ফোনটা দুবার বাজলো। বিকেল তখন পাঁচটা। কেউ তুললো না। শেষ মূহুর্তের নোটিসে জামা-কাপড় গুছাতে লাগলে ফোন তোলার কথাও নয়। কিছুক্ষণ উল্টো ফোন আসলো। -দোয়া করেন। মাত্রই তো ইনজুরি থেকে উঠলাম। পাল্টা প্রশ্ন: দলের এই অবস্থায় তোমার পক্ষে কি করা সম্ভব? শেষ টেস্ট তো ওই হারারেতে খেলেছো দু বছর আগে! ওই প্রান্ত থেকে শফিউল ইসলাম সুহাসের উত্তর: বিপিএল, এনসিএল তো দেখবেন! ভালো করেছি। ভালো করার জন্যই যাচ্ছি। প্রথম টেস্টে আমাদের ভুলগুলো নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। আমি টেলরকে টার্গেট করে যাচ্ছি। দেখেন আমরা সিরিজটা ড্র করবো।
বিমান ধরার তাড়ার জন্য কথা আর বাড়লো না। শফিউলের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছেন জিয়াউর রহমানও। যার গায়ে সেঁটে আছে সীমিত ওভারের কার্যকর ক্রিকেটারের তকমা। কাদের জায়গায় যাচ্ছেন? পেসার রুবেল ও শাহাদাতের জায়গায়। দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি ইতোমধ্যে জানিয়েছে-দ্বিতীয় টেস্টে দুজনের খেলার সম্ভবনা ক্ষীন। তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে? ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও দুজনকে পাঠানো হয়েছে। যদিও বিজ্ঞপ্তিতে দাবী করা হয় প্রথম টেস্টে ঘাড়ের আগের ব্যথাটা ফিরে আসে রুবেলের। তো রাজীবের কি হলো? অনুশীলন ম্যাচও তো ছিল না যে চোট পাবে? কি ভয়ঙ্কর! একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের পেইস আক্রমণ গুনতে গুনতে এমন নি:শেষ? মাশরাফির তো যদ্দূর শুনা যায় ওয়ানডে বা টি টোয়েন্টি খেলতেও জিম্বাবুয়ে যাওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএলের কালসাপ একে একে থলি থেকে বেরুনো শুরু করলো এমন এক সময়, যখন টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সম্ভ্রম হুমকির মুখে বাংলাদেশ। গিয়েছে জয় করতে। এখন শুধু পরাজিতর নয়, সব হারানোর কাতারে দাঁড়ানো। দলে ইনজুরির মিছিল। তামিম নেই দ্বিতীয় টেস্টেও। তাকে তাহলে শ্রীলঙ্কার মত জিম্বাবুয়ে তো বয়ে নেয়া হলো কেনো?
কারণ তামিম-সাকিবরা এমন ক্রিকেটার যে তাদের জন্য শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। বক্তার নাম হাবিবুল বাসার। যিনি সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচকও। ক্রিস কেয়ার্নসও নিউজিল্যান্ড দলের ম্যাচ উইনার। ইনজুরির জন্য তাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হতো ব্ল্যাক ক্যাপদের এটা কখনো শুনা যায়নি। জানি না সাকিব-তামিমরা তার চেয়েও বড় ম্যাচ উইনার হয়ে গেছেন কি না! সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেবার আগে বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান নাকি উ্ষ্মা জানিয়ে নির্বাহী পর্ষদের পক্ষ থেকে একগাদা গাল-মন্দ মুঠোফোনে প্যাক করে পাঠিয়েছেন হারারেতে থাকা ম্যানেজার তানজীব আহসান সাদকে! বক্তব্য পরিষ্কার। এমন পারফরর্ম্যান্সের ব্যাখ্যা যেনো তৈরী করে আনা হয় জিম্বাবুয়ে থেকে। ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইট ওয়াশ করা হলেও এ থেকে রক্ষা মিলবে না। শুনে খুব হাসলাম। বিড়ালের গলায় কে ঘন্টা বাঁধবে? জালাল ইউনুস না কি ক্রিকেট অপারেশন্সের এনায়েত হোসেন সিরাজ? জিম্বাবুয়েতে উড়ে গিয়ে যারা প্রতিপক্ষ বাজে প্রস্তুতি ক্ষেত্র তৈরী করে এমন অজুহাতে প্রথম টেস্টের আগে কোন অনুশীলন ম্যাচ খেলেন না, তাদের ক্রিকেট ধী-শক্তি নিয়ে প্রশ্ন জাগে। বিসিবির ক্ষোভে যদি বিপিএলের আড়ালে টেস্টের বাতিঘরটা নিভে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় তবে খুশি হবো ব্যক্তি হিসেবে। একদল লোভী ক্রিকেট সংগঠক ও ক্রিকেটারের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা এই থিমটা কিন্তু বিলীন হতে চলেছে! সুতরাং সবকিছু শেষ হওয়ার আগে ঘুরে দাঁড়ানোর কোন বিকল্প নেই।