তথ্য উপাত্তের ভিড় জমেছে। নানা জায়গা থেকে নানা কথা শুনা হচ্ছে। কেউ বলছেন আশরাফুলের বিষয়টি প্রমাণিত হলে আজীবন নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সমস্যা বাঙলাদেশের আইনে এমন কোন ধারা নেই যা তাকে সেই নিষেধাজ্ঞার কবলে ফেলতে পারে। বিসিবি পারে একটা কমিশন গঠন করতে ।সেখানে অভিযোগ প্রমাণ হলে আশরাফুলকে আজীবন বা দশ বছরের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হতে পারে। আর কি কি পারে? অন্যদের ব্যাপারে কি হবে?
১. বলির পাঁঠা কি না আশরাফুল তা জানা যাবে সামনেই। তবে ফিক্সিং কলঙ্ক মুছতে বিসিবি গত রাতে যে ট্র্যাইবুন্যাল তৈরী করেছে তারা কিছু সুপারিশের কাজ এগিয়ে রাখছে। যেগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে আইন হিসেবে পরিগনিত হবে। সব মিলিয়ে জটিল এক বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে বাঙলাদেশের ক্রিকেট।
২. আশরাফুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তবে ট্র্যাইবুন্যাল শুধু একজন সাবেক অধিনায়ক বা ক্রিকেটার হিসেবেই নয়। সুপারিশ করছে একজন নাগরিক হিসেবে তার অপরাধ নির্ণয়ের। বিসিবির একটা অংশ মনে করে .যাতে করে ফৌজদারী কার্যবিধি সিদ্ধান্ত নিতে আলাদা আইনেরও প্রয়োজন পড়বে না।
ক. আশরাফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে ঘুষ গ্রহণের
খ. যা স্বাভাবিকভাবে দুর্নীতি দমন কমশিনের অংশ হয়ে যাবে
গ. তার আয়-ব্যয়ের হিসাব ও সম্পত্তির হিসাব নেয়ার একটা প্রক্রিয়া তখন শুরু করতে পারবে রাজস্ব বোর্ডও।
৩.সাবেক তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে আশরাফুলের কথিত অভিযোগের ভিত্তিতে সুজন,পাইলট বা রফিকের কি হতে পারে? একজন আইন বিশেষজ্ঞ যিনি বিসিবির সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় টিভি রাইটস নিয়ে কাজ করেছেন তিনি বলছেন-` শুধু কথিত অভিযোগের ওপর কোন রায় আদালতের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। যদি প্রমাণ সাপেক্ষে কোন ফোন কল, টেক্সট বা লেন-দেনের হিসেবে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়,তবে সে হিসেবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪. আকসু রিপোর্টের সম্ভাব্য অনেকগুলো থিম নিয়ে এখন গণমাধ্যম এগুচ্ছে। এর মধ্যে রেবের এক উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা এক লাইভ শোতে বলেছেন তারা যখন আকসুর হয়ে আশরাফুল ও রুবেলের তদন্ত কাজে সহাজয়তা করেছেন, তখন আলাপচ্ছলে তাদের বলা কথাও রেকর্ড হিসেবে লিখেছে আকসু! আশরাফুলের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের দাবী, এ তথ্য আশরাফুলকে নির্দোষ প্রমাণে সহায়তা করতে পারে।
৫. সুজন,পাইলট প্রমাণের অভাবে অভিযোগ থেকে পরিত্রাণ পেলেও রফিক সহজে পার পাচ্ছেন না। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ম্যানেজার ও রফিকের সাবেক সতীর্থ সানোয়ার হোসেন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন ম্যাচ গড়াপেটায় তার কোন সংশ্লিষ্টতা কখনোই ছিল না। যা রফিককে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই ইস্যুর বাইেরও যথেষ্ঠ বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে এটা তো ঠিক এতো প্রস্তুতি বিসিবি নিতে শুরু করায় যে কারোর পক্ষেই ভাবা সম্ভব, তাহলে সত্যিই কিছু ঘটেছে। যদিও সাধারণ ধারনায় বিসিবিও সমান অভিযুক্ত। কারণ বিপিএল তাদের সম্পত্তি। সেখানে একটা ক্রিকেটার ম্যাচ গড়াপেটায় অভিযুক্ত হয়ে গেলো, আর তারা তাকে শাস্তি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এটা কেমন কথা? বিপিএল বন্ধ করার ব্যাপারে কিন্তু বিসিবি এখনো রাজী নয়। আমিও ব্যক্তিগতভাবে একটা টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের পক্ষেই। কিন্তু দূর্নীতিগ্রস্ত কোন টুর্নামেন্ট চাই না।
আরো কিছু নাম চলে আসবে এই ফিক্সিং ধারাবাহিকতায়। রুবেল,রবিন ছাড়াও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মালিকের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবার কথা ভাবা হচ্ছে। ফ্রেঞ্চাইজি হিসেবে সেটা বিসিবি পারেও। কিন্তু একটা আশ্চর্য তথ্য।
আইপিএলে শ্রীশান্থদের ধরা পড়া এবঙ আইনের জালে তাড়াতাড়ি জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী আইপিএলের গঠনতন্ত্রের ১৩(ক) ধারা। যেখানে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিং নিয়ে কার কতটুকু ভূমিকায় কি কি হতে পারে সেটা নিয়ে বিশদ আছে। প্রথম আসরে বিপিএল তড়িঘড়ি করে হওয়ায় হয়তো সেটা তখনই সম্ভব হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় আসরেও যে গাইড লাইন বিসিবি বিপিএলের ফ্রেঞ্চাইজদের দিয়েছিল সেখানে ম্যাচ ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিং নিয়ে কোন কথা নেই! এর দায়টা কার?