সরকার পরিবর্তনের সংগে সংগে ভারতকে ট্রানজিট দেবার ইস্যুটি আবার সামনে চলে এসেছে। পত্রিকা এবং টেলিভিশনের খবর মতে মহাজোটের মন্ত্রীসভা ইতোমধ্যেই পুরনো চুক্তির শর্তের ৫ম ধারা চালু করে ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করার বিশয়ে সিধান্ত চুড়ান্ত অনুমোদন করেছে। জনগন নিশ্চই অনুধাবন করতে পেরেছে-মহাজোট সরকারের একমাস পুর্তির পুর্বেই কেনো ভারতকে আগবাড়িয়ে ট্রাঞ্জিট দিচ্ছে। দেশের অনেক সমস্যা বাদ দিয়ে তড়িঘরি করে বাংলাদেশ সরকারের জন্য ট্রাঞ্জিট দেয়াটা কি খুবই গুরুত্বপুর্ণ! সেনা সমর্থিত আওয়ামী তত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই ভারত ট্রানজিট চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশকে দিয়েছিল। নানা কারনে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।এখন ভারত ট্রানজিট চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন চায়।ভারতকে ট্রানজিট যায়েজ করার জন্য বাংলাদেশ একই সঙ্গে মায়ানমার, চীন, নেপাল এবং ভূটানের সাথেও ট্রানজিট চুক্তি করতে চায়।কিন্তু ভারত চায়না চীনসহ অন্যান্য দেশগুলোকে ট্রানজিটের অন্ত্রর্ভুক্ত করা হোক।
ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ইতোপুর্বে ৫ বছর মেয়াদী চুক্তির যে খসড়া আমাদের পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ে দিয়েছেন সেখানে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর পুর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পণ্য ও যাত্রী চলাচলে স্থল যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে।আসলে ভারত ট্রাঞ্জিটের নামে তাদের দেশের দুই অঞ্চলের ভিতর যোগাযোগের জন্য কড়িডোর চেয়েছে।বর্তমানে কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে ১৫০০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। কিন্তু কড়িডোর পেলে তা মাত্র ৫০০ কিলোমিটারে নেমে আসবে। কাজেই ট্রানজিট/ কড়িডোর পেতে ভারতের উদ্বগ্রীব হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশেরও নিজেদের স্বার্থ দেখার অধিকার আছে। ইতোপুর্বে বাংলাদেশ নেপাল, ভূটানের সাথে ট্রানজিটের উদ্দ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিরোধীতার জন্য সেই উদ্দ্যোগ বার বার ভেস্তে গেছে। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ নেপালের সাথে মাত্র ২৩ কিলোমিটার ভারতীয় সড়ক পথে ট্রানজিট চুক্তি করেছিলো-কিন্তু উদবোধনের ৪০ ঘন্টার ভিতরেই সেই চুক্তি অকার্যকর হয়ে যায়-ভারতের নিরাপত্তার অজুহাতে প্রচন্ড বিরোধীতার জন্য। ফলে বাংলাদেশ বাতসরিক ২০০ কোটি ডলার আয়ের যুযোগ হারায়। নেপালে পণ্য রাপ্তানী করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।একই অবস্থা নেপালেরও। মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দুরত্বের বাংলাদেশের মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যাবহার থেকে নেপাল বঞ্চিত হয়। অথচ নেপাল বাধ্য হয়ে ৭০০ কিলোমিটার দুরের কোলকাতা সমুদ্র বন্দর ব্যাবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।
ভারত তাদের দেশের নিরাপত্তার ধুঁয়া তুলে "বিপদজ্জনক" বাংলাদেশকে "বেড়া বন্ধী" করার জন্য তিন দিক থেকে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ করেছে। অথচ আমাদের দেশের বুক চিড়ে ৫০০ কিলোমিটারের কড়িডোর চাচ্ছে। অন্যদিকে, নেপালের সাথে বাংলাদেশের মাত্র ২৩ কিলোমিটার যায়গায় ট্রানজিট ভারত আমাদেরকে দিচ্ছেনা-আমাদের দেশ লাভবান হবে বলে। বংগবন্ধু বিশ্বাস করে ৩৬ বছর পুর্বে বেরুবাড়ি ভারতকে দিয়েদি্যেছেন-কিন্তু চুক্তি মত আজ পর্যন্ত ভারত আমাদের "তিনবিঘা কড়িডোর" (দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা) দিচ্ছেতোনাই এমনকি ওখানকার ২০ হাজার বাংলাদেশীদের অমানবিকভাবে খাচা বন্দী করে রেখেছে।
ট্রাঞ্জিট দেবার পুর্বে কিছু সুবিধা বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই আদায় করে নিতে পারতো। যেমন- ভারত থেকে পুশইন, সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের নির্বিচারে বাংলাদেশী নিরীহ গরীব কৃষক হত্যার প্রাক্টিস বন্ধ করা, দক্ষিন তালপট্টীর উপড় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা, তিন বিঘা কড়িডোর সহ দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর বিশয়ে। সেই সব সমস্যা সমাধানের পরও যদি ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়-তাহলে বাংলাদেশের রাস্তা ঘাট ও অবকাঠামোগত সুবিধাদি ভারতীয় ভারি যান বাহন চলাচলের উপযুক্ত কিনা, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ণ ও মেরামতের খরচ কে দেবে তাও ভেবে চিন্তে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব চাইতে ভাল হবে-যদি ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের ভিতরে তাদের মালামাল পুনরায় ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের মালিকানাধীন ট্রাক, রেলওয়ে পরিবহন করলে।তাহলে ঝুকি অনেক কম হবে এবং বাংলাদেশ লাভবান হবে।
সর্ব দিক থেকে বৃহত দেশ ভারত একবার সুযোগ পেলে ছোট্ট বাংলাদেশকে নিজেদের করদ রাজ্য ভাবতে কিম্বা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে গ্রাস করতেও দ্বিধা করবেনা।যেমন কাগজ কলমে করেছে গ্রাস করেছে সিকিমকে।অলিখিত ভাবে গ্রাস করেছে ভূটানকে।