somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্য (গল্প)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুনার যখন মন খারাপ হয় তখন সে মুখে বালিশ চেপে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে। একসময় ঘুমিয়ে পরে আর ঘুম থেকে উঠার পর মন একদম ভালো হয়ে যায়। অনেকক্ষণ থেকে তাই সে কান্নার চেষ্টা করছে। কিন্তু কান্না আসছে না। চোখে পানি জমে ঝাপসা হয়ে আছে চারপাশ, অথচ পানি পড়ছে না! কি অদ্ভুত! সে তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের সময়গুলোর কথা ভাবলো । ছোটবেলায় একবার লিফটের ভেতরে আটকা পড়ার কথা ভাবল, কান্না আসলো না। বাবার মৃত মুখটা মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ল একবার দরজার আড়ালে লুকিয়ে থেকে বুউউ বলে বাবাকে কেমন করে চমকে দিয়েছিলো সে! হু হু করে হেসে উঠল মুনা! জীবনের প্রথম ও শেষ লিখা প্রেমপত্রটার কথা ভাবল। সারারাত ধরে কাটাকুটি করে মাত্র একটা লাইন লিখেছিল। " প্রিয় ম, তুমি একটা আজব বুড়ো !" মেঘের পুরো নামটা লিখতে তার কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছিলো। শেষপর্যন্ত সেই চিঠিটা দেওয়াই হলো না। মেঘের সাথে তুলির কাপল ছবি তুলে দেওয়ার সময়টার কথা ভাবল মুনা। সেদিন কি সে সারারাত বালিশ ভেজায় নি? অথচ এখন সেসব কথা ভেবেও তার গাল বেয়ে একফোঁটা পানি পড়লো না ।

সে জাফর ইকবালের তপুর কথা মনে করলো, অ্যানা ফ্রাংকের সেই ক্ষুধার্ত মুখটা ভাবার চেষ্টা করল, মার্কেজের দুঃসহ দিনগুলো কিংবা ব্রুনোর গ্যাস চেম্বারে চিৎকারটা ...। নাহ, এখনো কান্না আসে নি । তাহলে কি অনিকের কথাগুলোই ঠিক? সে একটা দুশ্চরিত্র, নির্লজ্জ, নিষ্ঠুর আর ধোঁকাবাজ মেয়ে?

দুই মাসের বর অনিকের এই কথাগুলার জন্যই আসলে তার মন খারাপ । অনিকের তো কোন দোষ নেই । কেউ যদি নববধূর গোপন ডায়রি খুঁজে পায় আর সেখানে পাতা ভর্তি কেবল একটা নাম থাকে, তাও আবার অন্য পুরুষের , তারপর মেজাজ খারাপ না করে তাহলে ত সে মানুষ না; ফেরেস্তা!

মুনা অবশ্য চেষ্টা করেছিল বিয়ে না করতে। কিন্তু বিধবা মায়ের করুণ চোখের দিকে তাকিয়ে রাজি হতে হয়। বিয়ের পর মেঘের কথা না ভাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারে নি! ডায়রিটা এমনভাবে লিখা যেন মেঘের সাথে তার রোজ কথা হয়! অনিককে এখন কে বুঝাবে এইসবই কাল্পনিক! ভার্সিটির পরে মেঘের সাথে একটা বারও কথা হয় নি! কথা হওয়ার কথা ও তো না!

কান্নার চেষ্টা বাদ দিয়ে মুনা ঘুমের ওষুধ খুঁজে । একটা সেডিল বা ডরমিকাম । হঠাত করে একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে মুনা । তাদের বাসায় বাচ্চা আসবে কোথা থেকে! অথচ স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে কান্নার শব্দ। বিছানা, বাথরুম, রান্নাঘর - নাহ কোথাও কোন বাচ্চা নেই। ভালো করে কান পাতে মুনা । শব্দটা মনে হচ্ছে , মনে হচ্ছে, তার পেটের ভেতর থেকে আসছে! মুহূর্তের ভিতর শব্দটা জোরালো হয়ে যায়। বাচ্চাটা প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদতে থাকে! জলজ্যান্ত একটা বাচ্চা পেটের ভেতরে ঢুকে কিভাবে! মুনার মাথা কাজ করে না। বের করতে না পারলে বাচ্চাটা মনে হয় মরেই যাবে। রান্নাঘরে গিয়ে ফল কাটার চাকুটা হাতে নেয় মুনা। যেভাবেই হোক বাচ্চাটাকে বের করতে হবে্‌্‌,




পুনশ্চঃ খবর- রাজধানীতে গৃহবধূর বীভৎস লাশ উদ্ধার; স্বামী আটক ; আত্মহত্যার কথা বললেও পরকীয়ার জেরে হত্যা করা হতে পারে- বললেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৬
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×