নববর্ষ বা বছরের প্রথম দিনটি হলো সৌরবৎসরের প্রথম দিন, চান্দ্রবৎসরের নয়। প্রকৃতিপূজারী প্যাগান বা মুশরিক জাতি, তা হিন্দু হোক বা ইউরোপীয় হোক তারা সূর্যকে দেখেছে প্রকৃতির সবচেয়ে তেজদীপ্ত উপাদান হিসেবে। ফলশ্রুতিতে এই সৌরজগতের একমাত্র দৃশ্যমান শক্তির উৎস সূর্যই তাদের উপাস্য হয়েছে। অদৃশ্য মহান আল্লাহপাক উনাকে তারা তাদের ক্ষুদ্রবুদ্ধির দ্বারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি। এই পৃথিবীকে ঘিরে সূর্যের আবর্তনের(অসভ্য প্যাগানরা তাই ভাবত) ভিত্তিতে যে ক্যালেণ্ডার, সেটিই তারা তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের সাথে একীভূত করে নেয়। বিপরীতে ইব্রাহিমী তথা মুসলিম সম্প্রদায় কিংবা ইহুদিদের ক্যালেণ্ডার হলো চান্দ্র ক্যালেণ্ডার। খৃস্টান ধর্ম ইউরোপীয় প্যাগানদের থেকে অনেককিছুই নিয়েছে, যাদের মধ্যে সৌর ক্যালেণ্ডারও ছিল। তাই তাদের ক্ষেত্রে চান্দ্র ক্যালেণ্ডারের ব্যবহার দেখা যায় না। তবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মীয় উত্তরসূরীরা চান্দ্র ক্যালেণ্ডারের ধারক এটি স্পষ্ট। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হচ্ছেন আমাদের তথা মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পিতা।
অর্থাৎ এই নববর্ষ হলো সূর্যপূজারই একটি প্রকরণ। সৌরবৎসরের প্রথম দিনটি তারা তাদের কথিত সূর্যদেবতাকে স্বাগত জানায়। পারসিক অগ্নিউপাসকরা আগুনের পূজারী হওয়ায় আগুনের পিণ্ড সূর্যই তাদের প্রধান দেবতা, এমনকি ঋগবেদেও এমনটি উল্লেখ রয়েছে। তাই তারা সূত্রপাত করে নওরোজ উৎসবের। এই নওরোজই আজকের নববর্ষের আদিপিতা।
অর্থাৎ মুসলিম হিসেবে আমরা যেহেতু মহান ইব্রাহিমী আদর্শের ধারক, সেহেতু আমরা নববর্ষের মতো একটি অসভ্য প্যাগান উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারি না। একটি বিষয় আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, মানবসভ্যতার যত উন্মাদনা, পাগলামি, অসভ্যতা, ব্যভিচার সেগুলোর ধারক হলো প্যাগান সংস্কৃতি। কারণ প্যাগানরা নিজেদের ধর্মে ব্যভিচার, পরকীয়া, নোংরামি, বীভৎসতাকে আপন করে নিয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী, চিতায় মানুষ পোড়ানোর বীভৎসতা কিংবা চৈত্র সংক্রান্তিতে পিঠের মধ্যে বড়শি গেঁথে চড়ক পূজাও প্যাগানধর্মের অন্তর্নিহিত বিকৃত মানসিকতার নিদর্শক।
তাছাড়া এই পহেলা বৈশাখের আগের কয়েকটি দিন হলো ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এই সময়টিতে ইলিশ ধরার কারণে দেশের ইলিশসম্পদের চরম ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। এই সময়টিতে ইলিশ না ধরলে বাকি বছরটা কমদামে ইলিশ পাওয়া সম্ভব হবে, এরকমই অনেক মৎস্যবিশেষজ্ঞের মন্তব্য। ফলে নববর্ষের অনুষঙ্গগুলো বর্জন করাটা মুসলিম হিসেবে আমাদের জাতিগত দায়িত্বের মধ্যেতো পড়েই, দেশের সম্পদ রক্ষার স্বার্থেও এই নববর্ষ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আমাদের বর্জন করাটা অতীব জরুরী।