somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথার দেবীগঞ্জ

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকতো পাহাড়, ঝরনা আর সমুদ্রের মায়াজালে আবদ্ধ ছিলেন। এবার নাহয় একটু গ্রাম বাংলার প্রকৃতি উপভোগ করুন। পঞ্চগড় জেলার উপজেলা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দেবীগঞ্জ। হেমন্তের ঝকঝকে আকাশ, বহমান করতোয়া নদী, নদীর দুই পাশে ছোট ছোট গ্রাম আর ধানক্ষেত। আর নীলফামারীর সাথে দেবীগঞ্জকে সংযোগকারী সেতুর নাম “করতোয়া সেতু”। উপজেলার রাস্তাঘাট দেখলে মনে হয়, এতো সুন্দর রাস্তা বাংলাদেশের কোথায় পাবেন! দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, দূরের গ্রাম আর মাঝে করতোয়া নদীর অববাহিকা। বেশ ভালোই স্বাচ্ছন্দে কাটে এখানে গ্রামীণ জীবন। যেমনটা একদিন থেকেই মনে হচ্ছিল বহুকাল ধরে আছি। পুরো উপজেলাটি ৩০৯ কিলোমিটার। আর পুরো উপজেলায় গ্রাম আছে ১০১ টি। আমরা ছিলাম দেবীগঞ্জ উপজেলা জিরো পয়েন্টে। গ্রামের নাম সোনাপাতা, থানা দেবীডোবা। গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। একটা কৃষ্ণ মন্দিরও আছে এই গ্রামে। উপজেলার আশেপাশে আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতের বেশ কিছু সিটমহল আছে। যার মধ্যবর্তী স্থলে বেশ কয়েকটি সিটমহল এখন আমাদের। সিটমহল আমাদের হলেও যেতে হয় ভারতের গ্রামের উপর দিয়ে। দুইপাশে ভারতের সিটমহল আর মাঝখানে বাংলাদেশের রাস্তা, চাইলেই যাওয়া যায়। তবে থাকার মতো তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আপনি গ্রামের মানুষদের সথে মিশে যেতে পারবেন। ওদের সাথে থাকতে পারবেন, খাওয়া-দাওয়াও করতে পারবেন। পুরো উপজেলার মানুষগুলো অনেক ভাল, আপনার জন্য নির্দিধায় অনেক করবে। আমরা ছিলাম একজনের আত্নীয়র বাড়িতে। তাদের মেহমান দারিত্ব কখনোই ভুলতে পারবো না। সিটমহলগুলোতে যাওয়ার রাস্তা একঘন্টা ভারতের মানুষের জন্য খোলা থাকে আবার একঘন্টা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য খোলা থাকে। আর বিকেল ৫ টার মধ্যে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই যারা যাবেন খেয়াল করবেন যেন বিকাল ৫ টার মধ্যে ফিরে আসা যায়। দেবীগঞ্জের অনেক এলাকাতেই এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। তাই রাতে বিদ্যুৎহীন মোমবাতির আলোয় থাকতে হবে। তবে এখানকার পরিবেশটাই এমন যে, বিদ্যুতের দরকার হয় না । তবে মাস তিনেকের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসবে। ওখানে একটা বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। প্রতি বছর এপ্রিলের ১৪ তারিখ অর্থাৎ আমাদের বাংলা নববর্ষের দিন দেবীগঞ্জে মেলা হয়। তবে মেলার নামটা একটু ভিন্ন। কাঁন্নাকাঁটির মেলা। এখানে প্রতি বছর ভারতের সিটমহলবাসী আর ঐ উপজেলার মানুষ যাদের আত্মীয়স্বজন দুইদেশে থাকে, তারা একে অপরকে জড়াজড়ি করে, কান্না কাটি করে। টাকার অভাবে কেউ আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করতে যেতে পারে না। তাই ঐ দিনই দেখা করার সুয়োগ পায় । ভারতের কিছু মানুষ আবার আমাদের এখানে কেনাকাটা করতে আসে। ওদের ঐখানে যেটা অনেক দামি সেটা আমাদের দেশ থেকে কিনে নিয়ে যায়। আবার আমাদের দেশের মানুষও যেটা পাওয়া যায় না সেটা ঐ মেলা থেকে কিনে নিয়ে আসে। মেলায় দুই দেশেরই জিনিস পাওয়া যায়। যেমন আমাদের দেশেরে স্যান্ডেলিনা সাবান ওদের খুব পচ্ছন্দ। ওদের ঐখানে স্যান্ডেলিনা সাবানের নাকি খুব দাম। তাই আমাদের দেশ থেকে স্যান্ডেলিনা সাবান কিনে নিয়ে যায়। শুনে ভাল লাগলো যে, আমরা আমাদের নিজেদের প্রডাক্টের উপর যেভাবে নাক সিঁটকাই, ওরা আবার সেটা পছন্দ করে । যাই হোক ঐ প্রসঙ্গে না যাই। আর রাস্তার কথাতো আগেই বললাম যে, রাস্তা অনেক সুন্দর। মনে হচ্ছিল মাত্রই পিচ বিছিয়ে রেখে গেছে, ঝকঝক করছে। আর করতোয়া নদীর বিস্তীর্ণ বালুচরের উপর পাবেন কিছু সাপুরের ছাওনি দেওয়া বসত। নৌকার মতো ছাওনি দিয়ে বালুচরের উপর বাসা বেধেঁছে। দেখে মনে হবে এরা যাযাবর । আমরা হেমন্তের শেষ মুর্হূতে শীতের আগমনী বার্তার আমেজ পেতে গিয়েছিলাম। রাতে যখন ব্যাটারিচালিত অটোতে করে যাচ্ছিলাম, তখন চারদিকে রীতিমতো কুয়াশা। তার উপর কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। আর আমরা অটোতে বসে কাঁপছি রীতিমতো। কারণ কারো কাছেই শীতের কাপড় ছিলনা। আমরা এতটা ঠান্ডা পরবে ভাবতে পারিনি। আর ওখানে থাকার প্ল্যানও ছিল না বটে। হুট করে চলে যাওয়া যাকে বলে আরকি! যেদিন গিয়েছিলাম তার দুইদিন পরই পূর্ণিমা। তাই বুঝতেই পারছেন, কুয়াশা আর পূর্ণিমার চাঁদের আলো একসাথে আমাদের মনোরঞ্জন করছিল। তার সাথে সারি সারি বাঁশ বাগান। চাঁদটাও বাঁশ বাগানের মাথার উপর ছিল বৈকি!

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী যেকোন বাসে উঠবেন। হানিফ, নাবিল, ডিপজল, শ্যামলীসহ আরো কিছু বাস আছে যেগুলো পঞ্চগড় যায়। ভাড়া ৬৫০/- টাকা । পঞ্চগড় আর ঠাকুরগাঁও এর মধ্যবর্তী পঞ্চগড়ের একটি উপজেলা বোদা। দেবীগঞ্জ যেতে হলে এই উপজেলায় নামতে হবে। এখান থেকে সোজা সামনের দিকে একটু হেটেঁ গেলে একটি ব্রীজ পড়বে। আর ব্রীজের ডানপাশে পরবে দেবীগঞ্জ বোদা মহাসড়ক। এখান থেকে অটো পাওয়া যায়। জন প্রতি ভাড়া ২০/- টাকা । ১০ জন করে একটি অটো যেতে পারে। অটো দেবীগঞ্জ বাজার র্পযন্ত যায়। ওখান থেকে যেখানে যাবেন ভ্যানে করে যেতে হবে। ভ্যান ভাড়া জন প্রতি ৫-১০ টাকা । বোদা থেকে দেবীগঞ্জ ২৩ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে একঘন্টা। এছাড়া কিছু বাসও চলাচল করে এই সড়কে। যেমন যদি দেবীগঞ্জ বাজার থেকে আপনি পঞ্চগড় যেতে চান তাহলে নীলফামারী ডোমার হয়ে যে বাসগুলো করোতোয়া ব্রীজের উপর দিয়ে বোদা অথবা পঞ্চগড় যায় সেগুলোতেই যেতে পারেন। বাস ভাড়া নিবে দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড় ৩৫/- টাকা করে । ফেরার সময় দেবীগঞ্জ বাজার থেকে গাড়ী পাবেন।

কোথায় থাকবেনঃ আগেই বলেছিলাম মানুষগুলো অনেক ভাল, অনেক অতিথি পরায়ণ। আপনি চাইলে যেকোনো গ্রামে মানুষদের সাথে থাকতে পারেন। আর এছাড়া থাকার তেমন কোন লজ্ বা হোটেল আমাদের চোঁখে পড়েনি। তবে দেবীগঞ্জ বাজারে দেখতে পারেন। আমরা ওখানে একটি গ্রামে থেকেছিলাম।

কোথায় খাবেনঃ দেবীগঞ্জে খাবার খাওয়ার জন্য তেমন ভালো কোনো হোটেল নেই। তবে আমরা যেখানে থেকে ছিলাম, ওনারাই খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। খাবারটা এত সুস্বাদু ছিল আর কি বলবো। তবে বোদা নেমে ওখানকার বাজারের সবচেয়ে ভালো হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়ে আমাদের প্রথম এক্সপেরিয়েন্স খুব বাজে ছিল। ওরা খাবারে অতিরিক্ত লবন ব্যবহার করে। ট্রাই করে দেখতে পারেন, হয়তো যেটা আমাদের কাছে খারাপ আপনার কাছে ভালো লাগতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×