প্রথমেই এবারের এইচ.এস্.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল ভাই বোনদের জানাই অভিনন্দন।
ছেলেটি অথবা মেয়েটি এ+ পায়নি। পাশের বাসার ভাবিকে মুখ দেখাবো কিভাবে? ঠিক এমনটাই ভাবেন আমাদের সমাজের প্রায় নব্বই ভাগ অভিভাবক। তাদের কাছে বাচ্চার লেখা পড়া মানে পাশের বাসার ভাবি বা কলিগ বা আত্নীয়ের সাথে কম্পিটেশন।
আমরা কেবল তাদের পুঁথিগত শিক্ষা নিতেই এমন প্রেশারে রাখছি যে, বাচ্চাগুলো হয়তো তাদের দাদার নামও মনে রাখতে পারছে না। বংশীয় পরিচয় না হয় নাই বললাম।
আমার দেখা সকালের স্কুল ভ্যানগুলো প্রায় সবকটি বাচ্চাকেই দেখি হয়তো ঝিমোচ্ছে নয়তো ঘুমোচ্ছে। আসলেই তো, তাদের ঘুমনোর সময় কই? এই বাংলা স্যার বেরুলেন তো ঢুকলেন ইংরেজী ম্যাম। এভাবে এক এক করে আসতে যেতে সময় হয়ে যায় দিন গড়িয়ে রাত। দশটায় রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় যাবে, তখন হয়তো বারোটার ও বেশি ঘড়ির কাটায়। ফের সকাল সাতটায় স্কুল অথবা কলেজ কোচিং। মাঝে মাঝে হোম টিউটর, এইচ.ডাব্লিউ এর পেষণে রাতে হয়তো ঘুমানোর সময় একজন ছাত্র পেয়ে থাকে তিন থেকে চার ঘন্টা। আপনার তো একটাই চাওয়া...
পাশের বাসার ভাবির মেয়েটার চেয়ে যেন ভালো রেজাল্ট আমার ছেলেটা করে। না হলে মুখ দেখানো দায়। হ্যা, আপনি হয়তো আপনার ছেলে বা মেয়ের ভবিষ্যৎ ও ভাবেন। কিন্তু জানেন কি? কেবল মাত্র পুঁথিগত বিদ্যাই একজন ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য যথেষ্ট নয়? প্রয়োজন সাধারণ জ্ঞাণ ও।
প্রিয় অভিবাবক,
আপনি যখন ছাত্র জীবনে ছিলেন, আপনি কি পড়া লেখা নিয়ে উদাসীন ছেলেন না? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আশি ভাগ বাবা-মা বলবেন হ্যা।
তাই আমি বলবো, ছোট বেলা থেকে সন্তান কে ভয় দেখিয়ে পড়া লেখা শেখাবেন না। এতে তার যখন বুদ্ধি বিবেচনার বা বোঝার মত বয়স হয় তখন তার লেখাপড়ার প্রতি একটি অনাগ্রহ তৈরি হয়। আপনার দেখানো ভয়গুলো সে যখন বুঝতে পারে, তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় নিজের মত করে।
বাচ্চাকে ছোট থেকে স্বপ্ন দেখান, "তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়র অথবা আরো অনেক কিছু।" সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি ভাববেন এটা স্বাভাবিক। তাকে তার মত করতে দিন, জিজ্ঞেস করুন, কি হতে চাও তুমি? সে যা বলে তাতেই বলুন ঠিক আছে, তুমি তাই করো। ক্লাসে প্রথম হতে হবে এই প্রেশারটা দিবেন না প্লিজ। অন্যের সাথে কমপেয়ার করবেন না।
ছোট বেলা থেকেই তাকে ভালো রেজাল্টের জন্য পড়তে বাধ্য করবেন না,
ভালো করে শেখার জন্য বলুন।
বড় বড় স্বপ্ন দেখতে শেখান, সে আপনাকে বড় কিছু হয়ে দেখাবে।
-আজনাদ