এদেশে ’৭১-এর রাজাকার জামাতী-মওদুদীর সাথে কিছু হিন্দু রাজাকারদেরও বিশেষ মিল পাওয়া যায়। এই হিন্দু রাজাকাররা কোনদিনই এদেশকে তাদের মাতৃভূমি বলে মনে করেনি এবং করে না। তারা এদেশে সম্পদ কামায় আর ওপারে অট্টালিকা করে। ব্রিটিশ আমলেও হিন্দু রাজাকার থেকে এখন হিন্দু ব্যবসায়ী এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-এর অধ্যাপক সবারই একই মনোবৃত্তি। কিছুদিন আগে ঢাবির ইতিহাস বিভাগের এক অধ্যাপক রতনলাল চক্রবর্তী কাউকে কোন কিছু না জানিয়েই হঠাৎ ভারতে চলে যায়। ঢাবির কাছে তার কিছু ঋণও ছিল। কিন্তু যথারীতি সে পগারপার।
আজকে বর্তমান সরকারের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় উঁচু পদে হিন্দুদের বসানো হয়েছে। কিন্তু তারা পলাশীর মীর জাফরের ইয়ার দোস্ত, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, উর্মিচাঁদের ন্যায় একই কায়দায় এদেশের গোপন সবকিছু ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। এমনকি বিটিআরসি’র শীর্ষ কর্মকর্তারা হিন্দু হওয়ায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তারবার্তা এখন সহজেই ওপারে পাচার হতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারি নজরদারি কম। প্রসঙ্গত এ প্রসঙ্গে পত্র-পত্রিকায় পত্রস্থ খবর খুবই কম। তার পরেও পাঠকের জ্ঞাতার্থে তা তুলে ধরা হলো-
আদমশুমারির ৪০ বছরের র-ডাটা
বিদেশে পাচারের অভিযোগ
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে সম্পন্ন হওয়া পাঁচটি আদমশুমারির মাঠপর্যায়ে সংগৃহীত অশোধিত তথ্য (র-ডাটা) বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে গোপনীয় র-ডাটা একাধিক প্রভাবশালী দেশের কাছে সরবরাহ করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অন্ধকারে রেখে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত আদমশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পরিচালক অসীম কুমার দে র-ডাটা পাচার করেছে বলে সরকারের একটি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এ পাচার থেকে প্রাপ্ত অবৈধ অর্থে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে একাধিক সম্পদ ক্রয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অসীম কুমার দে বর্তমানে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জড়িত থাকায় আরো অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছে এ ব্যাপারে গঠিত পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তদন্ত কমিটি। গত ৩১ মার্চ এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবের কাছে জমা দেয়া হয়। তবে বিষয়টি অতি সংবেদনশীল হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ঘটনাটি গোপন রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
আদমশুমারির র-ডাটায় দেশের সব পর্যায়ের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে শুমারির ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কোন ব্যক্তিকে জানানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এজন্য এ তথ্য কাউকে সরবরাহ করা যাবে না।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সম্পন্ন পাঁচটি শুমারির র-ডাটা বিদেশী কয়েকটি সংস্থার কাছে গোপনে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। র-ডাটা পাচারে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। প্রকল্প পরিচালক এ ডাটা সরবরাহের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সরকারের উচ্চপর্যায়ের ছাড়পত্র কিংবা অনুমতি নেয়নি।
জানা গেছে, আদমশুমারিতে কারিগরি সহায়তার নাম করে পশ্চিমা একটি প্রভাবশালী দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এ ঘটনার সময় বিবিএসে সম্পৃক্ত ছিল। তৎকালীন মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা ও প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেই প্রভাবশালী দেশ ভ্রমণ করে।
র-ডাটা পাচার বিষয়ে তৎকালীন মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা বলে, ‘সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদেশীরা বিবিএসে কাজ করেছে। এ সুযোগে কেউ তথ্য নিয়ে গেছে কিনা তা আমার জানা নেই।’
পরিবারের সদস্যসহ বিদেশ সফর প্রসঙ্গে সে বলে, ‘আমি একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সব পর্যায়ের অনুমতি নেয়া হয়। আর আমার পরিবারের সদস্যরা সেখানে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল নিজের খরচে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে আদমশুমারি প্রকল্পের দুর্নীতির নানা ঘটনা উল্লেখ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, অর্থ আত্মসাৎ ও আদমশুমারির তথ্য পাচার করেই আমেরিকার মেরিল্যান্ড, ভারত ও ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্ল্যাট এবং বাড়ির মালিক হয়েছেন অসীম কুমার দে। এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণও মিলেছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালককে সহযোগিতা করেছে প্রকল্পের পরামর্শক ভারতীয় নাগরিক সুবোধ কুমার। সে মূলত ইন্টিগ্রেশন কনসালট্যান্ট ফার্মের কর্মকর্তা। এছাড়া ইউএনএফপিএ’র ক্রয়-সংক্রান্ত কর্মকর্তা জওহরলাল দাশও প্রকল্প পরিচালককে সহযোগিতা করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আদমশুমারি প্রকল্পের পরিচালক অসীম কুমার দের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারতীয় নাগরিক সুবোধ কুমার। তার প্রতিষ্ঠান ইন্টিগ্রেশন সব ধরনের কেনাকাটায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। তার ও জওহরলাল দাশের মধ্যস্থতায় সব টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অসীম কুমার দের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার ও লেনদেনে সহযোগিতা করে সুবোধ কুমার। সেই অসীম কুমার দের ভারতে সম্পত্তি ক্রয়ে সহযোগিতা করেন, এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে ঢাকার লালমাটিয়া ও ধানমন্ডিতে স্ত্রী এবং সন্তানের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার।