somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য দিন দিন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আলোচনাটা বেশ অনেক দিনের নতুন নয়। সরকার কোন মতেই দ্রব্যমুল্যের রাশ টেনে ধরতে পারছে না। জনগনের অভি্যোগ জানানোর কোন জায়গা নেই, নামে গনতান্ত্রিক সরকার হলেও জবাবদিহির প্রশ্নই আসে না।
ঢাকায় পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় করে ছোট একটা ফ্লাট ভাড়া করে চারজনের সংসার চালানো বেজায় কষ্টকর! আমরা যা ভাবার শহরের মানুষদের নিয়ে ভাবি- গ্রামের মানুষদের নিয়ে ভাবার সময়ই নেই।
ভেবেছিলাম; খোদ ঢাকা শহরের যদি এমন অবস্থা হয় তবে গ্রাম বা মফস্বলের পরিস্থিতি আরো অনেক বেশী নাজুক হবার কথা। কিন্তু এবার ঈদে ও বৈশাখে আমাদ ধারনা আমুল পাল্টে গেল! আমি অদ্ভুত কিছু ঘটনার সাক্ষী হলাম। এমনটা শুধু আমি নই- আমার পাশাপাশি যাদের গ্রাম বা মফস্বলের সাথে এখনো নাড়ির বন্ধন টিকে আছে তাদের সবার অভিজ্ঞতা প্রায় একই।
বাজারে ঈদের চাঁদ রাত দুটো পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের ঢল- মশলা, মুদি, দর্জী, কাপড় আর জুতার দোকানে মানুষ গিজ গিজ করছে। ভীড় সামলাতে দোকানীরা কাহিল হয়ে গেছে। শুধু কি তাই ইলেক্ট্রনিকের দোকান, মাংসের দোকান আর মিষ্টির দোকানও খোলা তখন, ক্রেতার অভাব নেই।
আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে যেই আধা শহরে একটা গরু কেটে কসাই হত্যে দিয়ে বসে থাকত, সেখানে নাকি আজকে দশটা কসাই হাঁপিয়ে গেছে! মাংস আজ আর দাম জিজ্ঞেস করে কেউ কিনছে না। ৮৫০ টাকে কেজি তারা আজ মাংস বিক্রি করছে। এলাকার রিক্সা চালকও ভিড় ঠেলে কাড়াকাড়ি করে পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে যাচ্ছে।
ওদিকে ২৭শে রমজানে আমাদের এলাকায় আমি নিজের মত বেছে বেছে মাংশ কিনেছি ৭৫০ টাকা করে, তবুও দাম বেশি মনে হয়েছে।
ওখানে আমার এক আত্মীয় সরকারী চাকুরি করেন। সৎ মানুষ। তিনি মাংসের দাম জিজ্ঞেস করেছিলেন; কসাই একটুখানি তাঁর দিকে চেয়ে বলেছিল, দরদাম করলে আর মাংস পাইবেন না কাকা- কয় কেজি নিবেন কন?

আমি পরদিন থেকে রিন্টুর দোকানে বসে দেখেছি; পরনে মলিন লুঙ্গী, গায়ে ছেড়া পকেটের শার্ট, বহু পুরনো ময়লা গামছা কাঁধে অতি দরিদ্র বেশভুষার মানুষ আসছে 'বমি ডায়রিয়া' নিয়ে। রোগের কারন কি? এক বেলায় দেড় দুই কেজি কেজি গরুর মাংস রান্না করে খেয়েছে, তেল চর্বি সমেত ঝোলে হাত ডুবিয়ে। রিন্টু ওদের ঔষধ দিচ্ছে গাদা গাদা। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করছি, গটাগট ৫০০ একহাজার টাকার নোট বের করে দিচ্ছে সবাই। অসুখ বিসুখের মা বাপ নাই, ঔষধ খাচ্ছে সবাই মুড়ির মত। এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ একবার ট্যাবলেট একবার লিকুইড ফের পানিতে গুলিয়ে দমাদম মারছে; ঢেকুর, গ্যাস, বুকজ্বলা কমলেই ফের খেতে বসছে। কি ভীষন এক রোগে পেয়ে বসেছে এই জাতিকে।
***
হেলা বৈশাখের আগের দিনে বাজারে দেখলাম কয়েক ট্রাক তরমুজ আসল। আমি দেখে মনে মনে হাসলাম। ঢাকায় তরমুজ বয়কট চলছে; কোথাও কোথাও ২৫/৩০ টাকা কেজিও কেউ কিনছে না। কত শত পচা তরমুজ ডোবা নালা ভাগাড়ে ফেলে দিচ্ছে। উপায় না দেখে মনে হয় এখন মফস্বলে একটু সস্তাতে বেচার ধান্দা করছে। তবে এই কয় ট্রাক তরমুজ মাগনা দিলেও পুরা এলাকায় বিলোতে পারবে না আমি নিশ্চিত। পরদিন রিন্টু দেখি বিশাল দুই তরমুজ দোকানে নিয়ে হাজির।
-কি ব্যাপার খুব সস্তায় পাইলা মনে হয়।
রিন্টু হেসে কয়, সস্তা আর কই। ষাট টাকা কেজি নিল। দুইটা নিল 'এগার'শ ষাট(১১৬০)।
আমি শুনে ঢোক গিললাম।
খানিক বাদে বাজারে চক্কর দিয়ে দেখি পুরা বাজার ফকফকা - দুই চারটা পচা ধ্বচা ত্যাড়া ব্যাকা তরমুজ এদিক ওদিক গড়াগড়ি খাচ্ছে!!!
***
ঢাকায় আসার আগের দিন নদীর মাছের লোভে বাজারে একটু ঢু দিলাম।
চকচকে কাজলী (বাঁশ পাবদা বা বাঁশ পাতা) মাছ দেখে মনে হল এখুনি কাঁচা দু চারটে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। কদিন আগে একটু থেবড়ে যাওয়া কিছুটা বাসি 'কাজলী' সুপার সপ সপ্ন থেকে ১২০০ কেজি দরে কিনেছিলাম।
এখানে ভেবেছিলাম আরেকটু সস্তা হবে নিশ্চিত- তাই হয় বরাবর। তবে দাম শুনে আমি বেকুব বনে গেলাম! পাক্কা দুই হাজার। আমার এজন্মের ইতিহাসে দুইহাজার দরের ছোট মাছ দেখি নাই কখনো।
ওখান থেকে পিছলে গিয়ে পাশের মাছ বিক্রেতার ডালিতে বড় বড় 'গুলশা ট্যাংড়া' (স্থানভেদে 'গুলাইয়া' ‘গুইল্লা টেংরা’ বা ‘লাইট্ট টেংরা’ও বলে।) দেখে আর লোভ সামলানো গেল না- 'কাজলী' যখন কপালে জুটল না তবে এটাতেই সই।
-কিহে মিয়া দাম কত?
-কত্তা আপনারা নিজেগের লোক। এট্টু আগে ঠেকায় (ডাকে) কিনছি, ওই মুন্সী সাক্ষী- এরে মুন্সী ক না কত্তা রে?
এবার মুন্সী এগিয়ে এসে আধখানা সালাম দিয়ে বলল, -সার, দুই কেজির উপ্রে মাছ হবে। ও বত্রিশ্‌শো দিয়ে কিনছে। আপনি সাড়ে তিন দিয়ে দিয়েন যান।
ও বক বক করে যায় আর আমি মনে মনে ভাবি 'কত্তার গুষ্টি কিলাই- ইয়া আল্লা আমি এ কোন খানে আসলাম'!

***
ছবি স্বত্বঃ সাটারস্টক ( কারুকাজঃ লেখক স্বয়ং)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১০
৩১টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×