সামাজিক চিন্তা ভাবনা'র নাম দিয়ে আমরা এড়িয়ে যাই।
শেষে দেখা যায় ঐ বাবার ঋণ কতটুকু শোধ হয় জানা নেই, বরং নিজের জীবন যুদ্ধে নিজেকেই টিকিয়ে রাখাটা তখন মক্ষম বিষয় হয়ে দাড়ায়।
এই ধরনের মানুষ (যেমন আমি) দের ক্ষেত্রে চিন্তার CYCLE ঠিক যেইখান থেকে শুরু হয়েছে, শেষ-মেশ সেখানে যেয়েই আবার আটকে যায়।
আজকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে, নিজের দেশের জন্য সারা বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জন করেছে আমাদের মতই এক তরুণ প্রাণ 'আয়মান সাদিক'। আমি আজ স্বপ্ন দেখি জীবন টা কে তার জীবনের মত সার্থক করে গড়ে তোলার। আর এই চিন্তা নিয়েই আমি ঘুম দেই। কারণ আমার অনেক কাজ আছে, বাবার ঋণ শোধ করতে হবে, পড়া-শোনা করতে হবে, তবে তার আগেয় একটা ঘুম দিতে হবে, কারণ স্বপ্ন দেখার জন্য ঘুমানো টা তো আবশ্যক