এমন অবস্থায় বাংলাদেশ আগে কখনো পড়েনি। সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা এখন আর নেই। বৃষ্টি হাম্বানতোতায় হামলে পড়ে গড়ে দিয়েছে একটা সমীকরণ। আর তা হলো তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ক্যান্ডির পাল্লেকেল্লেতে যদি বাংলাদেশ ২৮ তারিখের ম্যাচটা জিতে যায় তবে সিরিজ ড্র করার সাফল্যটা শুধু যোগ হবে। কিন্তু সেও তো কম নয়। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ মনে পড়ে যাচ্ছে বছর দুয়েক আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের হোয়াইট ওয়াশ করা সিরিজটির কথা। প্রথম ওয়ানডে জিতে দারুন উৎফুল্ল বাংলাদেশ।এরপর বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ওয়ানডে ভেসে যায়। সেখানে প্রথমে আজকের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এতে করে কি চাপে স্বাগতিকরা থাকবে? মুশফিক বলেছিলেন-না নিউজিল্যান্ড থাকবে। সিরিজে ফেরার চাপটা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। সিরিজ শেষে বাংলাদেশের সাফল্যের অনেক কিছুর জন্য সাকিবের মহিমান্বিত ক্রিকেটকে বারবার সামনে আনা হয়েছে। সেটা বড় একটা উৎস সাফল্যের সে ব্যাপারে দ্বিমত চলে না। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মনস্তত্ত্বে যে প্রচন্ড চাপ পড়েছিল তার ভূমিকাও কম নয়। এখনো পর্যন্ত অনুজ ববি শ্রীলঙ্কা থেকে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেননি। তাই এযাত্রা বাংলাদেশের মন্তব্য নিয়ে কিছু লেখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আদিসূত্রনুসারে চাপটা তো বাংলাদেশের ওপরেই থাকার কথা! সিরিজ জয়ের কথা বলে এসে প্রথম ওয়ানডেতে বোলারদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পেছনের পায়ে। তারপর এই ঝুম বৃষ্টিতে সমতা আনার ম্যাচটা ভেসে গেছে। যতটুকু খেলা হয়েছে তাতে ৫ ওভারে তেমন উন্নতির ছাপ কি চোখে পড়লো? আগের ম্যাচের তুলনায় তলোয়ারের মত দিলশানরা ঝাঁপিয়ে পড়েননি বলে হয়তো হয়নি। কিন্তু মানসিকভাবে যে বাংলাদেশের চাপটা বেড়ে যাবার কথা।
ভেন্যু হিসেবে পাল্লেকেল্লে বাংলাদেশের অপয়া ভেন্যু বললে ভুল বলা হবে না। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গিয়ে দেখেছি, দারুন আউটফিল্ড, উইকেট এবং মাঠের অবস্থানের জন্য পাল্লেকেল্লে দারুন একটা আইকন বিশেষ! মেঘ ভেসে যায় মাঠের ঠিক পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের দিকে। সেই ধেয়ে যাওয়া মেঘ যখন তখন গড়িয়ে পড়ে মাটিতে বৃষ্টি হয়ে। আবহাওয়ার হাল যা তাতে বেহাল অবস্থা পাল্লেকেল্লেতেও অনুসরিত হবার কথা। সে হিসেবে বৃষ্টির আতঙ্ক সেখানেও থাকবে। সেখানে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমতে পারে। কিন্তু কম দৈর্ঘ্যের ম্যাচে মানে টি টোয়েন্টিতে ওখানকার উইকেট পড়তে ভুল করে মুশফিক নিউজিল্যান্ডকে সাহায্য করেছেন টি টোয়েন্টিতে জিততে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুন খেলেও ক্যাচ কয়েকটা পড়ায় শেষ পর্যন্ত খুব সহজেই বিশ্ব আসরের সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে মসৃণ বিদায় বাংলাদেশের। এই পাল্লেকেল্লেতে শ্রীলঙ্কার রেকর্ডটাও খারাপ নয়। সব মিলিয়ে যে চাপটা বাংলাদেশের ওপর থাকবে সেটা সামাল দেয়া কিন্তু কঠিনই হবার কথা। হঠাৎ বৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কা যেমন এগিয়ে থেকেও এগিয়ে নেই আবার বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও খুব পিছিয়ে নেই। একটা ম্যাচ যেনো ফাইনালের আধার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! এমন তো নয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ কখনো সমতায় ফেরেনি। কিন্তু ২০০৭এর বগুড়া বা ২০০৯ এর ত্রিদেশীয় সিরিজ প্রতিদিন আসেনা। বৃষ্টিতে একটা মঞ্চ প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু সেটা পন্ড করার জন্য ইনজুরির সঙ্গে লড়তে থাকা বাংলাদেশ কতটা চাপ সামাল দিতে পারবে সেটা অনেক কৌতুহলের। সবকিছুর পরও সেই অমোঘ বাণীর শরণাপন্ন হতেই হচ্ছে। ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষেই থাকে। এখন এগারোজন বুদ্ধিমান সাহসী ক্রিকেটারকে ২৮ তারিখ বড় দরকার বাংলাদেশের।