এক একটা সময় মনে হয় বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। সেই এগিয়ে যাওয়া শুধু যে কোন ভাবে এগিয়ে যাওয়া নয়। লাফিয়ে-লাফিয়ে। কথাটা অবশ্য ওয়ানডে এবং টি টোয়েন্টির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু ব্যাপারটা যদি হয় টেস্ট ক্রিকেট,তবে বলতে হবে এক পা এগুলে তিন পা পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
বিপিএলের কারণেই হোক বা অন্য কারণে, ওয়ানডেতে ইদানিং বাংলাদেশ খেলছে ভালো। কিন্তু ব্যাপারটা যদি হয় টেস্টে তবে সেখানে বলার মত খুব কিছু নেই। ধৈর্য্য একটা বড় গুণ। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে চৌদ্দতে পা দিয়ে ফেলা দলটির মধ্যে স্থৈর্য বলে কোন গুণ নেই। একটা বিষয় এখানে মনে করিয়ে দেয়া দরকার। টেস্ট ক্রিকেটে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ দল খেলানো শ্রীলঙ্কা এবার তাদের ঘরের মাঠে ব্যাটিং স্বর্গ গড়ে তুলেছিল। যার সুফলটা বাংলাদেশ নিজেদের পরিচিত পরিবেশে ভালোভাবে নিতে পেরেছে। কিন্তু জিম্বাবুয়ে হারারেতে তাদের আগের জায়গাতেই বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলেছে। ঘাস যতই ছাঁটা হোক, প্রথম ঘন্টায় বলের সেলাইয়ের ওপর ঘুরাঘুরির অভ্যাসটা তো পুরোটাই ঘাসের ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশ দল আসলে উইকেটই পড়তে ভুল করেছে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক তো তিন পেইসার না নিয়ে খেলার অজুহাত দিলেনই। মাত্রই শুরু করেছেন নেতৃত্ব। তাই তাকে বেশি সমালোচনায় বিদ্ধ করছি না। কিন্তু উইকেট ঠিক মত পড়ার অভ্যাসটা আসলে তার খুব ভালো নয়। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাল্লেকেলেতে দেখেছি টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে চাপটা নিজেদের ওপর বেশি চাপিয়ে দেয়ার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে মুশফিককে। এরকম উদাহরণ আরো আছে। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ হারের বৃত্তে এমনভাবে আটকে থাকলো যাতে করে ক্রিকেটের আরেক মানে ঝিঁ ঝিঁ পোকার প্রতীকি ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে! হারারেতে সুইং থাকবে, বাউন্স থাকবে ১৩ বছর টেস্ট ক্রিকেট পার করে আসার পর নতুন করে শেখার কিছু নেই। এ নিয়ে চারবার তারা এই ভেন্যুতে জিম্বাবুয়ের কাছে হারলো। টানা দু ইনিংসে ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত করতে গেলে দেখা যাবে, গল ও কলম্বোর বীররা সিমিং কন্ডিশনে পুরো শুয়ে পড়েছেন। রিয়াদ না খেলে অন্য কেউ খেললে রাতারাতি বদলে যেতো সেটি বিশ্বাস করি না। কিন্তু তাকে না খেলিয়ে মমিনুলেকে খেলানো যেতো। পরের টেস্টেও কি একই একাদশ দেখা যাবে? নিশ্চিন্তে বলে দেয়া যায় না। রুবেল বাদ পড়ছেন। যার মানে তৃতীয় পেইসার নিয়ে বাংলাদেশ খেললে, সাজেদুল ঢুকছেন বাঁ হাতি পেইসার হিসেবে। রাজীব আর যাই করুক না কেনো এই পরিবেশে তুলনামূলক ভয়ঙ্কর। এনামুল জুনিয়র অবধারিতভাবেই বাদ যাচ্ছেন। শাহরিয়ার নাফীস দলে ব্যাটসম্যান কম থাকায় আরেকটি সুযোগ পেতে পারেন। আরো অনেক কিছু হতে পারে। কিন্তু ব্যর্থতার খোলস পাল্টানো এতো সহজ হবে না। ড্র করার লক্ষ্য নিয়ে চারদিনের মধ্যে জিম্বাবুয়ে যখন টেস্ট জিতে ফেলে, তখন জয়ের চাপ নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ পরের টেস্টে নামবে সিরিজ হারের শঙ্কা নিয়ে। এটা টি টোয়েন্টি বা ওয়ানডে নয় যে কিছু একটা ঘটতে পারে। এটা টেস্ট। এখানে মানসিকভাবে শক্ত সমর্থ না হলে পারা সম্ভব নয়। শ্রীলঙ্কা থেকে বয়ে আনা মোমেন্টাম এখন উধাও। তার জায়গায় জায়গা করে নিয়েছে দলাদলা আক্ষেপ এবং হতাশা। হারারেতে ঝিঁ ঝিঁ পোকা খেদিয়ে ক্রিকেটটা খেলতে পারবে তো বাংলাদেশ? সিরিজ হারলে এটা অনেকটা নিশ্চিত যে, উইকেট পড়বে বিসিবি থেকে। অন্তত: একটি। সেটি প্রধান নির্বাচকের হলে অবাক হবার থাকবে না।