somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭২-৭৫ মুজিব সরকারের আমলেই যুদ্ধাপরাধীদের অনেককেই ছেড়ে দিয়ে দেশ গড়ার আহবান জানানো হয়েছিল!

২৬ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই দেখি দৈনিক আমাদের সময়ে, মিল্টন আনোয়ারের লিখিত "শুরু হয়নি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া" শিরোণামে কি লিখেছেন;

Click This Link

শুধুমাত্র এ দেশীয় ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যে স্রেফ রাজনৈতিক ইস্যু তথা ফায়দা লুটার জন্য তা ধীরে ধীরে আবারও স্পষ্ট হচ্ছে। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস এবং পরবর্তী ইতিহাসের ধারাবাহিকতা কখনও অস্বীকার করা যাবে না। ১৯৭২-৭৫ সালে নাম মাত্র এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হলেও তাদের অনেকেই ঐ মুজিব সরকারের সময়ই ছাড়া পায়। তাদের অনেক কে বলা হয় এবার দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হও। এখানে দুটি বিষয় (১) তাকে মাফ করা হয় নি এবং (২) শাস্তিও দেওয়া হয়নি। যদি কাউকে মাফ না করে এবং শাস্তিও তথা বিচার না করেই যদি জেলের বাইরে রেখে সমাজের আর সাধারণ ১০ জনের মত নিজ বাসা বাড়ীতে বসবাসের সুযোগ দিয়ে পরবর্তীতে তাকে ব্যাক্তি পর্যায়ে মতের মিল না হওয়া তথা মত বিরোধের জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার করার চেষ্টা স্পষ্টতই মতলববাজি ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ঐ সকল দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে তা হত দেশ ও মানুষের জন্য সুবিচার। কিন্তু সেই লক্ষ্যে না করে ব্যাক্তি ও দলীয় স্বার্থে কোন যুদ্ধাপরাধী কে বিচারের দ্বাবী তোলা হল ক্ষুদ্র, সংকীর্ণতা এবং শঠতারই লক্ষণ। প্রাথমিক ভাবে মুজিব যুদ্ধাপরাধী সকল পাকিস্তানী সৈন্যদের কে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দেন তার প্রিয় বন্ধু জুলফিকার ভুট্টোর সুবিধার জন্য।

Click This Link

অথচ জেনারেল ইয়াহিয়া খান চেয়েছিল যেকোন মূল্যে পূর্ব পাকিস্তান কে টিকিয়ে রাখতে যদিও সেটা All Out যুদ্ধই হৌক না কেন। ঠিক যেমন বৃটিশরা বলত "Everything is fair in Love & War"। জেনারেল ইয়াহিয়ার কারণেই ৩০ লক্ষ বাঙালীর হত্যাকান্ড ঘটে। এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধের ব্যাক্তিবর্গ আসলে পাকিস্তানের বেতন ভূক্ত কর্মচারী। তাই যুদ্ধাপরাধের দ্বায় ভারও পাকিস্তানের। মূল যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে হুকুমের গোলামদের বিচার সঠিক সুবিচার নয়। ১৯৮৬ সালে আলীগ ও জামাত এক সাথে এরশাদের অধীনে নির্বচানের অংশগ্রহণ, ১৯৯১ সালেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও জামাতের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি আলীগ। বিপত্তি ঘটে যখন জামাতের ১৮ জন সংসদ সদস্য বিএনপি কে সরকার গঠনে সমর্থন দেয়। বস্তুত জামাতের বিএনপির প্রতি ঝোকার জন্যই আলীগ অত্যন্ত কৌশলে যুদ্ধাপরাধের ইস্যু তোলা হয় ঘাদানিক গঠনের মাধ্যমে যার নেতৃত্বে ছিল জাহানারা ইমাম। পূর্বে ১৯৮৬-১৯৯১ সময়কালে যেমন যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কোন কথা উঠেনি তেমনি জামাত ১৯৯৫ সালে বিএনপি কে পরিত্যাগ করার কারণে ১৯৯৬-২০০১ যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তৎকালীন হাসিনার সরকারের উদ্যোগ নেওয়া তো দূরে থাকুক এ বিষয়ে টু শব্দটিও করা হয় নি। ১৯৯১-৯৫ সময়ে জামাত অনেকটাই কোনঠাসা ছিল। প্রমাণ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩ টি সংসদীয় আসন লাভ। কিন্তু বিএনপি পতন আন্দোলনে সহযোগিতার পুরস্কার স্বরুপ জামাতের সাথে সাথে গোটা যুদ্ধাপরাধের বিষয়টাই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল ১৯৯৬-২০০১ সালে। এবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় ইশতেহারে আলীগ যুদ্ধাপরাধের বিচার কে অন্যতম ওয়াদা করে। কিন্তু প্রায় ৬ মাস হল এ বিষয়ে উদ্যোগ গাদাই লস্করী ভাবে চলছে। এখানে প্রচন্ড আন্তরিকতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে প্রাথমিক ভাবে জামাতী কানেকশন আবিস্কারের মরিয়া ভাবে চেষ্টা করলেও চূড়ান্ত রিপোর্টে তার দূরতমও সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে জামাত কে ফাসানোর জন্য তাদের দলীয় নেতা ব্যারিষ্টার রাজ্জাক কে সিআইডি দফতরে ডেকে হয়রাণি করা হয়। স্পষ্টতই রাজনৈতিক ভাবেই সিআইডি কে দিয়ে তা করানো হয়। তাই পিলখানার বিদ্রোহের ঘটনা এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বের কোন অজুহাত হতে পারে না। কোনমতেই না। বিশ্ব মন্দার কারণে এবং সাম্প্রতিক সৌদি আরবে হাসিনার ভ্রমণের পরে সরকার এ বিষয়ে এক ধরণের লুকোচুরি খেলছে। এতে আবারো তাদের যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আমার এই লেখার প্রেরণা হচ্ছে নিম্নের একটি আর্টিকেল। ব্লগারদের পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

********************************

জনগণের ভাবনা ও যুদ্ধাপরাধী বিতর্ক
(একাত্তর)

বদরুদ্দীন উমর

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ঘরানার লোকজন যেসব জঘন্য অপরাধ করেছিল এটা কোনো গোপন ব্যাপার ছিল না। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে এমন কোনো অপরাধ ছিল না যা এরা করেনি। এ কারণে এদের বহু নেতা-কর্মীকেই ১৬ ডিসেম্বরের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার গ্রেফতার করেছিল। বস্ট‘তপে সেই সময় সরকার তাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ এটা না করলে সরকারের জনপ্রিয়তায় সে মুহুর্তেই ভাটা পড়ত। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে খুন, জখম, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের সুনির্দিষ্ট মামলা হয়েছিল।

দেখা যাবে যে, প্রাথমিক অবস্থায় এই ধরপাকড় ও মামলা হলেও আওয়ামী বাকশালী আমলে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অপরাধের জন্য তাদের কারো শাস্তি হয়নি। যে পাকিস্তানি সেনাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে, এমন কথা সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা উচ্চকণ্ঠে বারবার বললেও শেষ পর্যন্ত তাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং ভারত সরকার তাদের ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানে পার করেছিল। এক্ষেত্রে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ তাদের বিবেচনার বিষয় ছিল না। বিবেচনার বিষয় ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের হিসাব।

বাংলাদেশ সরকার গ্রেফতার হওয়া নব্বই হাজার পাকিস্তানি সেনাসদস্যের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কিছু অফিসারকে আটক রেখে, বিচার ও শাস্তি প্রদান করে যুদ্ধাপরাধী সমস্যা সমাধান করতে পারত। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য এ ধরনের দলের নেতাদের গ্রেফতার করার পর তাদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেওয়ারও প্রয়োজন ছিল। সেটা হলে স্বাধীনতার ছত্রিশ বছর পর জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়ে ও সেই সঙ্গে সুযোগমতো নিজেদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে উপস্থিত করার উল্টো চেষ্টার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা পর্যন্ত করতে পারত না। অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিকে একটি বড় ইস্যু বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দাবিদার হিসেবে কিছু রাজনৈতিক লোকজন ও বুদ্ধিজীবী হৈচৈ করে নানারকম বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগও পেত না।

একথা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কের কিছু নেই যে, জামায়াতে ইসলামীর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী নেতাদের তাদের অপরাধের মাত্রা নির্ণয় করে ১৯৭২ সালের মধ্যেই তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। এদের শীর্ষস্থানীয় এবং উচ্চপর্যায়ের নেতাদের অনেকে যে অপরাধ ইসলামের নামে করেছিল তার জন্য মৃত্যুদন্ড থেকে নিয়ে অন্য গুরুতর দন্ড তাদের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই অবশ্যকরণীয় কর্তব্য কাজ সম্পন্ন না করে তাদের মুক্তি দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নরহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ইত্যাদি অপরাধের প্রমাণ আছে তাদের না ছেড়ে বিচার করতে হবে। কিন্তু হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া এ ধরনের অপরাধীদেরও কোনো বিচার ও শাস্তিও হয়নি। সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ছেড়ে দিয়ে তাদের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছিল দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণের। কাজেই এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানই নিজামী, মুজাহিদ প্রমুখের মতো যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী লোকদের তাদের প্রাপ্য শাস্তি না দিয়ে মুক্ত করে দেশ গড়ার কাজে যোগদানের আহ্বান জানানোর কারণেই আজ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির বিষয়টি এক জীবন্ত ইস্যু হিসেবে থেকে গেছে এবং এ নিয়ে মাঝে মধ্যে জোর বিতর্ক, আলোচনা, আন্দোলন হলেও এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, এর ফলেই এই ইস্যুকে শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন চক্র ও সরকার মাঝে মধ্যে জাগিয়ে তুলে নিজেদের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে সম হচ্ছে। এর পরিণতিতে এই গুরুতর সমস্যার কোনো সমাধান তো হচ্ছেই না, উপরন্তু জনগণের শত্রু শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন চক্র ও সরকার এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা ফায়দা হাসিল করছে।

শুধু শেখ সাহেবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই নয়, তার কন্যার প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীর এই অপরাধী নেতাদের বিচার ও শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করেনি। আওয়ামী ঘরানার যেসব বুদ্ধিজীবী মাঝে মধ্যে এই ইস্যু তুলে হৈচৈ করে থাকেন তারাও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই অপরাধীদের শাস্তির দাবি নিয়ে আদাজল খেয়ে মাঠে নামেননি। শুধু তা-ই নয়, যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে দ্বিধাবোধ করেনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর সরকার গঠনের সময়েও তারা জামায়াতে ইসলামীর সহায়তা গ্রহণ করেছিল। ২০০৬ সালের নির্বাচনে ফায়দা উঠানোর চিন্তা থেকে তারা ইসলামী ঐক্যজোটের মতো এক চরম প্রতিত্রিক্রয়াশীল দলের সঙ্গে এমন চুক্তি করেছিল যাতে ব্লাসফেমি আইন করার কথাও বলা হয়েছিল! লক্ষ্য করার বিষয় যে, আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির ইস্যুটি আওয়ামী লীগ মতায় থাকার সময় সামনে আনেন না। তারা এ ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করেন যখন অন্য দলের সরকার ক্ষমতায় থাকে।

আসলে আওয়ামী লীগ সুবিধা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে স্বার্থের গাঁটছাড়া বাঁধলেও আওয়ামী লীগ ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা এই ইস্যুকে একটা বাণিজ্যিক ব্যাপার হিসেবেও ব্যবহার করেন। এটাই কারণ, যেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা এই ইস্যু নিয়ে জোরালো বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া, লেখালেখি অথবা রাস্তার আন্দোলনে নামা থেকে বিরত থাকেন। তখন তাদের বুদ্ধিজীবী বাণিজ্যের ধরন থাকে অন্যরকম। এভাবে জামায়াতে ইসলামীর মতো তারাও নিজেদের মতো করে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার করে থাকেন। একই ইস্যুর পক্ষে ও বিপক্ষে থেকে তারা উভয়পক্ষই নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করেন। যারা আওয়ামী ঘরানার বাইরে থেকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তারা বিশেষ কোনো সরকারের পরোয়া না করেই সেটা করে থাকেন। সামরিক বাহিনী সমর্থিত বর্তমান সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবি নতুন করে আবার সামনে এসেছে এবং এ নিয়ে বক্তৃতা, বিবৃতি, লেখালেখি হচ্ছে। এ ইস্যুই এখন বাংলাদেশের রাজনীতির সব থেকে গরম ইস্যু। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও তার মতো দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার জন্যই আপাতদৃষ্টিতে এ দাবি তোলা হয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয়, আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সরকারের আমলে ২০০১ সালের নির্বাচনে এদের নির্বাচনে অংশ না নিতে দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কোনো পদক্ষেপ তো নেয়ইনি, তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও এ নিয়ে কোনো আন্দোলন বা হৈচৈ-মাতামাতি করেননি। জামায়াতে ইসলামী ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এই সরকারি সিদ্ধান্ত শিরোধার্য করে তারা তখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় এ ব্যাপারে তাদের কোনো তেজোদ্দীপ্ত ভূমিকা দেখা যায়নি। কিন্তু আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে এই দাবি নিয়ে এখন মাঠে নামতে না পারলেও, চার দেয়ালের মধ্যেই তারা বাতাস গরম করছেন।

আগেই বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর মতো সম্পূর্ণ গণবিরোধী ও ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলের অপরাধী নেতাদের তাদের প্রাপ্য শাস্তি প্রদান করে যেখানে তাদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা চিরতরে বন্ধ করা দরকার ছিল সেখানে তাদের ক্ষমা করে দিয়ে, দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে, তাদের পুনর্বাসন ও দলগতভাবে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শেখ মুজিবের যোগ্য অনুসারী এবং উত্তরসরি হিসেবে জিয়াউর রহমান জামায়াতে ইসলামীকে পুনরুজ্জীবিত করে তার পরবর্তী অসমাপ্ত কাজই সম্পন্ন করেছিলেন। আওয়ামী বাকশালী আমলে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের যে ধারা নতুনভাবে প্রবর্তিত হয়েছিল জিয়াউর রহমান তাতে ছেদ না টেনে তার বিকাশই ঘটিয়েছিলেন জামায়াতকে রাজনীতির মাঠে খেলা দেখানোর অনুমতি প্রদান করে। কাজেই এ ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের চরম প্রতিত্রিক্রয়াশীল ও গণবিরোধী পদেক্ষেপর সমালোচনা করতে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগকে এর বিরোধী হিসেবে উপস্থিত করে তাদের জয়গান করার মধ্যে অসাধুতা ও প্রতারণা ছাড়া আর কী আছে? এই অসাধুতা ও প্রতারণাকে বাকচাতুর্যপূর্ণ বক্তৃতা ও কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে লিখিত প্রবন্ধের মাধ্যমে সমর্থন করার লোকের অভাব না হলেও গণতান্ত্রিক কোনো শক্তিই একযাত্রায় এই পৃথক ফলের অনুমোদক নয়। কাজেই বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবি জোরেশোরে তোলার প্রসঙ্গে ফিরে এসে এটা অবশ্যই বলা যায়, আপাতদৃষ্টিতে হলেও এর সঙ্গে নির্বাচনের বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে অন্য ব্যাপারের।

লক্ষ্য করা দরকার, আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া ও তাদের নিষিদ্ধের ঘোষণা করার দাবি যখন আওয়ামী লীগসহ কিছু মহল থেকে তোলা হচ্ছিল সেই সময়েই জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ জোর গলায় ঘোষণা করেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল না এবং এ দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে তার অন্য সহকর্মী ও সহযোগীরাও একই আওয়াজ তোলেন। যে নিজে যুদ্ধাপরাধী, নিজেকে রার জন্যই তার বলা দরকার, দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। কিন্তু সে একথা বললেই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের সাত খুন মাফ হয় না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল না, ছিল নিছক গৃহযুদ্ধ, একথা বললেও সেই যুদ্ধের চরিত্র পরিবর্তিত হয় না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ যে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের এর থেকে বড় এবং অকাট্য প্রমাণ আর কী হতে পারে?

মুজাহিদের মতো একজন অভ্রান্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এবং বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে উপরোক্ত দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে আগুনে ঘি ঢালার মতো। এই ইস্যু এখন সব ইস্যুকে পেছনে ফেলে দিয়ে রাজনৈতিক মহলে পরিণত হয়েছে প্রধান ইস্যুতে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির এই বাগযুদ্ধ ও তর্কবিতর্ক নতুনভাবে শুরু হয়েছে এমন সময়ে যখন জনগণের চিন্তা ভাবনায় ও জীবনের প্রতি মুহুর্তে সব থেকে বড় সমস্যা দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপের মুখে জীবন রক্ষার প্রশ্ন। এই সংকটজনক মহৃল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কোনো সংগঠিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে অক্ষমতার প্রশ্ন। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত জনগণ আগামী নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো অবস্থায় নেই। একটি অনির্বাচিত সরকারের থেকে নির্বাচিত সরকার অনেক বেশি কাম্য হলেও নির্বাচনের ওপরেও জনগণের বিশেষ আস্থা নেই। আগামী নির্বাচন তাদের মৌলিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করবে বা তার পথ প্রশস্ত করবে তাদের এমন আস্থা নির্বাচনের ওপর নেই। কাজেই তাদের এ মুহহৃর্তের চিন্তা হলো, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমহৃল্য বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার অভাবজনিত হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করা।

জনগণের চিন্তাভাবনা এই জায়গা থেকে সরিয়ে এনে নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, যুদ্ধাপরাধী ইত্যাদি বিষয়ের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া এবং আটকে রাখার জন্যই সুপরিকল্পিতভাবে এসব প্রশ্নের অবতারণা এখন নতুনভাবে করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা, ধরাশায়ী ও নির্মূল করার জন্য কোনো সংগ্রাম না করে এক ধরনের মতলববাজি খেলাই বর্তমানে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলছে। সুপরিকল্পিত চক্রান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি হিসেবে প্রচারিত দল ও লোকজন এবং তাদের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এই খেলার খেলোয়াড় হিসেবেই মাঠে নেমে আকাশ-বাতাস উতলা করছে। তারা উভয়ে একই সুতোয় গাঁথা। তাদের পথ ভিন্ন, কিন্তু লক্ষ্য এক।

(সুত্রঃ দৈনিক সমকাল, ৬ই নভেম্বর ২০০৭ইং)
http://www.shamokal.com/details.php?nid=78774
***********************

সেই প্রায় দুই বছর আগে জনাব বদরুদ্দিন উমর এ বিষয়ে আলীগের মতলববাজি তুলে ধরেছিলেন। বর্তমান মহাজোট সরকারের বিগত ৬ মাসের আচরণ সেটাই নির্দেশ করে। বেশ কয়েকবার শুনেছিলাম যে মহাজোট নাকি যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে মার্কিনিদের সহায়তা নিবে। কিন্তু মহাজোট সরকার নাকি এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা চাই নি বলে জানিয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্ট ।

http://www.shamokal.com/details.php?nid=117200

তারপরেও বলতে হয় মহাজোট সরকারের আরো সাড়ে ৪ বছর মেয়াদ আছে তাই আশা করতে দোষ কি? সবচেয়ে র্দূভাগ্যের বিষয় হল যাদের পিতা, ভাই, বোন সহ সরাসরি রক্তের সম্পর্কের আত্নীয় যারা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন তাদের কে মানসিক ভাবে যন্ত্রণা দেওয়া হয়। বিগত ৩৮ বছর ধরে তারা এমনিতেই মানসিক ভাবে প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত তার উপর আলীগের এই প্রতারণা আর বড় অপরাধ। কিন্তু সেই অপরাধ বোধ কি আছে? নাকি শুধুই ক্ষমতা পাওয়ার উদগ্র বাসনা? সর্বশেষে বলতে চাই এই যুদ্ধাপরাধের বিচার ২০১১ সালের মধ্যে অবশ্যই সম্পন্ন হওয়া উচিত। কারণ এখনই যে টেন্ডারবাজি, চাদাবাজি, দখল ও লুটপাট চলছে ২০১২ সালে সেটা মহাজোট সরকারের শেষ সময়কালের তথা মেয়াদের গণণা শুরু হবে। তাই সিনিয়র লিডার সহ আলীগের সব নেতাই আখের গোছানো নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে। তখন এটাকে পরবর্তী নির্বাচনের ইস্যু বানালে এতে কাজ হবে না। কারণ আমাদের দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে দেখা গেছে যে একটানা কোন দল ১০ বছর শাসন করেনি। সেটা যদি সত্যিই হয় তো বিএনপি-জামাত জোট কোনদিনও যুদ্ধাপরাধের বিচার তো দূরে থাকুক তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কিছু থাকবে না। তাই ২০১১ সালের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার করে বিষয়টিকে চিরতরে সমাপ্ত করা হৌক। জাতি হিসেবে আমরা একটি জঘন্য গ্লানি থেকে মুক্তি পাব।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:২৮
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×