somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদকের ছোবল!!

০১ লা আগস্ট, ২০১০ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাদকের ছোবল!!
নিভৃত পল্লীতে বেড়ে ওঠা সূর্য রায়। হালের গরুগুলো রেখেই কাকভেজা স্নান করে স্কুলে দৌড়। হালের মাটি এখনো তার কানে লেগে আছে, তাই দেখে তার বন্ধুরা প্রায়ই হাসত। মেধাবী ছাত্র বলে তার বেশ সুনাম ছিল অত্র স্কুলে। এস.এস.সি উর্ত্তীণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। স্যার যখন মাইকে ঘোষণা দিলেন- এই স্কুল থেকে এতো ভালো রেজাল্ট আর হয়নি । দেওয়া হয়নি কোন ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা। এই স্কুলের ইতিহাসে এটাই প্রথম রেকর্ড করা রেজাল্ট ও প্রথম দেওয়া সংবর্ধনা। আমি এক কোণে বসে অনুষ্ঠান দেখছি । সারাটা হল জুড়ে পিনপতন নিরবতা । স্যার আবেগ জড়িত কন্ঠে বলে যাচ্ছেন আমার শিক্ষকতা জীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। স্যারের কথা শুনে আমিও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম একদিন সূর্য রায়ের মতো........।
গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা নেই। বড় ভাইয়ের সাথে হালচাষ করে সে। মা ঢেঁকিতে অপরের ধান ভাঙ্গেন। ছোট বোন লেখাপড়া শিকায় তুলে মাকে সাহায্য করে। কোন রকমে সংসার চলে যায় তাদের। এতো অভাবের মধে সূর্য তার লেখাপড়া চালিয়ে যায়।
এস.এস.সি তে লেটার লেটার মার্ক পেয়ে সে ভর্তি হয় শহরের কলেজে। দূর সম্পর্কের এক মামার কল্যাণে কলেজের পাশেই এক বাড়িতে তার লজিং হয়। পাশাপাশি দু'একটা টিউশনি করে চালিয়ে নেয় তার লেখাপড়ার খরচ। সেবারও এইচ.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করেছিল সে। গ্রামের মেম্বার তার ফলাফলে খুশি হয়ে নিমন্ত্রণ করে খায়িয়ে ছিলেন তার মা, ভাই ও বোনকে।
উচ্চ শিক্ষার জন্য সূর্য পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকায়। নামকরা এক কোচিং-এ ভর্তি প্রিপারেশন নেয় সে। চান্সও পেয়ে যায় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পছন্দের সাবজেক্ট আইন নিয়ে শুরু হয় তার লেখাপড়া। হলের বড় ভাইয়ের মারফতে একটি টিউশনির সন্ধান পায় সে। ছাত্রী ক্লাস নাইনে পড়ে শহরের নামকরা স্কুলে। দেখতে দেখতে দু'বছর কেটে যায়। তাদের সম্পর্কও গভীর হয়। মেয়ের মা বুঝতে পারেন বিষয়টি। কিছুদিন পর মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় প্রবাস ফেরত এক যুবকের সাথে।
সূর্য চোখে অন্ধকার দেখতে পায়। হল ছেড়ে দেয়, ছেড়ে দেয় ক্লাস ও পরীক্ষা। এক হাতে মেয়েটির ছবি ও অন্য হাতে মদের বোতল নিয়ে সারা বেলা কাটিয়ে দেয়।পরিবারের সাথে তার আর কোন যোগাযোগ নেই। রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়ায় সে।পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে টাকা ধার চায়। সে দিন হঠাৎ করেই আমার সাথে তার দেখা। দেখলাম মাথা ভর্তি তার কোকড়ানো চুল। পড়নে ছিঁড়া ময়লা শার্ট -প্যান্ট। পায়ে জুতা নেই। হাতে কয়েকটা সিগারেট । আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আর তার সাড়া দেহটা কাঁপছে। চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে। তার কান্না দেখে আমিও ঠিক থাকতে পালনাম না। তাকে নিয়ে কাপড় কিনতে গেলাম। আমি ও সূর্যদা পাশাপাশি হাঁটছি। হঠাৎ একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনেক লোক জড়ো হয়। গাড়ি থেকে সদ্য মা হওয়া এক মহিলা বেড়িয়ে আসেন। সূর্যদার মুখটা দেখেই মহিলার সমস্ত মুখ-মণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে য্য়। আমরা তড়ি-গড়ি করে তাকে হাসপাতানে নিয়ে যাই। ঠিক গোধূলী লগ্নে সেই মহিলার আর্বিভাব। হাতে ব্যাগ ভর্তি ফল। কোলের শিশুটি হাঁসছে। জানতে পারলাম এই মেয়েটির সাথেই সূর্যদার সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি যদি তাকে ভুলে নির্বিঘ্নে স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে থাকতে পারে
তবে সূর্যদা কেন...................।

বদরুল ইসলাম প্রিন্স
সিলেট-০১/০৮/২০১০খ্রিঃ
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×