এই ভূত-দেবতার আছে গোটা চল্লিশেক স্ত্রী আর আছে অসংখ্য ছেলে-মেয়ে, নাতি-পুতি-খুতি। তার আছে এক সন্তান সম্ভবা স্ত্রী। সে ভাবছে- আরে, আমি তো আমার ওই স্ত্রীকে দিয়েই কায়দামত কাজটা সেরে ফেলতে পারি। আমি আমার স্ত্রীকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিই না কেনো সেরালির ঘরে!
ভূত-দেবতা সেরালিকে ডেকে বলল, সেরালি, তুই আর চেঁও মেঁও করিস না তো। আমি থাকতে তোর এতো চিন্তা কীসের? আমার কাছে এসে তারাই খালি হাতে ফেরৎ যায়, যারা আমার দেয়া নিয়ম মানতে পারে না, আমার কথার অমান্য করে আর প্রয়োজনে টাকা খরচ ইতস্তত করে, তারা। তোকে তো দেখি এর বিপরীত। যাহ্, সন্তান তুই পাবি। ঠিকমত তোর স্ত্রীর যতœ-আত্তি করবি। কোনো রকম অবজ্ঞা-অবহেলা আর অনিয়ম করলে তুই সন্তান পাবি না। যাঃ তুই এখন বাড়ি চলে যা।
সেরালি কৃতজ্ঞচিত্তে আবেগ-অভিমানে দেবতাকে বলল- হে আমার প্রাণপ্রিয় দেবতা, আমি এতদিন কেন যে তোমার সন্ধান পাইনি, তোমার মত দয়ালু দেবতাকে চিনিনি; নিশ্চই আমি পাপী, হতভাগা। কেন আমি এভাবে ঠকে ঠকে এসেছি। আমি যদি আগে তোমার সন্ধান পেতাম তা হলে তো এতদিনে আমি সন্তাান দিয়ে আমার ঘরবাড়ি সব ভরে ফেলতে পারতাম। আমাকে আজ নিঃসন্তান হয়ে পথে-ঘাটে, আদারে-বাঁদাড়ে ঘুরে মরতে হতো না। আর মানুষের মুখে এত অপ্রিয় কথা শুনতে হতো না। ছিঃ কত বোকা ছিলাম আমি, ছিঃ!
দেবতা বললেন, তোর আশা পূর্ণ হোক।
সেরালি অদৃশ্য দেবতার উদ্দেশ্যে উপরের দিকে মুখ তুলল। সে বারবার হাত জোড় করে কুর্ণিশ করতে করতে বাড়ির দিকে রওনা দিল। সেরালির মনে বেজায় আনন্দ।
সেরালির স্ত্রীর উপর ভূতের আছর
এদিকে ভূত-দেবতা মুখের কোণে হাসি ফুটিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলে, সন্তান দিয়ে আমি তোর ঘর ভরে ফেলব রে সেরালি।
ভূত তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে ডেকে এনে সেরালির সব কথা খুলে বলল। দুষ্টভূতের দুষ্ট স্ত্রী। সে-ও অর্থ-স¤পদের লোভে সানন্দে রাজি হয়ে গেল। ভূত তার স্ত্রীকে বলল, সেরালি বাড়ি ফেরার আগেই তোমাকে পৌঁছে যেতে হবে সেরালির ঘরে। তারপর তার স্ত্রীর ওপর ভর করবে। তখন তুমিই হবে তার স্ত্রী। তারপরে কী করতে হবে আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব। যাও, আর দেরি নয়, এক্ষুনি চলে যাও তুমি। সেরালি বাড়ি পৌঁছার আগেই তুমি তার অন্তসত্ত্বা ¯ত্রীর উপর ভর করে বসে থাকবে। যাও।
সেরালি মনের সুখে শরীর ঝাঁকিয়ে তাইরে নাইরে করে বাড়ি ফিরল। সে আনন্দে টগবগ করছে। ঘরে ঢুকেই সে আদর-আহ্লাদে তার স্ত্রীকে ডেকে বলল, কই গো সোনামানিক আমার, আরে আসো আসো, দারুন খবর! আমি আজ মহা আনন্দের খবর নিয়ে এসেছি, এবার বাবার দরবার থেকে খালি হাতে ফিরে আসিনি, শোনো।
সেরালির স্ত্রী অসুখ অসুখ ভাব নিয়ে তার সামনে এসে বলল, কী হয়েছে তোমার কও ত, শুনি। সেরালি নাকে-মুখে সব কথা খুলে বলল। তার স্ত্রী মুখে আঁচল টেনে একগাল হাসি দিয়ে শরমে শরমে বলল, আমার তো মনে হয় দেবতা আমাদের উপর মুখ তুলে চেয়েছেন। সেরালি বলল, তুমি বুঝলা ক্যামনে গো!
শরীরটা কেমন ভার ভার লাগছে।
সেরালি আনন্দে মুখটা বউয়ের কানের কাছে নিয়ে বলল, এখন কাউকে কিছু বলবে না। খুব সাবধানে চলাফেরা করবে। সন্তান আমরা পেয়ে গেছি। এখন খালি সময়ের অপেক্ষা।
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই প্রচন্ড আগ্রহে সন্তানের অপেক্ষায় রইল।
দিনে দিনে সেরালির স্ত্রীর খাবারের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেল। স্ত্রী যখন যা চায় সেরালি ছুটাছুটি করে তা-ই এনে দেয়। যা আনে তাই গপা গপ করে খেয়ে ফেলে। খাওয়াতে তার কোনো অরুচি নেই। হাঁড়কিপটে সেরালি মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে বলে, যা আনি তাই খেয়ে সাবাড় করে ফেল, এত খাবার তুমি লও কই! স্ত্রী কুটকুট করে হেসে বলে, ওম্মা কয় কি! আমি কি এখন একা নাকি! দু‘জন না। বেশি লাগবে না তো কি! কিৎ কিৎ কিৎ, হেঃ হেঃ হিঃ হিঃ। চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৫