somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিহিতের জীবন সূর্য

২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মিহিত", জন্মের পরে বোধশক্তি হওয়ার পরে তার বাবা কেই শুধু দেখে আসছে, মা কি, দেখতে কেমন হয় কিছুই জানে না সে, কৌতূহল মেটানোর তাগিদে বাবাকে একবার মায়ের কথা জিজ্ঞেশ করেছিল সে, কিন্তু তার বাবা তাকে প্রত্যুতরে এটুকুই বলল, "তোমার মা আমিই।" তৃষ্ণার্ত মন তবু ভরে নি মিহিতের, সে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো, "তুমি তো বাবা, মা'রা তো শাড়ি পরে, আমার সব বন্ধুর মা'য়েরা তো শাড়ি পরেই ওদের স্কুলে নিয়ে আসে, তুমি তো শাড়ি পরো না, তুমি মা হও কিভাবে?" কিন্তু মিহিতের কৌশলী বাবা প্রশ্নের উত্তরে বলল, "তোমার মা ও বাবা একজনই, এই ব্যাপারে আর কখনো প্রশ্ন করবে না আমাকে।" মিহিতকে এভাবে কথাটা বলে তার বাবা ফাহিয়ান আহমেদের মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো, তিনি ভাবছেন ছেলেটাকে এভাবে না বললেও পারতেন, কথা গুলো অনেক কঠিন হয়ে গেছে।


মিহিতের জন্মের ঠিক দেড় বছরের মাথায় তার মা মারিয়া জাহান পুরনো প্রেমিকের সাথে চলে যায় মিহিতের বাবা'কে ডিভোর্স লেটার দিয়ে। ফাহিয়ান সাহেব বিয়ের ঠিক পরেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্ত্রী'র অন্য কারো সাথে প্রনয় আছে, কিন্তু তিনি তখন ভেবেছিলেন বিয়ের আগে সব মেয়েরই এমন প্রনয় থাকে এবং তা বিয়ের পরে ভুলে যায়, তিনি কস্মিনকালেও ভাবতে পারেন নি মারিয়া দেড় বছরের মিহিতকে রেখে এভাবে চলে যাবে পুরনো প্রেমিকের হাত ধরে ভালোবাসার ক্ষুদা মেটাতে। অনেক কষ্ট করে তিনি মিহিতকে বড় করছেন শত ঝড় ঝাপটা সামলে, বিয়েও করেন নি ছেলের প্রতি অনাদর হওয়ার আশংকায়।

মিহিত আজ ১৩ বছরের এক দুরন্ত বালক, ক্রিকেট তার প্রিয় খেলা, তার বাবা তাই তাকে তার ৮ বছর বয়সের মাথায় আবাহনী ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেয়। মিহিত খুব গতিতে বোলিং করতে পারে, সে তার দলের লিডিং বোলারও। আজ তার দলের খেলা চলছে মোহামেডান ক্রিকেট ক্লাবের সাথে, অনূর্ধ্ব-১৩ ক্রিকেট ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনাল খেলা, মিহিতের দল ২০ ওভারে ১৬০ রান তোলে, ১৬১ রানের লক্ষ্যে নেমে মোহামেডান খেলতে খেলতে শেষ ওভার পর্যন্ত গিয়ে এক টানটান উত্তেজনায় পৌছায়, শেষ ওভারে দরকার ১২ রান ৬ বলে, বোলার "মিহিত", মিহিতের মাথায় তখন একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, "সব গুঁড়িয়ে দিবো।" প্রথম ৫ বলে সে ৮ রান দেয়, শেষ বলে দরকার ৪ রান, মিহিতের ভাবনায় শুধু জয়, যেভাবেই হোক তাকে এই বলে ৪ রান দেয়া চলবে না, শেষ বলটি সে স্ট্যাম্পের ব্লক হোলে ইয়র্ক করার চেষ্টা করলো, কিন্তু একটুর জন্যে বলটা ইয়র্ক না হয়ে খানিকটা লোয়ার ফুলটস হয়ে গেলো, ব্যাটসম্যান সজোরে স্ট্রেট ড্রাইভ করলো, মিহিত ডানদিকে ঝাপিয়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টা করলো, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বলটা হাতে না এসে তার মাথায় আঘাত করলো, সঙ্গে সঙ্গে সে অজ্ঞান হয়ে গেলো। মিহিতের তীব্র রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাকে হসপিটালে আই.সি.ইউ. তে নেওয়া হলো। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মিহিত, তার বাবা অঝোরে কাঁদছে, ফাহিয়ান সাহেবের পৃথিবী শূন্য লাগছে, ডাক্তারদের জোড়হাতে বলছেন তার সন্তানকে যেভাবেই হোক যত টাকাই লাগুক তার মিহিত কে যেন ভালো করে দেয়।


এদিকে মিহিতের মা মারিয়া অনলাইন পত্রিকায় হঠাৎ পড়লেন অনুরধ-১৩ ক্রিকেট ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনাল খেলায় মাথায় বল লেগে আহত হয়ে মিহিত নামে এক কিশোর তুর্কি হাসপাতালের বেডে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছে, তার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, এই মিহিত কোন মিহিত? মারিয়া খবর নিয়ে দেখলো এই মিহিত আসলে সেই মিহিত যাকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে লালন করে তিনি জন্ম দিয়েছেন, আর দেড় বছরের মাথায় সকল মায়া মমতা ভুলে নিজের ভালোবাসার মোহে ভুলে ছেড়ে চলে এসেছেন। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না মারিয়া, নাড়ির তীব্র টানে ছুটে গেলেন মিহিতের কাছে।

মিহিতের জ্ঞান ফিরেছে তবে অবস্থা খুবই আশংকাজনক ডাক্তার মাত্র খবর দিলো ফাহিআন সাহেবকে, ডাক্তার ফাহিয়ান সাহেবকে মিহিতের পাশে যেতে বললেন। ফাহিয়ান সাহেব গেলেন বুকের মানিকের কাছে, পুরো মাথায় সাদা ব্যান্ডেজে আবৃত তার সন্তানের, চোখ আধো আধো খোলা, অস্ফুট স্বরে মিহিত তার বাবা কে বলল, "মা দেখতে কেমন হয়?" কোথায় ছেলেকে তিনি সাহস দিবেন তার বদলে মিহিতের প্রশ্ন শুনে ফাহিয়ান সাহেব শিশুর মত কাদতে লাগলেন, ঠিক তখনি মারিয়া মিহিতকে দেখতে রুমে ঢুকলো, অশ্রুসজল অপরাধী চোখে ছেলের পাশে বসলেন ফাহিয়ান সাহেবের দিকে না তাকিয়ে। মিহিত তার বাবা'কে জিজ্ঞেস করলো, "বাবা ইনি কে?" ফাহিয়ান সাহেব বললেন," তোমার মা দেখতে এই মহিলার মতো।"


মিহিত তার অনেক দিনের খুজতে থাকা প্রশ্নের উত্তর পেলো অবশেষে, সে মারিয়া'কে বললো, "মা তুমি দেখতে আমার কল্পনায় আঁকা মায়ের চেয়েও সুন্দর, তুমি কি আবারো চলে যাবে আমাকে ছেড়ে মা?" এই কথা বলেই মিহিতের জীবনের সূর্য লাল হয়ে পশ্চিমে ডুবে গেলো।


লেখকঃ অশ্রু হাসান।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×